আন্তর্জাতিক বাজারে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সৌদি সিপির দাম কমলেও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) দাম বাড়িয়েছে।
জ্বালানি নিয়ন্ত্রক কমিশন বলেছে, গত মাসে বিশ্ব বাজারে এলপিজির দাম কমার পর তারাও দাম কমিয়েছে। চলতি মাসে আবার দাম কমলেও ডলারের বিনিময় হার বেশি থাকায় দাম কমানো সম্ভব হয়নি।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন দাম ঘোষণা করা হয়। নির্ধারিত নতুন দাম দুপুর ১টা থেকেই কার্যকর হবে।
ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে এ দাম ঘোষণা করেন বিইআরসি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু ফারুক। এ সময় সচিব খলিলুর রহমান, সদস্য মোকবুল ই ইলাহিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সেপ্টেম্বর মাসে প্রতি কেজি এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০২ টাকা ৮৮ পয়সা, যা আগস্ট মাসে ছিল ১০১ টাকা ৬২ পয়সা। এর আগের মাসে অর্থাৎ জুলাই মাসে ছিল ১০৪ টাকা ৫২ পয়সা। সেই হিসাবে সেপ্টেম্বর মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম পড়বে ১ হাজার ২৩৫ টাকা, যা আগস্ট মাসে ছিল ১ হাজার ২১৯ টাকা এবং জুলাই মাসে ছিল ১ হাজার ২৫৪ টাকা। আর জুন মাসে ছিল ১ হাজার ২৪২ টাকা।
এদিকে সেপ্টেম্বর মাসের জন্য অটোগ্যাসের দাম লিটারপ্রতি ৫৭ টাকা ৫৫ পয়সা নির্ধারণ করেছে কমিশন, যা আগস্ট মাসে ছিল ৫৬ টাকা ৮৫ পয়সা এবং জুলাই মাসে ছিল ৫৮ টাকা ৪৬ পয়সা। এই হিসাবে আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে দাম বেড়েছে ৭ পয়সা।
এ ছাড়া বাসাবাড়িতে কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবহারকারীদের এলপিজির দাম কিছুটা বেড়েছে। রেটিকুলেটেড এলপিজি গ্যাসীয় অবস্থায় প্রতি লিটারের দাম আগস্টে ছিল ০ দশমিক ২১৮৬ টাকা, সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ০ দশমিক ২২১৪ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সেপ্টেম্বর মাসের জন্য সৌদি আরামকো কর্তৃক প্রোপেন এবং বিউটেনের ঘোষিত সৌদি সিপি (কন্ট্রাক্ট প্রাইস) যথাক্রমে প্রতি মেট্রিক টন ৬৫০ মার্কিন ডলার এবং ৬৩০ মার্কিন ডলার এবং প্রোপেন ও বিউটেনের অনুপাত ৩৫:৬৫ অনুযায়ী প্রোপেন ও বিউটেনের গড় সৌদি সিপি প্রতি মেট্রিক টন ৬৩৭ মার্কিন ডলার বিবেচনায় এই দাম নির্ধারণ করেছে কমিশন।
১২ কেজি সিলিন্ডার ছাড়াও সাড়ে ৫ কেজি থেকে শুরু করে ৪৫ কেজি পর্যন্ত সব সিলিন্ডারের দামই বাড়ানো হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। তবে সরকারি পর্যায়ে সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দামের পরিবর্তন হয়নি। তাই সেটি আগের দাম ৫৯১ টাকাই রয়েছে।
বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু ফারুক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির দাম কমেছে। যদিও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর আমাদের এলপিজির দাম ঘোষণার কথা থাকলেও এলপিজি মালিকদের সঙ্গে ডলারের দাম নির্ধারণ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। এদিকে আমাদের কমিশনের চেয়ারম্যান অসুস্থ থাকায় দেরি হয়েছে। আমরা এলপিজি কোম্পানিগুলোকে তাদের এলসি সেটেলমেন্টের কাগজপত্র দিতে বলেছিলাম। ১৬টি প্রতিষ্ঠান কাগজপত্র জমা দিয়েছে। সব যাচাই-বাছাই করেই এবার ডলারের দাম নির্ধারণ করে এলপিজির দাম ঠিক করা হয়েছে।
১২ কেজি সিলিন্ডার ছাড়াও সাড়ে ৫ কেজি থেকে শুরু করে ৪৫ কেজি পর্যন্ত সব সিলিন্ডারের দামই বাড়ানো হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনার কারণে এমনিতেই মানুষ আর্থিক কষ্টে আছে, এই অবস্থায় ভোক্তার কাছ থেকে বেশি অর্থ হাতিয়ে নিলে দুর্ভোগের শেষ থাকবে না।
এলপিজি মূলত প্রোপেন ও বিউটেনের মিশ্রিত জ্বালানি। সুষ্ঠু, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য স্থানীয় তাপমাত্রা অনুযায়ী এলপি গ্যাসে প্রোপেন ও বিউটেনের হার নির্ধারণ করা উচিত। কিন্তু দেশে এ রীতি অনুসরণ করা হয় না। বিইআরসির এ সংক্রান্ত সুপারিশমালায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় কোম্পানিগুলো ৩০ থেকে ৫০ ভাগ প্রোপেন এবং সে অনুসারে ৭০ থেকে ৫০ ভাগ বিউটেন মিশিয়ে এলপিজি বাজারজাত করছে। অথচ বাংলাদেশে এলপি গ্যাসে প্রোপেন-বিউটেনের অনুপাত ৩০ থেকে ৪০ এবং ৭০ থেকে ৬০ হওয়া উচিত।
দেশে বর্তমানে বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন এলপিজি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে সাড়ে ১৫ হাজার টন সরকারি কোম্পানি বাজারজাত করছে। বাকি প্রায় ৯ লাখ ৮৫ হাজার টন আমদানি করছে বেসরকারি কোম্পানিগুলো। দেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ২৮টি বেসরকারি কোম্পানির মধ্যে ২০টি এলপিজি আমদানি করছে। এগুলোর বাইরে এলপি গ্যাস লিমিটেড একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এলপিজি বিপণন করছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেড বোতলজাত তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজি বাজারজাত শুরু করে। ১৯৯৬ সালে এই ব্যবসায় যুক্ত হয় বেসরকারি উদ্যোক্তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫৪
আপনার মতামত জানানঃ