
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তর বাংলাদেশে গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সরকারকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সোমবারের (১২ আগস্ট) অধিবেশনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মানবাধিকার পরিষদের ৫১তম অধিবেশনে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল নাশিফ বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার পরিস্থিতির সর্বশেষ চিত্র তুলে ধরেন। এ সময় তিনি গত মাসে তখনকার কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের বাংলাদেশ সফরের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র বর্ণনা করেন।
নাদাল নাশিফ জানান, ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সফরকালে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করেন। সাবেক হাইকমিশনার ডিজিটাল জগতে মতপ্রকাশ বন্ধ করে এমন আইনগুলো পর্যালোচনায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের সহায়তার প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, মিশেল ব্যাচেলেটের বাংলাদেশ সফরকালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযোগ তদন্তে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ কাজে সহায়তা দেওয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
অনলাইন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন ও প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইন এবং ওটিটি নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়াকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানসম্মত করার জন্য কমিশনের সহায়তার প্রস্তাবের কথা ব্যাচেলেট তার সংবাদ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো প্রকাশ করেছিলেন।
নাদা আল নাশিফ জানান, মিশেল ব্যাচেলেট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিশেষ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিরুদ্ধে জোরপূর্বক অন্তর্ধান বা গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন, বিশেষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এবং ওই কাজে সাহায্য করার কথাও বলেছেন।
যদিও সরকার দেশে গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
জেনেভায় গত ২৫ আগস্ট জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার হিসেবে মিশেল ব্যাচেলেট তার বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু না বলায় সরকারে একাধিক মন্ত্রী দাবি করেছিলেন যে তাদের ব্যাখ্যায় কমিশনার ব্যাচেলেট সন্তুষ্ট হওয়ায় কমিশনের বাংলাদেশ নিয়ে আর কোনো উদ্বেগ নেই।
ওই সব বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গত ৩১ আগস্ট কমিশনের মুখপাত্র আলাদা বিবৃতি দিয়ে জানান যে হাইকমিশনার ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বিবৃতিতে যেসব কথা বলেছেন, তাতে কমিশনের অবস্থান প্রতিফলিত হয়েছে। মানবাধিকার পরিষদে হালনাগাদ বৈশ্বিক পরিস্থিতির যে বিবরণ ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল নাশিফ পেশ করেছেন, তাতে সংক্ষেপে সেই উদ্বেগগুলো তুলে ধরে কমিশনের সহায়তার প্রস্তাবের পুনরাবৃত্তি করা হলো।
মানবাধিকার সংগঠক, আইনজীবী, সাংবাদিক এবং গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে এমন ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতি প্রতিশোধ গ্রহণ বা তাদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ না করার জন্যও তিনি তার বক্তব্যে আহ্বান জানিয়েছেন। হাইকমিশনার ব্যাচেলেটের সফরের পর মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’–এর নিবন্ধন বাতিলের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক আপিল সরকার নাকচ করে দিয়েছে।
আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং বিক্ষোভ দমনে ‘বলপ্রয়োগ’ থেকে নিরাপত্তা বাহিনীকে বিরত রাখা বাংলাদেশ সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের সুযোগ নিশ্চিত করা সরকারের জন্য ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং বিক্ষোভ দমনে ‘বলপ্রয়োগ’ থেকে নিরাপত্তা বাহিনীকে বিরত রাখা বাংলাদেশ সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ঢাকায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইনসহ ‘ওভার দ্য টপ প্ল্যাটফরম (ওটিটি)’ সংক্রান্ত বিধি-বিধান আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করার বিষয়েও আলোচনা করেছেন। বাংলাদেশে জাতিসংঘের কার্যালয় উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়াবিষয়ক ১০টি সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ সরকারকে দিয়েছে। বর্তমান খসড়া আইনে পরিণত হলে মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কাও দেখছে জাতিসংঘ।
ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদাল নাশিফ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বৈশ্বিকভাবে যুদ্ধের আর্থসামাজিক পরিণতিতে দরিদ্র দেশগুলোর জ্বালানির তীব্র ঘাটতি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে হুমকির কথা তুলে ধরেন। আগামী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত এ অধিবেশন চলবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩০
আপনার মতামত জানানঃ