জার্মানির বার্লিন রাজ্য তার মুসলিম সম্প্রদায় নিয়ে সমস্যায় রয়েছে বলে চলতি মাসের শুরুতে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দেশটির একটি সরকারি বিশেষজ্ঞ কমিশন।
২০২০ সালে জার্মানির হানাউ শহরে একজন উগ্র ডানপন্থী দুটি সিসা বারে হামলা চালিয়েছিলেন। এতে নয় জন প্রাণ হারান। পরে হামলাকারী তার মাকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেন। ওই দুই বারে সাধারণত তুর্কি ও কুর্দিরা যাতায়াত করতেন।
হানাউয়ের ঘটনার পর বার্লিন রাজ্যের সেনেট মুসলমানদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন, তা জানতে একটি কমিশন গঠন করে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও গবেষকদের নিয়ে কমিশনটি গঠন করা হয়। সরকারি হিসেব না থাকলেও বার্লিনের ৩৮ লাখ বাসিন্দার প্রায় ১০ শতাংশ মুসলিম বলে মনে করা হয়।
ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কমিশন তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তারা বলছে- বার্লিনের মুসলিমরা বর্ণবাদ ও বৈষম্যের শিকার হন, চাকরিতে নিয়োগসহ বিভিন্ন সেবা পেতে সমস্যায় পড়েন। এ ছাড়া সচেতনতার অভাবে মুসলিমবিরোধী আচরণ ও অপরাধগুলোর খবর ঠিকমতো প্রচার পায় না বলেও কমিশন মনে করছে।
এদিকে কমিশন তাদের প্রতিবেদনে কিছু পরামর্শও দিয়েছে। যেমন : মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যের বিষয়টি যেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিচারক, পুলিশরা আরও ভালভাবে বুঝতে পারেন সেজন্য তাদের প্রশিক্ষণ দিতে বলা হয়েছে।
বার্লিনের মুসলিমরা বর্ণবাদ ও বৈষম্যের শিকার হন, চাকরিতে নিয়োগসহ বিভিন্ন সেবা পেতে সমস্যায় পড়েন।
গণমাধ্যমে মুসলমানদের আরও যথাযথভাবে তুলে ধরতে হবে যেন সাধারণ মানুষের মনে তাদের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা না থাকে। মুসলিমবিরোধী বর্ণবাদ তদন্ত করতে বার্লিন রাজ্য পুলিশে আলাদা বিভাগ চালু করতে হবে।
সর্বশেষ পরামর্শ হলো ২০০৫ সালে বার্লিনে চালু হওয়া ‘নিরপেক্ষতা আইন’ বাতিল করতে হবে। এই আইনের কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ধর্মীয় বা মতাদর্শিক প্রতীক বহন করে এমন কোনো পোশাক পরতে পারেন না। এই আইনের কারণে মুসলিম নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
শুধু হেডস্কার্ফ পরার কারণে বেশি যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তাদের চাকরি না দেয়ার উদাহরণ রয়েছে। যদিও ২০১৫ সালে জার্মানির সাংবিধানিক আদালত হেডস্কার্ফের উপর নিষেধাজ্ঞা সংবিধানের পরিপন্থী বলে রায় দিয়েছে। ২০২০ সালে ফেডারেল লেবার কোর্টও একই মত দিয়েছে।
মানবতাবাদী শান্তিপূর্ণ জোট হিসেবে পৃথিবীতে সুনাম রয়েছে ২৭টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের।
মানুষের বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, আইনের সঠিক প্রয়োগ, নিয়ন্ত্রনমুক্ত বিচারব্যবস্থা, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ও ধর্মনিরপেক্ষতাসহ নানা কারণে পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্রের জনগণের কাছে প্রশংসিত ১৯৫৭ সালে গঠিত এই মহাজোটটি।
প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ‘রোম চুক্তি’ নামে একে অবহিত করা হতো। এই জোট গঠনের সময় প্রধান লক্ষ্য ছিল পুরো ইউরোপ থেকে যুদ্ধ বন্ধ করা ও পরস্পর ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি করা।
তাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য কার্যকর করার পুরস্কার স্বরূপ ২০১২ সালে নোবেল কমিটি শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখায় ইউরোপীয় ইউনিয়নকে শান্তিতে নোবেল দিয়েছিলেন।
নোবেল কমিটি সংস্থাটি নিয়ে মন্তব্য করে বলেছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উন্মাদনা ও মরণ খেলার পর ইউরোপ নতুন করে গড়ে উঠেছে। বর্তমানে ইউরোপে সর্বোচ্চ শান্তি বিরাজ করছে।
২০১২ সালের সেই কনফারেন্সে নোবেল কমিটি আরো বলেছিলেন, ইউরোপে এখন যুদ্ধের কথা চিন্তাই করা যায় না। ঐতিহাসিক শত্রুতা ভুলে দেশগুলো একে অপরের সহযোগী পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থা অর্জনের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে উঠেছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি ইউরোপের হাওয়া বদলাতে শুরু করেছে। ছড়িয়ে পড়েছে ধর্মবিদ্বেষ, বর্ণবিদ্বেষ ও ঘৃণার বিষ। ধীরে ধীরে ইউরোপের ডানপন্থী ও ইসলামবিদ্বেষীরা উগ্র ও হিংস্র হয়ে উঠছে। যা ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর পাতায় পাতায় দৃশ্যমান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬১০
আপনার মতামত জানানঃ