কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ দিনদিন বেড়েছে। মানুষের এমন আগ্রহ ও নির্ভরশীলতার সুযোগ নিয়ে একদিকে যেমন বাড়ছে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান, অন্যদিকে সার্ভিস চার্জ নির্ধারণেও নেই কোন সীমারেখা। রাজধানীসহ সারাদেশে বর্তমানে পণ্য পরিবহন কাজে জড়িত এ সকল কুরিয়ার সার্ভিসের বিরুদ্ধে মানুষের প্রয়োজন ও আস্থাকে পুঁজি করে অতিরিক্ত চার্জ আদায়সহ স্বেচ্ছাচারিতার বিবিধ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মালামাল অনুযায়ী অধিক ভাড়া, ঠিকমতো ডেলিভারি না হওয়া, মালপত্র হারিয়ে যাওয়া, মাদক পাচার সহ বিস্তর অভিযোগ দেশের অসংখ্য কুরিয়ার সার্ভিস কম্পানির উপর। আর এতে ঝুঁকিতে পড়েছে কুরিয়ার সার্ভিসকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অনলাইন ভিত্তিক ক্ষুদে উদ্যোক্তারা।
রাস্তায় যানজট, হুড়াহুড়ি, দৈনন্দিন ব্যস্ত জীবনে শপিংমলে গিয়ে কেনাকাটার পরিবর্তে এখন অনেকেই তার প্রয়োজনীয় পণ্য অনলাইনে সংগ্রহ করতে সাচ্ছন্দ বোধ করেন। ফলে স্মার্ট ক্রেতাদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইন শপিং। আর এই অনলাইনে কেনা পণ্য কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যেমে ক্রেতাকে পৌঁছে দেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু কুরিয়ার সার্ভিসের এই লাগামহীন অরাজকতা, অনিয়মে অনলাইন ভিত্তিক সকল ক্ষুদে উদ্যোক্তারা বেকায়াদায়।
অভিযোগকারীদের দাবী, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানগুলো সেবার নামে প্রকাশ্যে এমন অরাজকতা করে গেলেও নেই কোন জোরালো প্রতিবাদ বা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ। প্রশাসনের নিয়মতান্ত্রিক মনিটরিং ও সুষ্ঠু নজরদারি না থাকায় খেয়ালখুশিমতো গ্রাহক হয়রানি করে চলেছে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো।
সম্প্রতি এসএ পরিবহন, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস, ইউএসবি, সিল্ক সিটিসহ রাজধানীর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিসের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের এমন বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া যায়। কুরিয়ার ও পার্সেল সার্ভিসের বিরুদ্ধে বুকিং দেয়া মালামাল প্রাপকের কাছে পৌঁছার আগেই প্যাকেট খুলে পন্য চুরি যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি গ্রাহকের বরাবরে পাঠানো চা পাতার বস্তার সেলাই কেটে চা পাতা চুরি হয়। এনিয়ে অভিযোগ করা হলেও প্রতিষ্ঠান থেকে কোন সুরহা মেলেনি।
রুহুল আমিন নামে এক চাকুরিজীবীর অভিযোগ, ১৫ টাকার ডকুমেন্ট চার্জ ১শ’ টাকা আদায় করছে। দেড় কেজি চা পাতা ঢাকায় পাঠাতে কার্টুন প্রতারণার নামে দেড়শ’ টাকা নিচ্ছে বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
শ্রীমঙ্গল পৌরসভায় কর্মরত নারী উদ্যোক্তা শিউলী আক্তার জানান, অনলাইনের অর্ডার নিয়ে শ্রীমঙ্গল থেকে চা, মণিপুরী শাড়ি সুন্দরবন কুরিয়ারে আমরা পাঠিয়ে দেই। সেই পণ্য গ্রাহক হাতে পেয়ে প্যাকেট কাটা ও ভিতরে পণ্য কম বা অন্য পণ্য দেয়ার অভিযোগ করছেন প্রাপক। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসার সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আশিকুল ইসলাম নামে আরেক ভদ্রলোকের অভিযোগ, সম্প্রতি তিনি ঢাকা হতে সুন্দরবন কুরিয়ারের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় মাস্ক পাঠান, কিন্তু দেখা যায় তাকে মাত্র ৫ পিস মাস্ক পাঠাতেও ১২০ টাকা কুরিয়ার চার্জ গুনতে হয়, অথচ ৫ পিস মাস্কের দাম বড়জোর ৩৫০ টাকা।
প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দেয়া অর্ডারের পণ্য ক্রেতাদের ডেলিভারি দিতে বিভিন্ন কুরিয়ারের সেবা নেন অতিকুর রহমান নামে এক উদ্যোক্তা।তিনি জানান, ‘শুধুমাত্র আমার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিনে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ টি পণ্য কুরিয়ার করি। এমন হাজার হাজার অনলাইন শপ আছে যারা প্রতিদিন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তাদের পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেন। তবে সব কুরিয়ার সার্ভিসের ‘কন্ডিশন’ পদ্ধতি নেই, থাকলে আমাদের মত উদ্যোক্তাদের সুবিধা হতো।’
আপনার মতামত জানানঃ