‘সৌদি আরবে কনসার্ট ও কিছু অনুষ্ঠানের বিষয়ে খুতবায় সমালোচনাকারী’ মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদের সাবেক ইমাম শেখ সালেহ আল তালিবের দশ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আপিল আদালত।
আরব বিশ্বে গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করা সংস্থা ডন একটি টুইটে এ রায়ের কথা জানায়। ঐ টুইটে লেখা হয়েছে, রিয়াদ একটি বিশেষ আদালত শেখ সালেহ আল তালিবের খালাসের রায় বাতিল করে ১০ বছরের কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে।
সৌদি বন্দিদের নিয়ে কাজ করা প্রিজনার্স অফ কনসায়েন্স অ্যাকাউন্টও খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তারা বলছে, আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে আপিল আদালত ইমামের খালাসের রায় বাতিল করে ১০ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে।
২০১৮ সালের আগস্টে গ্র্যান্ড মসজিদের ইমাম সালেহ আল তালিব গ্রেফতার করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। ঐ সময় তার মতো আরো বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
সালেহ আল তালিবকে ঠিক কী কারণে গ্রেফতার করা হয়েছিল সৌদি কর্তৃপক্ষ তখন কিছুই বলেনি। তবে একটি খুতবায় কিছু বিষয়ে সমালোচনার পরই তাকে গ্রেফতার করা হয়। কনসার্ট ও কিছু অনুষ্ঠানের বিষয়ে সমালোচনা করেছিলেন তিনি। তার মতে ঐ সমস্ত অনুষ্ঠান সৌদির ধর্মীয় বিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
তালিবের বিশ্বব্যাপী একটা পরিচিতি রয়েছে, হাজার হাজার মানুষ ইউটিউবে তার খুতবা ও কুরআন তেলাওয়াত দেখেন।
শেখ সালেহ আল তালিবের জন্ম ১৯৭৪ সালের ২৩ জানুয়ারি। তার পরিবার প্রাচীন আরবের বিখ্যাত পরিবারগুলোর একটি। বিজ্ঞান, বিচারব্যবস্থা, শরিয়া বিজ্ঞানে তার পরিবারের বিশেষ অবদান রয়েছে।
শেখ আল তালিব নিজেও রিয়াদের উচ্চ ও জরুরি আদালতের পাশাপাশি অন্যান্য আদালতে বিচারক হিসাবে তিন বছর কাজ করেছেন। গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত মক্কা আল-মুকাররামার আদালতে বিচারক ছিলেন তিনি।
এমবিএস নামে পরিচিত মোহাম্মদ বিন সালমান ২০১৭ সালে সৌদি যুবরাজ হওয়ার পর বেশ কজন ইমাম, নারী অধিকার কর্মী ও ক্ষমতাসীন রাজপরিবারের সদস্যকে আটক করা হয়। এর মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট ইসলাম প্রচারক সালমান আল-আওদাহ, আওয়াদ আল-কারনি, ফারহান আল-মালকি, মোস্তফা হাসান ও সাফার আল-হাওয়ালি।
অবিশ্বাস্যভাবে বদলে যাচ্ছে সৌদি আরব। কিছুকাল আগেও যা ছিল অসম্ভব, চিন্তার বাইরে, তা-ই ঘটে চলেছে সেখানে। জনপরিসর নারীর জন্য ছিল অগম্য, তারা এখন পুরুষের পাশাপাশি তারা কাজ করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। অবগুণ্ঠন ছিল বাধ্যতা, আজ তাদের দেখা যাচ্ছে ফ্যাশনশৈলীতে। হিজাব-নেকাব ছাড়া বেরোলে রাস্তা থেকে তাদের ধরে নিয়ে যেতো ধর্মীয় পুলিশ। আজ সেই আতঙ্ক নেই। আগে নামাজের সময় হলে পুলিশ এসে হাজির হতো। পুলিশের কিছু বলতে হতো না। এখনো পুলিশ আসে, তবে এসে তারা নামাজে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। কোনো জোরজবরদস্তি নেই।
আগে তাদের কাজ ছিল কঠোর অনুশাসনগুলো সবাইকে একভাবে মানতে বাধ্য করা, এখন মানুষের জীবনাচরণে সার্বক্ষণিক পুলিশী হস্তক্ষেপ বন্ধ হয়েছে।
আর এই অগ্রগতিগুলো ঘটছে মোহাম্মদ বিন সালমানের কারণেই। তিনি এগোচ্ছেন ২০৩০ এর মধ্যে সৌদি আরবকে অর্থনীতিতে সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে, তরুণদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে।
সৌদিতে চলচ্চিত্র ও উন্মুক্ত কনসার্ট নিষিদ্ধ ছিল। তবে ২০১৬ সালে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ঘোষিত ‘ভিশন ২০৩০’ লক্ষ্যের অংশ হিসেবে সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে চাঙ্গা করার প্রতিশ্রুতিতে কমিকস ও কনসার্ট করেছে জিইএ। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিনোদন অঙ্গনকে তরান্বিত করতে চায় সৌদি সরকার। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে তেলের ওপর নির্ভরতা কমানোই তাদের লক্ষ্য। ওই সময় স্বল্প পরিসরের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ও উৎসবের টিকিট ছাড়তে না ছাড়তেই ফুরিয়ে যায়। সৌদি তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এসব আয়োজন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সৌদি বাদশার কাছে এসব অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যাপারে বৈধতার প্রশ্ন ও জনসমর্থনের প্রস্তাব রাখতে চান আলেমরা। যদিও সরকারের বেশিরভাগ বিষয়ের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বাদশার ওপর আস্থা আছে তাদের।
তবে কমিক কন ও জিইএ’র সমালোচনা করে আলেমদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন সৌদির ১০ হাজারেরও বেশি নাগরিক। ‘অ্যা নিউ ডিজাস্টার ফর এন্টারটেইনমেন্ট ইন রিয়াদ’ (রিয়াদে বিনোদনের নতুন দুর্যোগ) হ্যাশট্যাগও টুইটারে ছড়িয়ে দেয় তারা। অবশ্য তাদের বিরোধীতা করেছেন এমন ১০ হাজার নাগরিক তৈরি করেছিল ‘দ্য জেনারেল এন্টারটেইনমেন্ট অথোরিটি মেকস আস হ্যাপি’ নামের বিপরীত একটি হ্যাশট্যাগ।
এদিকে প্রবীণ আলেমদের বেশিরভাগই বিনোদন অঙ্গন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনায় নিরব থেকেছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫৪০
আপনার মতামত জানানঃ