বিশ্বজুড়ে মহামারি ডেকে আনা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের সফল আবিষ্কারক এক দম্পতি এবার প্রাণঘাতী আরেক ব্যাধি ক্যানসারের টিকা নিয়ে আশার বাণী শুনালেন।
তারা বলেছেন, আগামী এক দশকের মধ্যেই ক্যানসারের ভ্যাকসিন রোগীদের জন্য সহজলভ্য হতে পারে।
জার্মান বিজ্ঞানী দম্পতি অধ্যাপক উগুর সাহিন ও ওজলেম তুরেসি বলেছেন, ক্যানসারের ভ্যাকসিন খুঁজে পেতে পারেন বলে বলতে দ্বিধাবোধ করলেও তারা ‘যুগান্তকরী’ আবিষ্কারের পথে রয়েছেন। আর এটি নিয়ে তারা কাজ চালিয়ে যাবেন।
তারা বলেছেন, মহামারিতে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা ফাইজার-বায়োএনটেকের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আবিষ্কার এবং সাফল্যই ‘আমাদের ক্যানসারের কাজে ফিরিয়ে নিয়েছে’।
২০০৮ সালে জার্মানির মেইঞ্জ শহরে প্রতিষ্ঠিত বায়োএনটেকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা উগুর সাহিন ও ওজলেম তুরেসি দম্পতি। রোগীদের জন্য ক্যানসারের ইমিউনোথেরাপি আবিষ্কারের পথিকৃত হিসাবে কাজ করছেন তারা।
তাদের এমআরএনএ প্রযুক্তির ব্যবহার করোনা মহামারীতে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে। এই দম্পতি বলেছেন, করোনা টিকা আবিষ্কারের সেই অভিজ্ঞতা তাদের কাজে উৎসাহ জুগিয়েছে।
প্রচলিত সব ভ্যাকসিন ভাইরাসের দুর্বল একটি সংস্করণকে ব্যবহার করে উৎপাদিত হলেও এমআরএনএ প্রযুক্তিতে ভাইরাসের কেবল জেনেটিক কোড ব্যবহার করা হয়।
বিবিসির সানডে অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জার্মান এই দম্পতি কথা বলেছেন ক্যানসারের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আদ্যোপান্ত নিয়ে।
কবে নাগাদ বিশ্বের সব রোগীর কাছে ক্যানসারের টিকা সহজলভ্য হতে পারে, এমন এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক সাহিন বলেছেন, ২০৩০ সালের আগেই এটি হতে পারে।
বিবিসির কুয়েনসবার্গকে তুরেসি বলেছেন, ক্যানসারের ভ্যাকসিন তৈরির জন্য আমরা কয়েক দশক ধরে যা তৈরি করেছি, তা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরিতে হাওয়া দিয়েছে। এখন কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন এবং এটি তৈরি করতে গিয়ে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা ক্যানসারের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কাজকে গতিশীল করছে।
‘আমরা শিখেছি কীভাবে আরও ভালো, আরও দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি করা যায়। আমরা বিপুলসংখ্যক মানুষের মাঝে ইমিউন সিস্টেম কীভাবে এমআরএনএর প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটি শিখেছি।’
তিনি বলেন, করোনা ভ্যাকসিনের আবিষ্কার নিয়ন্ত্রকদের এমআরএনএ ভ্যাকসিন এবং কীভাবে সেগুলো ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে জানতে সাহায্য করেছে।
তুরেসি বলেছেন, এটি অবশ্যই আমাদের ক্যানসারের টিকা তৈরির গতিকেও ত্বরান্বিত করবে। এই দম্পতি ক্যানসারের টিকা আবিষ্কারের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন। অধ্যাপক তুরেসি বলেছেন, আমাদের কাছে ক্যানসারের টিকা থাকবে, বিজ্ঞানী হিসাবে আমরা এভাবে বলতে সবসময় দ্বিধাবোধ করি।
‘আমাদের অনেক সফলতা রয়েছে এবং আমরা সেগুলোর ওপর কাজ চালিয়ে যাব।’
উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে বিশ্বে প্রতিবছর ৮২ লাখ মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করে। এই মরণব্যাধিতে আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের মানুষ।
বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে এই রোগে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে আন্তজার্তিক সংস্থা আইএআরসি বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ৫৬ হাজার মানুষ নতুনভাবে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন, এর মধ্যে মারা যাচ্ছেন ১ লাখ ৯ হাজার।
তবে দেশে ক্যানসার চিকিৎসা এখনো অপ্রতুল। দেশের প্রত্যেক বছর দেড় লাখের বেশি মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে ১ লাখ মৃত্যুবরণ করছে। ভেজাল খাবার, স্থূলতা, অনিয়ন্ত্রিত জীবন ব্যবস্থা, মাদক ও ধূমপানের কারণে ক্যানসার আক্রান্তের হার বাড়ছে।
দেশে বর্তমানে ক্যানসারে আক্রান্ত ২০ লাখ রোগী রয়েছে। তার বিপরীতে চিকিৎসা অনেক অপ্রতুল। দেশে এই চিকিৎসার জন্য সারা দেশে মাত্র ৫০০টি শয্যা রয়েছে, যা কয়েক হাজার প্রয়োজন ছিল।
১০ লাখ রোগীর ক্যানসারের জন্য রেডিওথেরাপি প্রয়োজন। সেই তুলনায় বাংলাদেশের ক্যানসার চিকিৎসার জন্য ১৬০ রেডিওথেরাপি মেশিন প্রয়োজন। তবে আমাদের দেশে হাতে গোনা ২০ থেকে ২৫টি রেডিওথেরাপি মেশিন রয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/০৮৪০
আপনার মতামত জানানঃ