সংযুক্ত আরব আমিরাতের দিল্লির শ্রী অক্ষরধাম মন্দিরের আদলে মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম খোদাই পাথরের তৈরি বৃহত্তম ও পূর্ণাঙ্গ হিন্দু মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দিরটির উদ্বোধন না হলেও, ইতোমধ্যে আংশিকভাবে চালু হয়েছে। অক্টোবর মাসে জমকালোভাবে উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে মন্দিরটির।
জানা যায়, মন্দিরটিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতিটি প্রদেশের প্রতিনিধি হিসেবে সাতটি সূচাগ্র চুড়া বা স্পায়ার থাকবে। থাকবে সূক্ষ্ম কারুকাজ করা ছয়টি অলংকৃত গম্বুজ। এছাড়া এই মন্দির কমপ্লেক্সটির সামনে একটি সুন্দর উদ্যান ও একটি মনোমুগ্ধকর জলের ফুয়ারা থাকবে। এই মন্দির কমপ্লেক্সে থাকবে পর্যটন কেন্দ্র. প্রার্থনা হল, প্রদর্শনী ও শিশুদের খেলার ক্ষেত্র, সুপরিসর উদ্যান, পাঠাগার, নিরামিষ খাবার কোর্ট, বই ও উপহার সামগ্রীর দোকান ইত্যাদি।
ভারতের চিরাচরিত মন্দির নির্মাণের স্থাপত্যশৈলী ও ঐতিহ্য বজায় রেখে ভারী পাথর দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ মন্দিরটি। নির্মাণে ইস্পাত বা লোহা উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে না। তবে ভিত্তি শক্তিশালী করতে ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফ্লাই অ্যাশ কংক্রিটের শক্তি ও স্থায়িত্ব বাড়ায়। মন্দিরে ভিতের জন্য প্রায় ৩০০০ ঘনমিটার ফ্লাই অ্যাশ কংক্রিট ঢালা হয়। ভারতে ৩ হাজার কারিগর ৫ হাজার টন ইতালিয়ান মার্বেলের মধ্যে মন্দিরটি তৈরির জন্য রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন। রাজস্থান ও গুজরাট থেকে আনা পাথর খোদাই করে নকশা করছেন কারিগররা। মন্দিরের বাইরের অংশে ১২,২৫০ টন গালাপী বেলেপাথরের কারুকার্য থাকবে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছেন মন্দিরটি। এ মন্দিরের অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক হলো- এটি তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে না কোনো লোহা। বেলে পাথর দিয়ে নির্মিত হচ্ছে মন্দিরটি। মন্দিরটি তৈরিতে লেগেছে প্রায় ২২৫০ টন পাথর। ১৬ দেবতার মূর্তি থাকছে মন্দিরটিতে।
ভারতের চিরাচরিত মন্দির নির্মাণের স্থাপত্যশৈলী ও ঐতিহ্য বজায় রেখে ভারী পাথর দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ মন্দিরটি। নির্মাণে ইস্পাত বা লোহা উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে না। তবে ভিত্তি শক্তিশালী করতে ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহার করা হচ্ছে।
জয়শঙ্কর কয়েকদিন আগে একটি টুইটে এ মন্দিরের প্রশংসা করে এটি নির্মাণের জন্য মন্ত্রী শেখ নাহিয়ান বিন মোবারককে ধন্যবাদ জানান।
জেবেল আলি গ্রামে তৈরি হয়েছে এই মন্দির। তবে শুধু এই হিন্দু মন্দির নয়, এর আগেও জেবেল গ্রামে তৈরি হয়েছে বহু গির্জা।
সম্প্রতি আবুধাবিতে ধর্মীয় স্বাধীনতার হাওয়া বইছে। এতোদিন পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে অমুসলিম ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোর কোনো আইনি বৈধতা ছিলো না। প্রথা ভেঙে অমুসলিম ধর্মস্থানগুলোকে স্বীকৃতি দিতে দেশটির সরকার সেখানে মন্দির, গুরুদ্বার ও চার্চসহ বিভিন্ন ধর্মের ১৮টি প্রার্থনালয়কে লাইসেন্স দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সংখ্যালঘু ধর্মস্থানগুলোকে লাইসেন্স দেওয়ার মাধ্যমে আবুধাবিতে শান্তি সহিষ্ণুতা এবং সহাবস্থানের পরিবেশ আরো জোরদার হবে বলে আশা করছেন তারা।
জানা যায়, আমিরাতে প্রায় ৩০ লাখ ভারতীয় বাস করেন। যা সেখানকার জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ। দেশটির অর্থনীতিতে এই জনসংখ্যার বিরাট অবদান রয়েছে। বিশাল জনসংখ্যা সত্ত্বেও রাজধানী আবুধাবিতে কোনো হিন্দু মন্দির ছিলো না। অবশ্য দুবাইতে দুটি মন্দির ও একটি গুরুদ্বার রয়েছে। দুবাইয়ের প্রথম মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৮ সালে। খুব ছোট পরিসরে। কিন্তু আবুধাবির স্থানীয় হিন্দুদের পূজা বা বিয়ের মতো অনুষ্ঠানে দুবাই যেতে হয়। এ জন্য তাদের প্রায় তিন ঘণ্টা দীর্ঘ ভ্রমণ করতে হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার এই মন্দিরের জন্য জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
এই মন্দির নির্মাণ ও এর আগে ভারতের সংবিধানে কাশ্মীরকে বিশেষ স্বায়ত্বশাসিত এলাকার মর্যাদা দেওয়া ধারা বাতিলের সময় ভারতকে সমর্থন করেছিল আমিরাত। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে জি নিউজ বলছে যে, এসব থেকে বোঝা যাচ্ছে কূটনৈতিকভাবে ভারতের হাত ধরতে চাইছে আমিরাত।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫৫
আপনার মতামত জানানঃ