আফগান নারী ও মেয়েদের উপর তালিবানের দমন-পীড়ন অব্যাহত রয়েছে। কারণ তালিবানের একজন প্রহরী ছাত্রীদের বোরকা না পরার কারণে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছে। গতকাল রোববার ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানের বাদাখশান বিশ্ববিদ্যালয়ে।
খামা প্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগান মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারের বাইরে থাকতে বাধ্য হয়েছিল। কারণ শিক্ষার্থীরা তালিবানদের পছন্দের পোশাকের নিয়ম মানেনি।
নারীদের চলাফেরা, বাক, মতপ্রকাশ, কাজের সুযোগ এবং পোশাকের স্বাধীনতার ওপর তালিবানের সীমাবদ্ধতা শুধু এখানেই শেষ নয়। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে এই দলটি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে মেয়েদের স্কুলে যেতেও বাধা দিয়েছে।
খামা প্রেস বাদাখশান বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি নকিবুল্লাহ কাজীজাদাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, সন্ত্রাসী সংগঠনের সহিংসতা এবং ছাত্রীদের প্রতি বেআইনি আচরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ছাত্রীদের অনুরোধ বাস্তবায়ন করা হবে।
আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতায় আসায় পর দেশটির নারীদের ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
নারীদের জন্য পৃথিবীতে নরক হয়ে উঠেছে আফগানিস্তান। হত্যা, নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, ধর্ষণ, চাকরির সুযোগ হারানোর পর এবার বিক্রি করা হচ্ছে দাস হিসেবে। ১৯৯৬ সাল থেকেই আফগানিস্তানের নারীদের পথচলা অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বেশি বন্ধুর। এক পা এগোলে দশ পা পিছিয়ে যেতে হয় তাদের। দেশের শাসনব্যবস্থা বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় আফগান নারীর জীবনযাত্রা। চলার পথের প্রতিবন্ধকতাও বেড়ে যায়।
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে এই দলটি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে মেয়েদের স্কুলে যেতেও বাধা দিয়েছে।
গত বছরের আগস্টে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়া তালিবান দাবি করেছিল, তারা পাল্টেছে অনেকটায়। নব্বইয়ের দশকের কট্টর অবস্থান থেকে বেশ উদার হবে এবার।
তবে গোটা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ পোক্ত করার পর নারীদের নব্বইয়ের দশকের সেই শাসনের মতোই ঘরবন্দি করে ফেলেছে তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তালিবানের আফগান দখলের পর থেকেই দেশটিতে নারীদের অবস্থান নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। অত্যাচার নিপীড়নের পাশাপাশি বাড়ি থেকে কম বয়সী নারীদের জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া এমনকি মৃতদের ধর্ষণের অভিযোগও উঠেছে তালিবানের বিরুদ্ধে। আফগানিস্তানে নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রা থমকে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। কর্মজীবী নারীদের উপর নেমে আসছে নিয়মের খড়গ।
তালিবানরা ১৫ আগস্ট ২০২১-এ আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ দখল করার পর, তারা অবিলম্বে নারী ও মেয়েদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা শুরু করে। তালিবানের ক্ষমতায় আসার প্রথম সপ্তাহ থেকেই নারীরা রাস্তায় প্রতিবাদ করতে শুরু করে। যদিও তারা তা করতে গিয়ে মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছিল।
সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে, পশ্চিম আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে নারীদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং দ্রুত একাধিক প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, তালিবানের প্রতিক্রিয়া শুরু থেকেই নৃশংস ছিল। বিক্ষোভকারীদের মারধর করা, বিক্ষোভ ব্যাহত করা এবং বিক্ষোভ কভার করা সাংবাদিকদের আটক ও নির্যাতন করা। তালিবানও অননুমোদিত বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে। সময়ের সাথে সাথে তালেলিবানের অপমানজনক প্রতিক্রিয়া বেড়ে যায়। বিশেষ করে ১৬ জানুয়ারি কাবুলে একটি বিক্ষোভের একটি নৃশংস প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে, যখন তালিবান সদস্যরা মরিচ স্প্রে এবং বৈদ্যুতিক শক ডিভাইস ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের হুমকি দেয়, ভয় দেখায় এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে আফগান সরকারের পতন এবং তালিবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে আফগানিস্তানে মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। যদিও দেশে লড়াই শেষ হয়েছে, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে নারী ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে।
এর পাশাপাশি, দেশে খাদ্যপণ্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি আফগানদের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে, খাদ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানিয়েছে খামা প্রেস।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩০৬
আপনার মতামত জানানঃ