সাধারণত পৃথিবীতে প্রবেশের পর বায়ুমণ্ডলের বাধার কারণে সূর্যের তাপ শক্তি ব্যাপক হ্রাস পায়। কিন্তু বাতাস না থাকায় পৃথিবীর কক্ষপথ পর্যন্ত পৌঁছাতে সূর্যের তাপের কোন সমস্যা হয় না। ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠে স্থাপিত একই আকৃতির একটি সোলার প্যানেল থেকে মহাশূন্যে স্থাপিত একটি সোলার প্যানেল বহুগুণ বেশি তাপ গ্রহণ করতে পারে।
আর তাই মহাকাশ থেকে সৌর প্যানেলের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ তারবিহীনভাবে পৃথিবীতে এনে ব্যবহারের কথা ভাবছেন ইউরোপীয় বিশেষজ্ঞরা। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি (ইএসইএ) এ সপ্তাহেই তিন বছরের একটি গবেষণা প্রকল্প অনুমোদন করতে পারে।
এ গবেষণায় মহাকাশে সৌর প্যানেল বসিয়ে তার কার্যকারিতা পরীক্ষার পাশাপাশি ব্যয়ের দিকটি যাচাই করা হবে।
সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে নতুন গবেষণার মূল লক্ষ্য হলো সুলভে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। এ জন্য কক্ষপথে সৌর প্যানেলযুক্ত বিশালাকৃতির স্যাটেলাইট পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ইএসএর পরিচালনা পরিষদের মঙ্গলবারই প্যারিসের সদর দপ্তরে এ গবেষণার ব্যয় বরাদ্দ অনুমোদন করা নিয়ে আলোচনার কথা।
বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা এই ধারণা নিয়ে চিন্তা করছে। তবে এটাই হবে মহাকাশভিত্তিক নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনব্যবস্থা এগিয়ে নেওয়ার প্রথম বাস্তবমুখী পরিকল্পনা।
ইএসএর মহাপরিচালক জোসেফ আশবাহার বলেন, তিনি মনে করেন, মহাকাশ থেকে উৎপাদিত সৌরশক্তি বিশ্বের ভবিষ্যতের বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে অনেকটাই সাহায্য করতে পারে।
আশবাহার বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিকে কার্বননিরপেক্ষ করতে হবে। এ জন্য দরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদ্ধতিটাই পরিবর্তন করা। বিশেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। এই প্রকল্প সফল হলে তা অনেক সমস্যার সমাধান দেবে।’
মহাকাশে রাত বা মেঘ না থাকায় সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন আরো বেশি দক্ষতার সঙ্গে করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। ৫০ বছর ধরে এই ধারণাটি চালু থাকলেও এত দিন এটি অনেক বেশি ব্যয়বহুল হবে বলেই মনে করা হতো।
তবে সাম্প্রতিককালে বেসরকারিভাবে নির্মিত পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট এবং অন্যান্য উদ্ভাবনের মাধ্যমে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। এ ছাড়া মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে বিদ্যুৎ পরিবহনের প্রযুক্তি উদ্ভাবনও অবদান রেখেছে।
‘সোলারিস’ নামের এই প্রকল্পের জন্য সদস্য দেশগুলো থেকে তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছে ইএসএ। এর মাধ্যমে এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখা হবে মহাকাশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সাশ্রয়ী হয় কি না।
মহাকাশ থেকে কোনো তার ব্যবহার না করে বিদ্যুৎ আনা হবে। গত সেপ্টেম্বরে জার্মানির একটি কম্পানি সৌরকোষ থেকে সংগৃহীত দুই কিলোওয়াট বিদ্যুৎ তার ছাড়াই ৩০ মিটার দূরত্বে পাঠিয়েছিল। তবে হাজার হাজার মাইল দূরত্ব থেকে গিগাওয়াট পরিমাণ বিদ্যুৎ পাঠানো হবে অনেক বড় কাজ।
সৌর প্যানেলসহ স্যাটেলাইটগুলোকে প্রায় ১.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ হতে হবে। আকারে তা হবে বর্তমান বিশ্বের উচ্চতম ভবনের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। আর এর নির্মাণকাজের মাত্রা হবে মহাকাশে থাকা এখনকার বৃহত্তম কাঠামো (দৈর্ঘ্য ১১০ মিটার) আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (আইএসএস) চেয়ে অনেক বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্পেস সোলার পাওয়ার ইনক্রিমেন্টাল ডেমোনস্ট্রেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এসএসপিআইডিআর)’ প্রকল্পের অধীনে মহাকাশ থেকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সৌরশক্তি আহরণের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি নির্মাণের কাজ করছে মার্কিন বিমান বাহিনীর নিজস্ব গবেষণা সংস্থা ‘এয়ার ফোর্স রিসার্চ ল্যাবরেটরি’।
গবেষণার বিষয়বস্তুর মধ্যে আছে, সোলার সেলের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা, সৌরশক্তিকে রেডিও তরঙ্গে রূপান্তর, মহাকাশযানের যন্ত্রাংশের ওপর তাপমাত্রা পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব হ্রাসের চেষ্টা এবং উৎক্ষেপণযোগ্য নকশা নির্মাণ।
গত বছরে সৌরশক্তিকে রেডিও তরঙ্গে রূপান্তর করতে ব্যবহৃত কথিত ‘স্যান্ডউইচ টাইল’ প্রযুক্তির জন্য নতুন যন্ত্রাংশের সফল পরীক্ষ-নিরীক্ষা চালিয়েছে গবেষক দল।
‘মাইক্রোওয়েভ বিম’ শুনতে উদ্বেগজনক মনে হলেও পৃথিবীতে এটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা বলছেন, মানুষ ও বন্যপ্রাণী উভয়ের জন্যই নিরাপদ এটি।
এসডব্লিউএসএস/০৭৩০
আপনার মতামত জানানঃ