পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গত মঙ্গলবার কমপক্ষে ছয় ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ২১ জন।
এদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে অন্তত ১৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। একইসাথে ইসরায়েলি বাহিনী আগস্টে গাজায় তাদের হামলার নির্ভুলতা নিয়ে ‘অহংকার’ করেছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
ইসরায়েলের গুলিতে ৬ ফিলিস্তিনি নিহত
আল জাজিরার খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার সকাল থেকে ফিলিস্তিনি শহর নাবলুসে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এসময় পাঁচ সশস্ত্র ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। এছাড়া আরও একজন নিরস্ত্র ব্যক্তিও এই ঘটনায় নিহত হন।
ফিলিস্তিনিএর ফাতাহ মুভমেন্ট জানিয়েছে, ব্যাপক সংখ্যক ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী নাবলুসে প্রবেশ করে অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে নিহত হওয়া ফিলিস্তিনিরা হচ্ছেন, আলি খালেদ অন্তর (২৬), মিশাল বাগদাদি (২৭), ওয়াদি আল-হাওয়া (৩১), হামদি কায়িম (৩০) এবং হামদি মোহাম্মদ শারাফ (৩৫)। পরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নবি সালেহ গ্রামে এক নিরস্ত্র তরুণও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। তার বয়স ছিল ১৯ বছর।
ইসরায়েলের তরফ থেকে শুধু জানানো হয়েছে যে, তাদের বাহিনী নাবলুসে অভিযান চালাচ্ছে। তবে এর বিস্তারিত কিছু এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
ইসরায়েলের অভিযান বন্ধে দেশটির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি এই অভিযানকে ‘আগ্রাসন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা তাদেরকে আহতদের উদ্ধার করতে দিচ্ছে না।
আমরা যে তিনটি মারাত্মক হামলা পরীক্ষা করেছি, তা অবশ্যই যুদ্ধাপরাধ হিসেবে তদন্ত করা উচিত। বেআইনি হামলার শিকার সকল মানুষ ও তাদের পরিবার ন্যায়বিচার এবং ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য।’
ফিলিস্তিনি সোর্সের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা বিভিন্ন ছাদের উপরে স্নাইপার মোতায়েন করেছে। এছাড়া তারা ড্রোন ব্যবহার করে হামলা করছে। এছাড়া একটি বেসামরিক গাড়িতেও হামলা করেছে ইসরায়েলি সেনারা।
চলতি বছরে নিহত ১৬০
চলতি বছর এখন পর্যন্ত দখলকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে অন্তত ১৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গত আগস্টে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক হামলাকে ‘বেআইনি আক্রমণ’ আখ্যা দেয়।
এরপর মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) নতুন প্রতিবেদনে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
হামলার নির্ভুলতা নিয়ে ‘অহংকার’
ইসরায়েলি বাহিনী আগস্টে গাজায় তাদের হামলার নির্ভুলতা নিয়ে ‘অহংকার’ করেছে জানিয়ে প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি বলছে, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর তিনটি নির্দিষ্ট হামলার পরিস্থিতি তদন্ত করা যাবে।
অ্যামনেস্টি বলেছে, তদন্তের বিষয়গুলোর মধ্যে ইসরায়েলের হামলায় চার বছর বয়সী শিশু নিহত, মায়ের কবর পরিদর্শন করা এক কিশোর নিহত এবং মায়ের সাথে বাড়িতে চা পান করার সময় ইসরায়েলি ট্যাঙ্কের আগুনে প্রাণ হারানো একজন ছাত্র অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এছাড়াও একটি হামলা তদন্ত করা হয়েছে, যে হামলায় ৭ জন ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা যে তিনটি মারাত্মক হামলা পরীক্ষা করেছি, তা অবশ্যই যুদ্ধাপরাধ হিসেবে তদন্ত করা উচিত। বেআইনি হামলার শিকার সকল মানুষ ও তাদের পরিবার ন্যায়বিচার এবং ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য।’
তিনি বলেন, ইসরায়েলি বাহিনীর অগাস্ট মাসের আক্রমণটি ছিল গাজার নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নির্বিচার সহিংসতার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। এই অঞ্চলটি বছরের পর বছর ধরে অবৈধ অবরোধের মধ্যে ভুগছে।
অ্যামনেস্টি আরও বলছে, গাজা উপত্যকায় তিন দিনের সংঘাতের সময় যে ৪৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জাতিসংঘ বলেছে, এদের মধ্যে ৩১ জনই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক।
উল্লেখ্য, আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহের মৃত্যুর বিচারের দাবিতে গত মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে তার পরিবার।
ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক আবু আকলেহ ‘ফিলিস্তিনের কণ্ঠস্বর’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। গত ১১ মে দখলকৃত পশ্চিমের একটি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনী তাকে মাথায় গুলি করে হত্যা করে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৪৫
আপনার মতামত জানানঃ