ভারতের উত্তর প্রদেশে বস্তিবাসীদের প্রলোভন দেখিয়ে হিন্দু থেকে খ্রিস্টান বানানোর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় এক বিজেপি নেতার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ একটি মামলা দায়ের করেছে। খবর এনডিটিভির
স্থানীয় বিজেপি নেতা অভিযোগকারীদের একত্রিত করার পরে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ শুক্রবার মিরাটে কথিত জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার অভিযোগে একটি মামলা নথিভুক্ত করেছে। বেশিরভাগই স্থানীয় বস্তিতে বসবাসকারী কার্ট বিক্রেতাদের ধাক্কা দেয়।
জানা যায়, ৯ জনের বিরুদ্ধে লকডাউনের সময় তাদের সাহায্যের বিনিময়ে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বস্তিবাসীদের একজনের দায়ের করা পুলিশ অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা গির্জায় যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছিল এবং বস্তিবাসীদের হিন্দু দেবতার মূর্তি ধ্বংস করতে বাধ্য করেছিল।
অভিযোগকারী পুলিশকে জানিয়েছেন, কোভিড লকডাউনের সময় বস্তিবাসীরা বাইরে যেতে পারেনি এবং তাদের পরিবার নিয়ে তারা এক রকম যুদ্ধই করছিলেন। এই এলাকার বিল্ডিংয়ে যারা বসবাস করতেন তাদের জন্য অবশ্য খাবার ও অর্থের প্রস্তাব করা ভালো ছিল।
প্রাথমিক তথ্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যারা সাহায্য করেছিল তারা তাদের বলতে শুরু করেছিল যে, একমাত্র ঈশ্বর – যীশু খ্রিস্ট এবং তাদের গির্জায় যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে। যিশুর কাছে প্রার্থনা করতে বলেছিলেন। অভিযোগকারীদের হিন্দু পূজা বন্ধ করতে বলা হয়েছিল। ঈশ্বর এবং শুধুমাত্র খ্রীস্টেরর কাছে প্রার্থনা করতে বলা হয়েছিল।
অভিযোগকারীর অভিযোগ, তারা আমাদের আধার কার্ডে আমাদের নাম পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছে। আমরা যখন দিওয়ালি উদযাপন করছিলাম, তখন তারা আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করেছিল এবং হিন্দু দেবতাদের ছবি ছিঁড়েছিল। আর বলেছিল যে, আমাদের এখন খ্রিস্টের কাছে প্রার্থনা করা উচিত যে আমরা ধর্মান্তরিত হয়েছি। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে অভিযুক্তরা প্রত্যেকের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা দাবি করতে শুরু করে।
যারা সাহায্য করেছিল তারা তাদের বলতে শুরু করেছিল যে, একমাত্র ঈশ্বর – যীশু খ্রিস্ট এবং তাদের গির্জায় যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, তারা ছুরি ও রড নিয়ে আসে এবং কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
প্রতারণামূলকভাবে তাদের খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে দাবি করে অভিযোগে জোর দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যে, সকলেই “সনাতন ধর্মী (হিন্দু)” এবং পুলিশকে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বছর কয়েক আগে ভারত সরকার নির্দেশ দিয়েছিল, যেসব এনজিও বিদেশ থেকে তহবিল পেয়ে থাকে তাদের কর্মীদের মুচলেকা দিয়ে জানাতে হবে যে তারা ধর্মান্তরিত করার ঘটনায় যুক্ত নন অথবা তাদের বিরুদ্ধে ওই ধরনের কোনও মামলা হয়নি। ভারতে বিদেশি সাহায্যপ্রাপ্ত এনজিওগুলোর কার্যকলাপে সরকার নানা বিধিনিষেধ আরোপ করছে গত বেশ কয়েক বছর ধরেই।
শাসক দল বিজেপির নেতারা যুক্তি দিচ্ছেন, কার্যক্রমের আড়ালে বহু এনজিও জোর করে বা লোভ দেখিয়ে লোকজনকে ধর্মান্তরিত করছে বলেই এই মুচলেকা জরুরি – কিন্তু ভারতের বহু এনজিও-ই এই সিদ্ধান্তে প্রবলভাবে হতাশ।
বস্তুত ভারতে বিদেশি সাহায্যপ্রাপ্ত এনজিওগুলোর কার্যকলাপে ও বাইরে থেকে অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা কড়াকড়ি আরোপ শুরু হয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার সময় থেকেই।
বিজেপি তথা আরএসএসের তাত্ত্বিক নেতা ও রাজ্যসভার এমপি রাকেশ সিনহা বিবিসিকে বলছিলেন, “দেশে এমন অন্তত ১২৮টি এনজিও আছে, যারা সরকারের এফসিআরএ-কে জানিয়েছে তাদের কার্যকলাপের সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই।”
“অথচ এদের ওয়েবসাইটে গেলেই আপনি দেখবেন এরা নিজেদের কেউ খ্রিস্টান মানবতাবাদী, কেউ ক্যাথলিক বা কেউ জেসুইট দরদী বলে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে।”
ভারতে মিশনারি বা জেসুইট সংগঠনগুলো বিদেশি সাহায্যকে কাজে লাগিয়ে গরিব আদিবাসী বা দলিত সমাজকে জোর করে খ্রিস্টান বানাতে চাইছে, বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের এই অভিযোগ অনেক দিনের।
কিন্তু এখন সেটা বন্ধ করার নামে যেভাবে ঢালাওভাবে সব এনজিওর কার্যক্রমে রাশ টানার চেষ্টা হচ্ছে, তাতে ভারতে সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার এই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদাররা রীতিমতো শঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩১৯
আপনার মতামত জানানঃ