সাংবাদিকতা কাজের প্রতিশোধ হিসেবে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক হত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে। ২০১৯ সালে বিশ্বে ১০ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। ২০২০ সালে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিশ্বজুড়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক। এর মধ্যে ২১জনকে তাদের কাজের কারণে হত্যা করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। গত সোমবার (২১ ডিসেম্বর) নিউইয়র্ক ভিত্তিক সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষার সংগঠন ‘সেন্টার টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট’ (সিপিজে) এই তথ্য জানায়।
এক বিবৃতিতে সিপিজে’র নির্বাহী পরিচালক জোয়েল সিমন জানিয়েছেন, এক বছরের ব্যবধানে বিশ্বে সাংবাদিক হত্যা দ্বিগুণ হয়েছে। অতীতের হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচারহীনতার সংস্কৃতি দিনকে দিন এই প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এবছর বিপজ্জনক দেশ হিসেবে ‘মেক্সিকো’র নাম ওঠে আসে। ২০২০ সালে পৃথিবীতে যত সাংবাদিক খুন হয়েছেন তার এক-তৃতীয়াংশ মেক্সিকোয়। দেশটিতে চলতি বছর ৯ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। গত ২০ বছরে এ নিয়ে সেখানে ১২০ জন খুন হলেন । এর মধ্যে গত মাসে দশ দিনের ব্যবধানে তিনজনকে গুলি করা হয়। এছাড়া আফগানিস্তান এবং সিরিয়ার সংঘর্ষপ্রবণ অঞ্চলে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। কয়েকদিন আগে আফগানিস্তানের পরিচিত সাংবাদিক রহমাতুল্লাহ নেকজাদকে তার বাড়ির সামনেই গুলি করে হত্যা করা হয়। সিরিয়ার যুদ্ধে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন তিনজন সাংবাদিক। এবং ফিলিপাইনে তিন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে ইরান ২০১৭ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করায় রুহুল উল্লাহ জাম নামে এক সাংবাদিকের ফাঁসি কার্যকর করেছে ২০২০ সালে।
নিহতদের মধ্যে দুইজন নারী সাংবাদিকও রয়েছেন। একজন মেক্সিকোর মারিয়া এলেনা, আরেকজন আফগানিস্তানের মালালাই মারিওয়ান্দ। বিশ্বজুড়েই নারী সাংবাদিকেরা নিরাপত্তাহীনতা ও কাজের পরিবেশ নিয়ে অসন্তুষ্টিতে ভুগছেন। একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে, লিঙ্গবৈষম্য থেকে শুরু করে যৌন হয়রানি—এ ধরনের বহু প্রতিবন্ধকতা পার হয়েই সাংবাদিকতা করতে হয় তাঁদের।
চলতি বছর হত্যার পাশাপাশি সাংবাদিকদের কারাবন্দি করারও ঘটনা বেড়েছে। ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কারাবন্দী রয়েছেন অন্তত ২৭৪ জন সাংবাদিক। এদের বেশিরভাগই বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সরকারের কোভিড-১৯ মহামারী নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিয়ে খবর প্রকাশ করতে গিয়ে জেলে গিয়েছেন। অন্তত দুইজন সাংবাদিক পুলিশি হেফাজতে করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান।
গবেষণায় এসেছে, ২০২০ সালে বেশিরভাগ সাংবাদিক হত্যার পেছনে রয়েছে অপরাধী গোষ্ঠিগুলো। সংকটের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি নানাবিধ জটিল ও প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে মানুষ ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। প্রযুক্তির পরিবর্তনের কারণে আরও বেশি মানুষ সাংবাদিকতা চর্চার সুযোগ পেয়েছে। আর এ কারণেই রাজনৈতিক ও অপরাধী গোষ্ঠীগুলো সাংবাদিকদের ব্যবহারযোগ্য করতে পেরেছে। এক সময়ে এসব গোষ্ঠী নিজেদের বার্তা ছড়াতে সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করেছে।
এসডব্লিউ/কেএইচ/১৭০৫
আপনার মতামত জানানঃ