ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিহত বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদের স্মরণসভায় ছাত্রলীগের হামলা ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারামারির পর ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের নামে দুটি মামলা করেছেন ছাত্রলীগের দুই নেতা।
দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ শনিবার (০৮ অক্টোবর) সকালে ছাত্র অধিকার পরিষদের আটক নেতা-কর্মীদের আদালতে পাঠিয়েছে শাহবাগ থানা-পুলিশ।
শুক্রবার বিকালে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে হামলার ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদ’-এর ব্যানারে আবরার ফাহাদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই স্মরণসভার আয়োজন করে। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ সভায় হামলা করলে ছাত্র অধিকার পরিষদের অন্তত ১০ জন আহত হয়। তারাও ইট পাটকেল ছোড়ে। পরে আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও দ্বিতীয় দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এরপর হাসপাতাল থেকে ২০ জনকে আটক করে পুলিশে দেয় ছাত্রলীগ।
মামলার বাদী নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা টিএসসিতে প্রোগ্রামে যাচ্ছিলাম। তারা (ছাত্র অধিকার পরিষদ) কিছু স্কুলের শিক্ষার্থী, বহিরাগতদের নিয়ে আবরার হত্যার বিচার চেয়ে প্রোগ্রাম করছে। এখানে তারা সরকারকে, ছাত্রলীগকে গালিগালাজ করছে। এ সময় আমরা তাদেরকে বলি আবরার তো আমাদের ছাত্র নয়। এখানে প্রক্টরিয়াল টিম আসে, তারা জানায় এ প্রোগ্রামের অনুমোদন নেই। তারা প্রক্টরিয়াল টিম এবং আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার শুরু করে। একপর্যায়ে তাদের কিছু লোক ইট ছুঁড়লে আমার মাথায় এসে পড়ে। আমাদের আরও কয়েকজন আহত হয়। পরে আরও কিছু শিক্ষার্থী তাদের ধাওয়া দিয়ে বিতাড়িত করে। আমরা শাহবাগ থানায় মামলা করেছি।’
আহত নেতাকর্মীদের ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর সেখানেও ছাত্রলীগ হামলা করে। মারধরের পর পুলিশ সদস্যরা হামলাকারীদের বদলে ছাত্র অধিকার পরিষদের আক্রান্ত নেতাকর্মীদেরই আটক করে নিয়ে যায়।’
অন্যদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে পরিষদের নেতাকর্মীরা রাজু ভাস্কর্যে স্মরণসভা শুরু করলে ছাত্রলীগের একদল নেতা রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে বাধা দেন। সাড়ে ৩টার দিকে আবরারের স্মরণসভার বক্তব্য শুরু হলে লাঠিসোঁটা, লোহার পাইপ হাতে আশপাশ থেকে রাজু ভাস্কর্যে যান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের একটি অংশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের পেটাতে থাকে, আরেকটি অংশ স্মরণসভার চেয়ার ভাঙচুর করে। স্মরণসভার ব্যানার-ফেস্টুনে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও ছাত্রলীগ হামলা চালায়। এরপর ২০ জনকে আটক করে পুলিশে দেয় ছাত্রলীগ।
শাহবাগ থানার একজন উপপরিদর্শক জাতীয় এক দৈনিককে বলেন, গতকাল শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারামারির ঘটনায় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন ও আমিনুর রহমান ছাত্র অধিকার পরিষদের ২৫ নেতা-কর্মী ও অজ্ঞাতনামা ১৪০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে শাহবাগ থানায় দুটি পৃথক মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ১৪ ও ১৫ (৭ অক্টোবর)।
আসামিদের মধ্যে একজনকে ‘পলাতক’ দেখানো হয়েছে, বাকি ২৪ জনকে আজ সকাল ৯টা ২০ মিনিটে সিএমএম আদালতে পাঠানো হয়েছে। দুটি মামলার আসামি একই।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবা চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। তা আমলে নিয়ে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ২০ শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। তাঁরা সবাই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে তিনজন পলাতক।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, আহত নেতাকর্মীদের ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর সেখানেও ছাত্রলীগ হামলা করে। মারধরের পর পুলিশ সদস্যরা হামলাকারীদের বদলে ছাত্র অধিকার পরিষদের আক্রান্ত নেতাকর্মীদেরই আটক করে নিয়ে যায়।’
তারা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে একটি গণতান্ত্রিক কর্মসুচিতে এই ধরনের সন্ত্রাসী হামলা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। এই হামলায় এখন পর্যন্ত অনেক আহত হওয়ার কথা সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। ছাত্রলীগ এই হামলার ভেতর দিয়ে আবার প্রমাণ করল তারা সন্ত্রাসী সংগঠন। বিভিন্ন অজুহাতে তারা ভিন্ন মত ও সংগঠনের কর্মসুচিতে হামলা করে গায়ের জোরে দমন করার জন্য। আর প্রতিবারই তাদের সহযোগী হিসাবে পাশে থাকে পুলিশ বাহিনী।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৪৫
আপনার মতামত জানানঃ