ঢাকার রামপুরার বাসা থেকে শাকির বিন ওয়ালী নামের একজন চিকিৎসককে সিআইডি পরিচয় দিয়ে চারজন তুলে নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার বাবা।
সূত্র মতে, তিনি সদ্য এমবিবিএস পাস করেছেন। শাকির বিন ওয়ালী কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ থেকে ২০২০ সালে এমবিবিএস পাস করেন। বর্তমানে তিনি এফসিপিএস করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
শাকিরের বাবা এ কে এম ওয়ালী উল্লাহও একজন চিকিৎসক। তিনি চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন। তিনি বলেন, প্রায় দুই যুগ ধরে পূর্ব হাজীপাড়ার ৬৮/১ নম্বর বাসায় তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন।
গত রোববার বেলা তিনটার দিকে সিআইডি পরিচয়ে সাদাপোশাকে চার ব্যক্তি বাসায় যান। তখন পেশাগত কাজে তিনি (ওয়ালী উল্লাহ) বাইরে ছিলেন। তারা শাকিরকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে নিয়ে যান। তাঁরা নিজেদের নাম–পরিচয় না জানিয়ে শুধু বলেছেন, ‘আমরা সিআইডির লোক’।
বাবা ওয়ালী উল্লাহ আরও বলেন, বিষয়টি জানার পর তিনি রামপুরা থানায় যোগাযোগ করেন। থানা থেকে বলা হয়, পুলিশ এ ব্যাপারে কিছু জানে না। সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে চাইলে পুলিশ সেটি নেয়নি। পুলিশ ডায়েরিতে নোট নিয়েছে।
ওয়ালী উল্লাহ বলেন, থানা থেকে ফেরার পর ওই দিনই রাত ১০টার দিকে চার থেকে পাঁচজনের একটি দল আবার বাসায় আসে। তারা নিজেদের সিআইডির লোক বলে পরিচয় দেন। পরে শাকিরের ঘর তল্লাশি করে একটি মুঠোফোন নিয়ে যান। তখনো তারা নিজেদের বিস্তারিত পরিচয় জানাননি।
শাকিরের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, শাকির সিআইডির মালিবাগ কার্যালয়ে আছেন। তদন্তের জন্য তারা দ্বিতীয়বার বাসায় এসেছেন।
ওয়ালী উল্লাহ বলেন, ছেলের খোঁজে গতকাল সোমবার মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু ছেলের কোনো খোঁজ পাননি। সিআইডি কার্যালয়ে গিয়ে রিসেপশনে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়।
পরে আবারও রামপুরা থানায় জিডি করতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম মাওলা বলেন, তিনি (গোলাম মওলা) নিশ্চিত, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার লোক শাকিরকে নিয়ে গেছেন। এ কারণে জিডি করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পরে জানাবেন।
রামপুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মওলা বলেন, সিআইডি পরিচয়ে বাসা থেকে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করতে এসেছিলেন শাকিরের বাবা। তখন সিআইডিতে খোঁজ নিতে বলা হয় তাকে। পরে আর তিনি থানায় যোগাযোগ করেননি।
তবে ওয়ালী উল্লাহ বলেছেন, সিআইডিতে খোঁজ নিয়ে ছেলের বিষয়ে তথ্য না পেয়ে তিনি রামপুরা থানায় এসে অভিযোগ দিতে চেয়েছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম মওলা বলেন, তিনি আর থানায় আসেননি। তিনি লিখিত অভিযোগ দিলে অবশ্যই নেওয়া হবে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
বাড়তে পারে গুমের ঘটনা
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা কমে গেছে মনে হলেও আত্মতৃপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই। নিষেধাজ্ঞা কিছুটা কমে গেলে এবং আগামী ’২৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরও ভয়াবহভাবে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা বাড়তে পারে।
দেশে গুমগুলোর বেশিরভাগই হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। যারা গুমের শিকার হয়েছেন তাদের কয়েকজন ফিরে এলেও তারা ভয়ে কোনো কথা বলেন না। গুমের মাধ্যমে দেশে একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। গত নির্বাচনে যারা দায়িত্বে ছিলেন গুম হওয়ার ভয়ে অনিয়ম দেখেও তারা কোনো বাধা দিতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কমে গেলেও আগামী নির্বাচনের আগে আবারও গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা বাড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর গুম কমেছে। এর পরিণাম আরও ভয়াবহ। কেননা সরকার জনগণের কথা চিন্তা করেনি। বরং সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ব্যক্তিগত ক্ষতির আশঙ্কা থেকে গুমের ঘটনাকে কমিয়ে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো ভূরাজনৈতিক কারণে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়, তবে আসন্ন নির্বাচনের আগে দেশে আবার গুমের মতো ঘটনা ঘটবে।
উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তর বাংলাদেশে গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সরকারকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সোমবারের (১২ আগস্ট) অধিবেশনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মানবাধিকার পরিষদের ৫১তম অধিবেশনে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদাল নাশিফ বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার পরিস্থিতির সর্বশেষ চিত্র তুলে ধরেন। এ সময় তিনি গত মাসে তখনকার কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের বাংলাদেশ সফরের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র বর্ণনা করেন।
নাদাল নাশিফ জানান, ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সফরকালে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করেন। সাবেক হাইকমিশনার ডিজিটাল জগতে মতপ্রকাশ বন্ধ করে এমন আইনগুলো পর্যালোচনায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের সহায়তার প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, মিশেল ব্যাচেলেটের বাংলাদেশ সফরকালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযোগ তদন্তে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ কাজে সহায়তা দেওয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫০৫
আপনার মতামত জানানঃ