ভারতের উত্তরপ্রদেশের বিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দসহ ৩০৭টি মাদ্রাসাকে বেআইনি ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। ওই মাদ্রাসাগুলো একাধিক সরকারি বিধি লঙ্ঘন করায় তাদের বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে যোগি প্রশাসন।খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার
মাদ্রাসাগুলোর যাবতীয় তথ্য খতিয়ে দেখার পরেই জেলা প্রশাসন রিপোর্ট দেয় সরকারকে। জেলার এক উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ভরত লাল গোন্দ বলেন, ‘সমীক্ষায় আমরা দেখেছি ৩০৬টি মাদ্রাসা বেআইনি। এছাড়াও এর মধ্যে দারুল উলুমও রয়েছে। ফলে তাদের সমস্ত সরকারি সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
ভরত আরও জানান, ‘মাদ্রাসাগুলোর কার্যক্রম, কারা তা পরিচালনা করেন এবং তাদের আয়ের উৎস খতিয়ে দেখেছে জেলা প্রশাসন, এরপরই সিদ্ধান্ত হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতেই মাদ্রাসাগুলো নিয়ে খোঁজখবর করা হয়।’
জানা গেছে, জেলা প্রশাসনে নথিবদ্ধ মাদ্রাসার সংখ্যা ৭৫৪টি। এর মধ্যে ৬৬৪টি মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণি অবধি পড়ানো হয়। ৮০টি মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। দশটি মাদ্রাসা মাধ্যমিক যোগ্যতামানের।
গত মাসে মাদ্রাসাসহ উত্তরপ্রদেশের ইসলামিক শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে সমীক্ষার নির্দেশ দেয় যোগি সরকার। তারপরই ৩০৭টি মাদ্রাসাকে বেআইনি ঘোষণা করা হল।
চলতি বছরে মাদ্রাসা-সহ রাজ্যের ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে একাধিক কড়া পদক্ষেপ করতে দেখা গেছে যোগী প্রশাসনকে। এইসঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকীকরণে জোর দিয়েছে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার। সিলেবাসে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি হিন্দি, ইংরেজি, অঙ্ক, বিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মাদ্রাসার পড়ুয়াদের অন্য স্কুলের পড়ুয়াদের সমকক্ষ করে তোলাই উদ্দেশ্য, এমনটা জানিয়েছিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। যদিও মাদ্রাসাগুলোকে অনুদান দেওয়ার বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সমীক্ষায় আমরা দেখেছি ৩০৬টি মাদ্রাসা বেআইনি। এছাড়াও এর মধ্যে দারুল উলুমও রয়েছে। ফলে তাদের সমস্ত সরকারি সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
নতুন মাদ্রাসাগুলোকে সরকারি অনুদান দেওয়া হবে না, এই প্রস্তাবে একমত হয়েছে যোগীর মন্ত্রী পরিষদ। বিগত অর্থবর্ষে মাদ্রাসাগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য ৪৭৯ কোটি টাকা বাজেট ধার্য করে যোগী সরকার। রাজ্যের ১৬ হাজার সরকারি নথিভুক্ত মাদ্রাসাকে অনুদান দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়। সোমবার যোগী সরকার সিদ্ধান্ত নিল, নতুন মাদ্রাসাগুলো সরকারি সাহায্য পাবে না।
আসামে মাদ্রাসা ভাঙা, তারপর উত্তর প্রদেশের সমীক্ষা এবং বিহারের সমীক্ষা নিয়ে আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার, আগামী নির্বাচনের আগে মাদ্রাসার পঠনপাঠন এবং জঙ্গিবাদের মতো বিষয় একটি ইস্যু হিসেবে ভারতে উঠে আসবে।
এদিকে, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ড (এআইএমপিএলবি) বিজেপিশাসিত কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলোর পক্ষ থেকে মাদ্রাসাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অনেক গুরুতর অভিযোগ করেছে বোর্ড।
মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ডের অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি সরকার মাদ্রাসার পিছনে লেগেছে। হয়রানির শিকার হচ্ছেন মাদ্রাসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। বোর্ডের প্রশ্ন- ‘কেন একই নিয়ম অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন মঠ, গুরুকুল এবং ধর্মশালাগুলোতে প্রযোজ্য নয় যা মাদ্রাসায় করা হচ্ছে?’
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) দ্বারা প্রভাবিত একটি দলের কেন্দ্রীয় সরকার এবং কিছু রাজ্য সরকার সংখ্যালঘুদের প্রতি, বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব গ্রহণ করছে।’
তিনি বলেন, ‘যখন একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত একটি দল ক্ষমতায় আসে, তাদের কাছ থেকে এটা প্রত্যাশিত যে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি নিরপেক্ষ এবং সংবিধানের আওতার মধ্যে হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে সংসদে এবং অন্যত্র আইনশৃঙ্খলার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন, কিন্তু তার দলের নেতাদেরই তা মানতে দেখা যাচ্ছে না। বিজেপিশাসিত বিভিন্ন রাজ্য সরকারের মনোভাব বিপরীত। কেউই এই বিষয়ে মনোযোগ দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।’
মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানির অভিযোগ- আসাম এবং উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকার খুব ছোটখাটো নিয়ম লঙ্ঘনের বিষয়ে মাদ্রাসাগুলোর পিছনে লেগেছে। কোনো কারণ ছাড়াই মাদ্রাসা বন্ধ করা, ভেঙে ফেলা এমনকি মাদ্রাসা ও মসজিদে কর্মরত ব্যক্তিদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এমন অনেক ঘটনা সামনে এসেছে বলেও অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি মন্তব্য করেছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৫১
আপনার মতামত জানানঃ