বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে র্যাবসহ বিভিন্ন পুলিশ ও গোয়েন্দা ইউনিট। বিশেষ করে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে র্যাবকে রাজনৈতিক ডেথ স্কোয়াডে পরিণত করা হয়েছিল। গুমের ঘটনায় শুধু র্যাব নয়, ডিজিএফআই, এনএসআই, বিজিবি ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখাও জড়িত ছিল। এসব বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও অপহরণ চালিয়ে এসেছে।
র্যাবের গোয়েন্দা শাখা এবং অপারেশনাল ব্যাটালিয়ন গোপনে দীর্ঘদিন বন্দীদের আটক ও নির্যাতন করত। ‘টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন’ নামে বিশেষ কক্ষে হাজার হাজার বন্দীকে হাতকড়া পরিয়ে অন্ধকারে রাখা হতো এবং মারধর, বৈদ্যুতিক শক, ঝুলিয়ে দেওয়া, ঘোরানোসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে নৃশংস নির্যাতন করা হতো। শিশু ও মানসিক রোগীদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি। ২০২৪ সালের পর এসব নির্যাতনের প্রমাণ ধ্বংসের চেষ্টা চালানো হয়।
পুলিশের প্রভাব ও রাজনীতিকীকরণ ২০০৯ সাল থেকে বৃদ্ধি পায়। তারা বিরোধীদলীয় নেতা ও সমর্থকদের ওপর নির্বিচারে গুম, নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। ‘ক্রসফায়ার’ নামে পরিচিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটেছে, বিশেষ করে মাদকবিরোধী অভিযানে।
ডিবি (গোয়েন্দা শাখা) তাদের ক্ষমতা অপব্যবহার করে বিরোধীদের অপহরণ, নির্বিচারে আটক ও নির্যাতন করেছে। সিটিটিসি নামে পুলিশের একটি ইউনিটকে সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করা হলেও তারা বেআইনি বন্দীদখল, নির্যাতন ও গুমের অভিযোগে বিবাদিত।
ডিজিএফআই সংস্থাটিও সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর নজরদারি ও নির্যাতন চালিয়েছে। তারা ব্ল্যাক সাইট চালু করে অপহরণকৃত ব্যক্তিদের আটকে রেখেছে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই মানবাধিকার লঙ্ঘনগুলোর ব্যাপক নিন্দা করেছে। যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব ঘটনায় সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব গভীর উদ্বেগের কারণ।
২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতা পরিবর্তনের পরও র্যাব ও অন্যান্য বাহিনী থেকে নির্যাতনের সংস্কৃতি মুছে ফেলার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তবে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে বড় ধরনের সংস্কার ও আইনি ব্যবস্থা প্রয়োজন।
এই পরিস্থিতি থেকে পরিস্কার যে, বাংলাদেশে সুষ্ঠু বিচারবিহীন গুম ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলা না গেলে নাগরিক অধিকার ও গণতন্ত্রের ক্ষতি অপরিহার্য।
আপনার মতামত জানানঃ