আগামী জুন মাস পর্যন্ত দেশে সাড়ে চার কোটি মানুষ করোনার টিকা পাবে। প্রথম দফায় আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ভারত থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা আনার ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছে বাংলাদেশ। এগুলোতে দেড় কোটি মানুষকে করোনা টিকার আওতায় আনা যাবে বলে জানিয়েছে সরকার। সবাইকে বিনা মূল্যে দুই ডোজ করে এই টিকা দেবে সরকার। আর মে-জুনের মধ্যে কোভ্যাক্সের আওতায় আরো ছয় কোটি ডোজ টিকা পাওয়া যাবে।অর্থাৎ জুনের মধ্যে মোট ৯ কোটি ডোজ টিকা আসবে, যা ২০ শতাংশ মানুষ অর্থাৎ দুই দফায় প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে একথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বরাত দিয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, সাড়ে চার কোটি মানুষের প্রত্যেককে দুই ডোজ করে হিসেবে ৯ কোটি ভ্যাকসিন আসবে, যা দিয়ে দেশের জনগোষ্ঠীর ২০ শতাংশের ভ্যাকসিনের চাহিদা মিটবে।
তিনি বললেন, আরও ছয় কোটি ভ্যাকসিন কোভেক্সের মাধ্যমে মে-জুন মাসের মধ্যে আসবে। প্রথম দফায় যে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আসার কথা তার মধ্যে দেড়কোটি ডোজ আসছে। দু‘টি ডোজ ভ্যাকসিন মিলে একটি টিকা হবে। আশা করি মে-জুনের মধ্যে আরও ছয় কোটি ডোজ আসবে। এক মাস আগে-পরে হতে পারে। ’
এসব ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, যা দেশের জেলা পর্যায়ে বিদ্যমান সংরক্ষণ সক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিকাদান কর্মসূচি ‘এক্সপান্ডেড প্রোগ্রাম অন ইমিউনাইজেশন’র (ইপিআই) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এসএম আলমগীর বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ে দেশে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকার ৫০ লাখ ভ্যাকসিন (২৫ লাখ মানুষকে দেয়া যাবে) পাচ্ছি, এই ভ্যাকসিন ২ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাবে।’
কিন্তু ‘ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্না’র ভ্যাকসিন সংরক্ষণের ক্যাপাসিটি (সক্ষমতা) এই মুহূর্তে দেশে নেই- জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগ সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে, একই সঙ্গে ফাইজার-মডার্নার ভ্যাকসিন আনারও চেষ্টা করছে, এগুলো মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস দিয়ে শুরু। এই দুটি ভ্যাকসিনের প্রস্তুতকারকরা সংরক্ষণ সক্ষমতা নিচে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।’
ইউনিসেফের ‘কোল্ড চেইন’ (টিকা সংরক্ষণ) বিশেষজ্ঞ হামিদুল ইসলাম ২০ ডিসেম্বর এক ভার্চুয়াল আলোচনায় জানান, ‘দেশব্যাপী ইপিআই’র ৬৯২টি টিকা সংরক্ষণাগার রয়েছে। ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য এগুলোই যথেষ্ঠ। এ কারণে সরকারের ধীরস্থীর এবং ভালোভাবে ভ্যাকসিন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া উচিত। তবে আমরা যদি একসঙ্গে বেশি বেশি করে বিভিন্ন কোম্পানির ভ্যাকসিন আমদানি করি সেক্ষেত্রে সংরক্ষণ কার্যক্রম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য যেসব জিনিস ব্যবহার করা হবে সেগুলো কীভাবে ডিসপোজাল করা হবে সেই ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে টিকা দেওয়া যায় কিনা, তা নিয়েও আলোচনা করছেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ইপিআই এর যে ব্যাপক কার্যক্রম আছে, সেটিকে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন, বিভিন্ন হাসপাতালগুলো ব্যবহার করতে চাচ্ছেন, প্রাইভেট সেক্টরকে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন।
টিকা নিতে জাতীয় পরিচয় পোটড় লাগবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘টিকা দিতে এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) লাগবে। প্রত্যেকের এনআইডি কার্ডের সঙ্গে তথ্য হালনাগাদ রাখতে হবে। কেউ যদি নিজে অ্যাপসের মাধ্যমে টিকা গ্রহণে অসুবিধা মনে করেন বা না পারেন, তবে সেক্ষেত্রে অন্য কারো কিংবা সরকারের নির্দিষ্ট কর্মীরা তাদের সহায়তা করবেন।’
জাতীয় স্বাস্থ্য আন্দোলনের সভাপতি এবং মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহবুব বলেছেন, করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে এক ধরনের নৈরাজ্য, বাণিজ্য, হয়রানি ও দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরপরও বিষয়টি শুধু সরকারের হাতে আটকে রাখা ঠিক হবে না। এটি উন্মুক্ত করে দিলে সরকারের ওপর বিত্তবান শ্রেণীর আগ্রহী মানুষের চাপ কমবে। বিত্তবানরা তখন গরিবের ভ্যাকসিনে ভাগ বসাতে আসবে না। তবে নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই সরকারের হাতে রাখতে হবে।
এসডব্লিউ/কেএইচ/০৯১০
আপনার মতামত জানানঃ