অক্টোবর শুরু হলেই ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে তৈরি হয় এক ভৌতিক আমেজ। দোকানে-দোকানে বিক্রি হয় হ্যালোইন পালনের বিচিত্র পোশাক-মুখোশসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। অক্টোবর যত এগোতে থাকে, বাড়তে থাকে বিক্রি। মাসের শেষে শুরু হয় এই উৎসব। কেউ দলবেঁধে, কেউবা পরিবারসহ বিভিন্ন এলাকায় উৎসবে মেতে ওঠে।
শুধু ইউরোপ-আমেরিকা নয়, হ্যালোইনের ভৌতিক আমেজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এবার বাদ যায়নি রক্ষণশীল দেশ সৌদি আরবও। সেখানে বেশ ধুমধাম করেই হ্যালোউন উৎসব পালন করা হয়েছে। উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের অনেককেই বিচিত্র সব সাজে দেখা গেছে।
প্রথমবার আরব বিশ্বের কোনো দেশ হিসেবে হ্যালোইন উৎসবে মেতে উঠেছে সৌদি আরব। বেশ ধুমধাম করেই উৎসবটি পালন করা হয়েছে। উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের অনেককেই সেজেছেন বিচিত্র সব সাজে।
উপসাগরীয় দেশগুলোতে হ্যালোইন উৎসব পালন করা হয় না। তবে ব্যতিক্রম দেখা গেছে সৌদি আরবে। উল্লেখ্য, যারা ব্যতিক্রমী সাজে ওই ইভেন্টে গিয়েছিলেন, সেখানে তাদের বিনামূল্যে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল—রোমাঞ্চ আর উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি করা। সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
আরব নিউজ জানায়, বৃহস্পতি ও শুক্রবার ব্যাপী হ্যালোইন উৎসব চলে। উৎসবে বিনামূল্যে প্রবেশ করেন ব্যতিক্রমী সাজে আগতরা। উৎসবে আগতরা সৌদি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ডিজাইন করা কস্টিউম পরেন।
এ উৎসবে পরিবারসহ যোগ দিয়েছেন অনেকে। এ উৎসবের মূল উদ্দেশ্য ছিল মজা, রোমাঞ্চ ও উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা।
উৎসবে ব্যতিক্রমী সাজে সেজে আসা আব্দুল রাহমান বলেন, উৎসবটা দারুণ। আনন্দটাই মূল উদ্দেশ্য। হারাম-হালালের আলোচনা করতে গেলে আমি জানি না এটা। আমরা শুধু মজা করতে এটা উদযাপন করছি। আর কিছু না। আমরা কোনো কিছুই বিশ্বাস করি না।
খালেদ আলহারবি নামের এক দর্শনার্থী বলেন, সব কাজের একটা উদ্দেশ্য থাকে। আমি এখানে শুধু মজা করতে এসেছি।
সৌদি আরবে পরিবারসহ প্রথমবার এ আয়োজন উপভোগ প্রকাশ করতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন অনেকে। এ উৎসবে ছিল আতশবাজির আয়োজনও।
হ্যালোইন উৎসবের থিম হলো ‘হাস্যরস ও উপহাসের সাহায্যে মৃত্যুর ক্ষমতার মুখোমুখি হওয়া’। পাশ্চাত্য দেশগুলোতে এ উৎসব বেশ জনপ্রিয়।
উপসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে হ্যালোইনকে দীর্ঘদিন ধরে এড়িয়ে যাওয়া হলেও এ উৎসবে অংশ নেওয়া বিভিন্ন ব্যক্তি এটিকে সাধারণ বিনোদনের একটি রূপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। উৎসবটি আতশবাজি ও ভৌতিক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে শেষ হয়।
ভূতুড়ে এই উৎসব ২০০০ বছরেরও বেশি পুরোনো। অনেকেই ভাবেন, এ দিনটি হয়তো ভূতের মতো সাজতেই পালন করা হয়। আসলে মৃত আত্মাদের স্মরণে পালন করা হয় দিনটি। হ্যালোইন ১৭৮৫ সালে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে এর উৎপত্তি। হ্যালোইন’ বা ‘হ্যালোউইন’ শব্দটি এসেছে স্কটিশ ভাষার শব্দ ‘অল হ্যালোজ’ ইভ থেকে।
হ্যালোইন শব্দের অর্থ ‘শোধিত সন্ধ্যা বা পবিত্র সন্ধ্যা’। সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে ‘হ্যালোজ’ ইভ’ শব্দটি এক সময় ‘হ্যালোইন’এ রূপান্তরিত হয়। হ্যালোইন উৎসবের মূল থিম হলো, ‘হাস্যরস ও উপহাসের মাধ্যমে মৃত্যুর ক্ষমতার মুখমুখি হওয়া’।
পাশ্চাত্য এই সংস্কৃতির ছোঁয়া ইতিমধ্যে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও লেগেছে। আর এবার ভূত-প্রেত সেজে নৃত্য করার এই উৎসবের ছোঁয়া লেগেছে সৌদি আরবেও। রাজধানী রিয়াদে হয়ে গেল জমকালো হ্যালোইন।
এ উৎসবকে ঘিরে বিশালাকার ভাস্কর্যও তৈরি করে প্রদর্শন করা হয় রিয়াদের রাস্তায়। আর এতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশটির জনগণের বৃহৎ একটি অংশ।
হ্যালোইন উৎসব উদযাপন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভ ও তীব্র নিন্দা উগড়ে দিয়েছেন তারা। বিশেষ করে উৎসবটি উদযাপনে রিয়াদে অদ্ভুত দর্শন যে ভাস্কর্য তৈরি করা হয়, তার ছবি ও ভিডিও ফেসবুক, টুইটারে আপলোড করে সৌদি নেটিজেনদের দাবি, এমন ভাস্কর্য ইসলামের আদর্শের পরিপন্থী।
মক্কা-মদিনার দেশে এই পাশ্চাত্য সংস্কৃতি কখনই মেনে নেয়ার মতো নয় বলে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন কেউ কেউ। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই এ নিয়ে খবরও প্রকাশ করেছে।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণে রাজধানী রিয়াদে তিন মাসব্যাপী ‘রিয়াদ মৌসুম’ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সৌদি সরকার।
আর তারই অংশ হিসেবে সেখানে ৩১ অক্টোবরের হ্যালোইন উৎসবের আয়োজন করে দেশটি। রিয়াদের রাস্তায় নির্মিত হয় বিশালাকার অশুভ শক্তির প্রতীকের ভাস্কর্য। সেই ভাস্কর্যকে ঘিরেই সংগীত ও আলোকসজ্জায় মেতে ওঠেন বিদেশি নাগরিকরা।
পর্যটকদের আকর্ষণের নামে ইসলাম ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এই সংস্কৃতিকে এভাব পালনে দেশটির অনেকে অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ইসলামের জন্মভূমিতে কীভাবে এমন উৎসব পালন করা হয় এবং ইসলামের আদর্শের পরিপন্থী ভাস্কর্য তৈরি হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে এখনও সৌদি সরকারের তীব্র সমালোচনা করে যাচ্ছেন দেশটির নেটিজেনরা।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৫০
আপনার মতামত জানানঃ