হ্যারি পটারের সেই বিখ্যাত ‘ক্লোক অব ইনভিজিবিলিটি’র কথা মনে আছে নিশ্চয়ই! এ বার বাস্তবে এমনই এক বস্তু আবিষ্কার করলেন চীনের এক দল শিক্ষার্থী। এই কোট পরলেই হ্যারি পটারের মতো অদৃশ্য হওয়া যাবে। শুধু তাই-ই নয়, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-যুক্ত সিকিউরিটি ক্যামেরাতেও ধরা পড়বে না ‘অদৃশ্য’ ব্যক্তি।
উল্লেখ্য, নজরদারি ক্যামেরার চোখকে ফাঁকি দিতে সক্ষম এই কোটজাতীয় পোশাক আবিষ্কার করার দাবি করেছে চীনের একদল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। উহান ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ কম্পিউটার সায়েন্সের প্রফেসর ওয়াং ঝেং প্রকল্পটির তত্ত্বাবধান করছেন।
যদিও এটি একটি কোট, তবে আর পাঁচটা সাধারণ কোটের থেকে একে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা যাবে না বলে দাবি গবেষকদের। আর এটাই এর বিশেষত্ব। এমনকি এই কোট আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকেও বোকা বানাতে সক্ষম। সিকিউরিটি ক্যামেরাতেও ধরা পড়বে না এই কোট পরিহিত ‘অদৃশ্য’ ব্যক্তি।
নতুন আবিষ্কৃত এই পোশাকটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইনভিসডিফেন্স’। যা ক্যামেরার নজরকেও অনায়াসে ধোঁকা দিতে পারবে। তবে এই ধরনের অদৃশ্য হওয়ার পোশাক ব্যবহারে সরকার ছাড় দেবে কি না তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এর প্রতিবেদন বলছে, এই কোট পরলে দিনের বেলায় অনায়াসে অদৃশ্য হওয়া যাবে। আবার রাতেও ইনফ্রারেড ক্যামেরাকে বিভ্রান্ত করা যাবে।
এই পোশাকের দামও খুব একটা বেশি হবে না বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। বাংলাদেশি টাকায় এই অদৃশ্য পোশাকের দাম পড়বে সাড়ে ৭ হাজার টাকা।
গবেষকদের দাবি, এই ধরনের পোশাক যুদ্ধক্ষেত্রে অত্যন্ত উপযোগী। শত্রুপক্ষের নজর থেকে বাঁচতে এই পোশাক কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে বলে মত তাদের। যদিও, সে ক্ষেত্রে এই পোশাকের প্রযুক্তির আরও উন্নতির প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা।
প্রফেসর ওয়াং বলেছেন, ‘আজকাল, অনেক নজরদারি ডিভাইস মানবদেহ সনাক্ত করতে পারে। রাস্তায় থাকা ক্যামেরাগুলোতে পথচারী সনাক্তকরণ ফাংশন রয়েছে এবং স্মার্ট গাড়ি পথচারী, রাস্তা এবং বাধাও শনাক্ত করতে পারে। আমাদের ইনভিসডিফেন্স কোট পরলে ক্যামেরা আপনাকে ধারন করতে পারবে, তবে আপনি মানুষ কিনা তা বলতে পারবে না।’
উল্লেখ্য, ইনভিসডিফেন্স এর পৃষ্ঠে একটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা ক্যামোফ্লেজ প্যাটার্ন রয়েছে, যা মেশিন ভিশনের অ্যালগরিদমে হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং এইভাবে ক্যামেরাটিকে অন্ধ করে দেয়। ফলে ক্যামেরা এর পরিধানকারীকে মানুষ হিসাবে চিনতে পারে না। একটি নজরদারি ক্যামেরা মূলত মানবদেহকে নড়াচড়া এবং আকার থেকে সনাক্ত করে।
রাতের বেলায় ইনভিসডিফেন্স কোট একটি অস্বাভাবিক তাপমাত্রার প্যাটার্ন তৈরি করে যা ক্যামেরাকে বিভ্রান্ত করে। এই ক্যামেরা সাধারণত ইনফ্রারেড থার্মাল ইমেজিংয়ের মাধ্যমে মানবদেহকে ট্র্যাক করে।
ওই আবিষ্কারক দলে থাকা পিএইচডি ছাত্র ওয়েই হুই বলেন, ‘সবচেয়ে কঠিন অংশ হল ক্যামোফ্লেজ প্যাটার্নের ভারসাম্য। গবেষকরা মেশিনের দৃষ্টিতে হস্তক্ষেপ করার জন্য উজ্জ্বল ছবি ব্যবহার করেছিলেন এবং এটি কাজ করেছিল। তবে মানুষের চোখে তা আরও স্বচ্ছ হয়ে উঠে এবং কোট পরিধানকারীকে আরও স্পষ্ট করে দেখা যায়।’
উল্লেখ্য, ওয়েই হুই এর মূল অ্যালগরিদমটি তৈরি করেছিলেন। ওয়েই বলেছেন, তাদের গবেষক দলটি সর্বনিম্ন সুস্পষ্ট প্যাটার্ন ডিজাইন করতে অ্যালগরিদম ব্যবহার করেছে, যা কম্পিউটারের দৃষ্টিকে অক্ষম করতে পারে। এর দাম পড়বে মাত্র ৫০০ ইউয়ানেরও (৭০ মার্কিন ডলার) কম।
ওয়েই বলেন, ‘ইনভিসডিফেন্স যুদ্ধক্ষেত্রে অ্যান্টি-ড্রোন যুদ্ধ বা মানব-মেশিন সংঘর্ষেও ব্যবহার করা যেতে পারে।’
প্রসঙ্গত, গত ২৭ নভেম্বর ওই শিক্ষার্থীরা একটি সৃজনশীল কাজের প্রতিযোগিতায় তাদের উদ্ভাবনের জন্য প্রথম পুরস্কার জিতেছে। ইভেন্টটি চীনের স্নাতকোত্তর উদ্ভাবন এবং অনুশীলন প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে হুয়াওয়ে টেকনোলজিস স্পন্সর করেছে।
তাদের প্রকল্পটি AAAI-23 সম্মেলনেও উপস্থাপন করা হবে, যা ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হবে। বার্ষিকভাবে আয়োজিত AAAI হল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক একাডেমিক সম্মেলন।
এসডব্লিউএসএস/১২৪০
আপনার মতামত জানানঃ