আগামীকাল শনিবার খুলনায় বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে চলছে দু’দিনের বাস ধর্মঘট। শুক্রবার সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ থাকার পাশাপাশি এবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে লঞ্চ চলাচলও। এর ফলে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ট্রেনের টিকিট সংকট দেখা দিয়েছে। অপরদিকে, বিআইডব্লিউটিএ’র ঘাট থেকেও কোনো লঞ্চ ছাড়া হয়নি।
উল্লেখ্য, এ কারণে খুলনায় কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারছে না। খুলনা থেকে কোনো যান ছাড়াও বন্ধ রয়েছে। খুলনা থেকে ১৮টি রুটে দুই শতাধিক বাস চলাচল করে।
তবে বাস বন্ধের কারণ হিসেবে খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়কে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে নসিমন, করিমন, মহেন্দ্র ও ইজিবাইক চলাচল করছে। ২০ অক্টোবরের মধ্যে প্রশাসন এই যানবাহনগুলো বন্ধ না করলে আগামী ২১ ও ২২ অক্টোবর খুলনার সকল রূটের বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।”
কিন্তু বিএনপি নেতাদের দাবি, ২২ অক্টোবর তাদের বিভাগীয় গণ-সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতাদের চাপে বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে ট্রেনের টিকিটে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে।
শুক্রবার ভোরবেলা থেকেই খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ড থেকে কোনো গণপরিবহন ছেড়ে যায়নি এবং প্রবেশও করেনি। অপরদিকে, বিআইডাব্লিটিএর ঘাট থেকেও কোনো লঞ্চ ছাড়া হয়নি। নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেন চালু থাকলেও সেখানে টিকিট পাচ্ছেন না যাত্রীরা।
যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে
এদিকে, বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে এসে বাস না পেয়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন যাত্রীরা। লিমন নামের এক ব্যক্তি বলেন, “আমি কুষ্টিয়ায় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। কয়েকদিন আগে ছুটি নিয়ে এসেছিলাম। এখন কুষ্টিয়ায় ফেরা খুবই দরকার। কিন্তু বাস তো চলছে না। অফিস বাস বন্ধের কথা মানতে চাইবে না। তাই ভাবছি ভেঙে ভেঙে ছোট গাড়িতে যেতে হবে।”
বিশেষ করে সমাজসেবা কার্যালয়ের ইউনিয়ন সমাজকর্মী নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসা ব্যক্তিদের ভোগান্তি ছিল সবচেয়ে বেশি। সব রুটের বাস বন্ধ থাকায় সকাল থেকে ইজিবাইক, ভ্যানে করে খুলনায় এসেছেন তারা। ছুটির দিনে যারা খুলনা বা এর আশাপাশের জেলায় বেড়াতে যেতে চেয়েছিলেন, তারাও যেতে পারেননি।
ডুমুরিয়ার চুকনগর থেকে খুলনার দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। সমাজকর্মী নিয়োগ পরীক্ষা দিতে সেখান থেকে সকাল ৬টার দিকে খুলনার উদ্দেশে বের হয়েছিলেন কমলেশ বৈরাগী। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে সমাজসেবা কার্যলয়ের সমাজকর্মী পদে আবেদন করেছিলেন। গত বছর দুবার পরীক্ষার তারিখ দিয়েও পরীক্ষা হয়নি। সর্বশেষ আজ পরীক্ষার দিন আছে। খুলনায় কোথাও থাকার জায়গা নেই। তাই পরীক্ষা দিতে বাড়ি থেকেই আসতে হয়েছে। গাড়ি না চলায় ইজিবাইক, ভ্যানে কষ্ট করে খুলনায় পৌঁছেছেন।
ঢাকা থেকে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলায় পরিবার ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে ভ্রমণে আসতে চেয়েছিলেন তানভীর আহমেদ। সুন্দরবনের একটি রিসোর্টও বুকিং করা ছিল তাঁদের। আজ সকালে ঢাকা থেকে মোংলার বাসের টিকিটও কাটা ছিল। মুঠোফোনে তানভীর আহমেদ বলেন, সকালে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে তাঁরা গিয়ে দেখেন গাড়ি চলছে না। গাড়ি যাচ্ছে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত। এরপর ভেঙে ভেঙে মোংলা পর্যন্ত যেতে হবে। সেটির দূরত্বও প্রায় ৮০ কিলোমিটার। কিন্তু পরিবারের ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে সেভাবে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই ফিরে গেছেন।
কী বলছে কর্তৃপক্ষ?
খুলনা জেলা বাস-মিনি বাস মালিক সমিতির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও খুলনা -২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান। তিনি বলেন, ‘বাস বন্ধ ঘোষণার সময়ে আমি ঢাকাতে ছিলাম। মালিক সমিতির অন্যান্য সদস্যরা আমার সাথে আলোচনা করেই ঘোষণা দিয়েছেন।’
এদিকে, বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের খুলনা অঞ্চলের সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে কিছু দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু মালিকরা তাদের দাবি মেনে না নেওয়ায় আমরা লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। ২০ অক্টোবর রাত থেকে শুরু হওয়া এই কর্মবিরতি আগামী ২২ অক্টোবর রাত পর্যন্ত বহাল থাকবে।”
লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, খুলনা থেকে ৬টি রূটে দক্ষিণের বিভিন্ন অঞ্চলে লঞ্চ চলাচল করে। লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শত শত যাত্রীকে।
লঞ্চ ঘাটে অর্ণব মন্ডল নামের এক যাত্রী বলেন, “খুলনা শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে আমার বাড়ি। গতকাল খুলনাতে এসেছিলাম, আজকে বাড়ি ফেরা দরকার। বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি বাস চলছে না, তাই ভাবলাম লঞ্চে যাব। কিন্তু এখানেও এসে দেখি লঞ্চও চলছে না।”
শুক্রবার বেলা ১০টার দিকে খুলনা রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, খুলনা থেকে পূর্বনির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী ট্রেন চলাচল করলেও, অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে সেখানে টিকিট সংকট তৈরি হয়েছে। শরিফুর রহমান নামের যাত্রী বলেন, “একই সাথে বাস-লঞ্চ বন্ধ, আবার ট্রেনেরও টিকিট নাই। তাহলে সাধারণ মানুষের কি হবে, খুলনা কি এখন অচল হয়ে থাকবে?”
খুলনায় বাস-লঞ্চ বন্ধ প্রসঙ্গে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের মিডিয়া উপ-কমিটি আহ্বায়ক এহতেশামুল হক শাওন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতার চাপে খুলনাকে অচল করে দেওয়া হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য আমাদের সমাবেশে যাতে কম লোক হয়। তবে তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হবে না। আমাদের নেতাকর্মীরা প্রয়োজনে পায়ে হেঁটে বা সাঁতার কেটে হলেও সমাবেশে আসবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৩৫
আপনার মতামত জানানঃ