ভারতরে একাধিক রাজ্যে একযোগে নিষিদ্ধ ইসলামি সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার (পিএফআই) বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার বড় ধরনের অভিযান চালায় ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। অন্ধ্র প্রদেশ, তেলঙ্গানা, উত্তর প্রদেশ, কেরালা, কর্নাটক, তামিলনাড়ু সহ ১০টি রাজ্যে তল্লাশি চালিয়ে শতাধিক পিএফআই-র সদস্য ও তাদের সঙ্গে জড়িতদের আটক করে দেশটির দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ ও ইডি।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত এটাই সবথেকে বড় তদন্ত অভিযান। যেখানে অংশ নিয়েছেন প্রায় দুই শতাধিক এনআইএ অফিসার, সঙ্গে রয়েছেন ইডি কর্মকর্তারাও। পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে যুক্ত, এমন ব্যক্তিদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অভিযুক্তরা সন্ত্রাসমূলক (জঙ্গি) কার্যকলাপে আর্থিক সাহায্য, সন্ত্রাসবাদীদের জন্য ট্রেনিং ক্যাম্পের আয়োজন করা এবং সাধারণ মানুষদের এই নিষিদ্ধ সংগঠনে যোগদানে উৎসাহী করার মতো কাজে যুক্ত ছিল।
কেন্দ্রীয় সরকারের চোখে পিএফআই এমন এক সংগঠন যাদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদীদের যোগ রয়েছে। এই তল্লাশি অভিযানে এনআইএর সঙ্গে যোগ দিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটও (ইডি)। তাদের সাহায্যে রয়েছে বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ বাহিনী। সংবাদ সংস্থাগুলো এই খবর দিয়ে জানিয়েছে, পিএফআইয়ের শীর্ষ কর্তাসহ শতাধিক নেতাকে আটক করা হয়েছে।
সরকারি সূত্রের অভিযোগ, পিএফআই নিয়মিতভাবে সন্ত্রাসবাদীদের অর্থ সাহায্য করে চলেছে। সেই অভিযোগেই এই তল্লাশি অভিযান। এমন একটা সময় এই তল্লাশি যখন সুপ্রিম কোর্টে হিজাব মামলার শুনানি চলছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বিজেপিশাসিত রাজ্যের অভিযোগ, হিজাব বিতর্কে ‘ইন্ধন’ জোগাতে পিএফআই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে।
অভিযুক্তরা সন্ত্রাসমূলক (জঙ্গি) কার্যকলাপে আর্থিক সাহায্য, সন্ত্রাসবাদীদের জন্য ট্রেনিং ক্যাম্পের আয়োজন করা এবং সাধারণ মানুষদের এই নিষিদ্ধ সংগঠনে যোগদানে উৎসাহী করার মতো কাজে যুক্ত ছিল।
মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরেই এই সংগঠনের ওপর নজর রাখা হয়েছে। পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন ইসলামি রাষ্ট্র, বিশেষ করে কাতার, সৌদি আরব, কুয়েত ও তুরস্ক থেকে এই সংগঠন বেআইনিভাবে অর্থ সাহায্য পায় বলে অভিযোগ। সেই অর্থ সন্ত্রাসবাদী কাজ ছাড়াও যুব সম্প্রদায়ের ইসলামিকরণে খরচ করা হয়। অভিযোগ, পিএফআইয়ের সঙ্গে মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো সংগঠনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।
ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফ্রন্ট নামে সংগঠনটি ২০০৬ সালে নাম পাল্টে পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া নাম ধারণ করে। এদের সঙ্গে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সরাসরি যোগ রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশসহ ১০টি রাজ্যে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে পপুলার ফ্রন্টের ১০০ জন কর্মীকে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা গ্রেপ্তার করেছে বলে জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিষিদ্ধ ইসলামি সংগঠন স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া বা ‘সিমি’র কর্তারাই পিএফআইয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন। তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুর, কুদ্দালোর, রামনাড, দিনদুগালে এই নেতাদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশি চলে আসামের গায়াহাটি ও হাতিগাঁওয়েও। সেখানে সংগঠনের ৯ জন নেতাকে আটক করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার অন্ধ্র প্রদেশ ও তেলেঙ্গানায় ৩৮টি জায়গায় এনআইএ তল্লাশি চালিয়েছিল। বেআইনি কাজ নিরোধ আইনে (ইউএপিএ) গ্রেপ্তার করা হয়েছিল পিএফআইয়ের চার নেতাকে।
এদিকে, এনআইএ অভিযানের বিরুদ্ধে পথে নেমে প্রতিবাদ দেখাচ্ছে পপুলার ফ্রন্ট। এক বিবৃতিতে সংগঠনটির অভিযোগ, তাদের অযথা হেনস্তা করা হচ্ছে। প্রতিবাদী স্বর থামিয়ে দিতে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করছে সরকার। কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই।
তবে, পিএফআইয়ের এই দাবি ঠিক ততটা জোরাল নয় বলেই মত বিশ্লেষকদের। কারণ, এর আগে ভারতের একাধিক প্রান্তে সাম্প্রদায়িক হিংসায় অভিযুক্ত এই সংগঠনটি। জিহাদিদের আর্থিক মদদ দেওয়া এবং ধর্মান্তকরণের বহু অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৪১
আপনার মতামত জানানঃ