সৌরজগতের লাল গ্রহ মঙ্গলে অবতরণের পর গত দেড় বছরে সাতবার অক্সিজেন উৎপাদন করেছে নাসার রোভার পারসিভের্যান্স।
মঙ্গলের বাতাসের ৯৬ শতাংশই কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস। কার্বন ডাইঅক্সাইড অণু ভেঙে শ্বাসযোগ্য অক্সিজেন উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাই করার লক্ষ্যেই মক্সি বানিয়েছিলেন এমআইটির গবেষকরা।
নাসা মনে করছে, ভবিষ্যতে মঙ্গলগ্রহে মানুষের অভিযানের সময় তাদের পুরোটা সময়ের জন্য যে অক্সিজেনের দরকার হবে তা পৃথিবী থেকে বহন করে নেয়ার পরিবর্তে মোক্সি নামের এই যন্ত্রটিরই আরও বড় কোন সংস্করণ সাথে নেয়া যেতে পারে।
মহাকাশে যেতে যে রকেট ব্যবহৃত হয়, সেই রকেট চালানোর জন্যও অক্সিজেন লাগে। অক্সিডাইজারের উপস্থিতিতে জ্বালানি পুড়িয়ে রকেট সামনে অগ্রসর হওয়ার গতি অর্জন করে। এই অক্সিডাইজার হিসেবে সাধারণ অক্সিজেনও ব্যবহার করা যায়।
মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডই বেশি, প্রায় ৯৬ শতাংশ। অক্সিজেন আছে মাত্র শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ। অথচ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আছে ২১ শতাংশ অক্সিজেন।
মোক্সি নামের যন্ত্রটি মঙ্গলের কার্বন ডাইঅক্সাইডের অণু থেকে অক্সিজেন বের করতে পারে। কার্বন ডাইঅক্সাইডের প্রতিটি অণুতে থাকে কার্বনের একটি এবং অক্সিজেনের দুটি পরমাণু। আর এই অক্সিজেন বের করে নেয়ার পর যে কার্বন মনোক্সাইড অবশেষ হিসেবে থেকে যায়, তা ছেড়ে দেয়া হয় মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডলে।
প্রযুক্তি ও মহাকাশবিষয়ক সাইট স্পেসডটকম জানিয়েছে, সরাসরি মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল থেকে অক্সিজেন উৎপাদনের জটিল কাজটি করছে পারসিভের্যান্সের ‘মার্স অক্সিজেন ইন-সিটু রিসোর্স ইউটিলাইজেশন এক্সপেরিমেন্ট (মক্সি)’ নামের একটি যন্ত্র; যা তৈরি করেছেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) গবেষকরা।
যে সাতবার পারসিভের্যান্সে বসানো মক্সি চালু করা হয়েছে, প্রতিবারই যন্ত্রটি ঘণ্টায় ৬ গ্রামের মত অক্সিজেন তৈরি করতে পেরেছে, যা পৃথিবীর একটি ছোটখাটো গাছের অক্সিজেন উৎপাদনের ক্ষমতার প্রায় সমান।
অদূর ভবিষ্যতে মঙ্গলে মানব নভোচারীদের পাঠানোর পরিকল্পনা করছে নাসাসহ বিশ্বের অন্যান্য মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। আর মঙ্গলের বুকে মানুষের টিকে থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে শ্বাসযোগ্য অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা।
২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলে অবতরণ করা পারসিভের্যান্স মানুষের মঙ্গলযাত্রার সেই স্বপ্নকেই ধরাছোঁয়ার নাগালে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে।
মক্সির নির্মাতা দলের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং এমআইটির অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনটিক্স বিভাগের অধ্যাপক জেফরি হফম্যান বলেন, “ভিন্ন কোনো গ্রহের পৃষ্ঠে পাওয়া রসদ রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় মানুষের জন্য ব্যবহারের উপযোগী কোনো কিছুতে রূপান্তরের প্রথম উদাহরণ এটি। সে দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।”
হফম্যান নিজেও নাসার একজন অবসারপ্রাপ্ত নভোচারী; ১৯৯৩ সালে হাবল টেলিস্কোপ সংস্কারের প্রথম মিশনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
রাত-দিন মিলিয়ে মঙ্গলের চার ঋতুর বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজের কার্যক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে মক্সি। গবেষকরা ধারণা করছেন, মক্সির শতগুণ আকারের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে ভবিষ্যতের মঙ্গলচারীদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ শ্বাসযোগ্য অক্সিজেন উৎপাদন করা সম্ভব।
মঙ্গলচারীরা যদি এই লাল গ্রহে অক্সিজেনের সরবরাহ না পান, সেক্ষেত্রে পৃথিবী থেকেই বয়ে নিয়ে যেতে হবে অক্সিজেন গ্যাস। কিন্তু তাতে মহাকাশযানের ভেতর অনেকটা জায়গা দখল করে রাখবে অক্সিজেনের কন্টেইনার।
অন্যদিকে, মঙ্গলেই অক্সিজেন উৎপাদন সম্ভব হলে রকেট জ্বালানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান নিয়ে ভাবতে হবে না নভোচারীদের।
স্পেস ডটকম লিখেছে, মঙ্গল থেকে নভোচারীদের পৃথিবীতে ফেরাতে একটি রকেটের ৩০ থেকে ৪৫ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন প্রোপেল্যান্ট লাগবে। আর সেটি মঙ্গলেই উৎপাদন করা গেলে নভোচারীদের সেখান থেকে ফিরিয়ে আনার একটি অনিশ্চয়তা দূর হবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬১৫
আপনার মতামত জানানঃ