তাইওয়ানের স্বাধীনতা চাওয়ার বিষয়টিকে সমর্থন করায় দ্বীপটির সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চীন। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফর করেন চলতি মাসের শুরুতে। এরপরই এই নিষেধাজ্ঞা এলো। চীন বলছে, তারা ভুল বার্তা পাঠিয়েছিলেন।
নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে চীনের তাইওয়ান–বিষয়ক কার্যালয়। যে সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে আছেন সিয়াও বি খিম ও ওয়েলিংটন কু।
সিয়াও বি খিম ওয়াশিংটনে নিযুক্ত তাইওয়ানের দূত। আর ওয়েলিংটন কু তাইওয়ানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মহাসচিব।
তাইওয়ানের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির রাজনীতিবিদদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
তাইওয়ান–বিষয়ক কার্যালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তারা চীন, হংকং ও ম্যাকাউ সফর করতে পারবেন না। তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত ফার্ম ও বিনিয়োগকারীদের চীনে মুনাফা করতে দেওয়া হবে না।
আগে তাইওয়ানের প্রধানমন্ত্রী সু সেং-চাং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ উ ও পার্লামেন্ট স্পিকার ইউ সি-কুনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় চীন।
তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে মনে করে চীন। তবে চীনের এই দাবি নাকচ করে আসছে তাইওয়ান। তারা নিজেদের স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দেখে।
চীনের হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে ২ আগস্ট তাইওয়ান সফর করেন পেলোসি। তার সফর ঘিরে অঞ্চলটিতে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। তাইওয়ানের চারপাশে কয়েক দিন ধরে বড় ধরনের সামরিক মহড়া চালায় চীন।
এ উত্তেজনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে তাইওয়ান প্রণালি। মার্কিন আইনপ্রণেতাদের একটি দলের তাইওয়ান সফর ঘিরে গতকাল সোমবার সেখানে আবার সামরিক মহড়া চালিয়েছে বেইজিং।
সিনেটর এড মার্কির নেতৃত্বে পাঁচ জন মার্কিন আইনপ্রণেতা রবিবার তাইপেতে পৌঁছান এবং তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে দেখা করেন। আগস্টের শুরুতে হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির বহুল আলোচিত সফরের পর চীন-মার্কিন সম্পর্কে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয় এবং তাইওয়ানকে ঘিরে ব্যাপক সামরিক মহড়া চালায় চীন। সেই ঘটনার উত্তেজনা থিতিয়ে আসার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের একদল রাজনীতিক আবার এ রকম বিতর্কিত এক উচ্চ পর্যায়ের সফরে তাইওয়ান গেলেন।
চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির ইস্টার্ন কমান্ড জানিয়েছে, তাইওয়ানের চারপাশের সমুদ্রে এবং আকাশসীমায় তারা বিভিন্ন বাহিনীর যৌথ মহড়া শুরু করেছে, যার উদ্দেশ্য তারা যুদ্ধের জন্য কতটা প্রস্তুত, সেটা পরীক্ষা করা।
চীনের নিজের স্বার্থে এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন যখন, তখন সেখানে আপস করার কোনো সুযোগ নেই।
এক বিবৃতিতে তারা আরো বলেছে, ‘তাইওয়ান এবং যুক্তরাষ্ট্র যে রাজনৈতিক কূটচাল চালিয়ে যাচ্ছে এবং পুরো তাইওয়ান প্রণালিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টের চেষ্টা করছে, এই সামরিক মহড়া তার বিরুদ্ধে এক কঠোর সুরক্ষা হিসেবে কাজ করবে।’
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পৃথক এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘মার্কিন রাজনীতিকদের এই তাইওয়ান সফর চীনের সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতা ক্ষুণ্ণ করেছে এবং এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্টকারী, তাদের সেই চেহারা উন্মোচন করে দিয়েছে।’
‘চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুতি অব্যাহত রেখেছে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্থিতিশীলতা রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাইওয়ানের স্বাধীনতার নামে যে কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং বিদেশি হস্তক্ষেপ তারা গুঁড়িয়ে দেবে।’
পিপলস লিবারেশন আর্মির ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড বলেছে, তাদের মহড়া চলছে তাইওয়ানের পেংগু দ্বীপপুঞ্জের কাছে, যার অবস্থান তাইওয়ান প্রণালিতে।
চীনা রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা শিনহুয়া এক মন্তব্য প্রতিবেদনের শিরোনামে বলেন, তাইওয়ান প্রশ্নে মার্কিন আইন নেতাদের আগুন নিয়ে খেলা বন্ধ করা উচিত।
মন্তব্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন আইনপ্রণেতাদের নিজেদেরই ভাগ্য নিয়ে চিন্তা করা উচিত, কারণ সামনে তাদের মধ্যবর্তী নির্বাচন।
এতে আরো বলা হয়েছে, চীনের নিজের স্বার্থে এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন যখন, তখন সেখানে আপস করার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন বলেছেন, চীনের এই মহড়া আঞ্চলিক শান্তি এবং স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সামরিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছি। তাইওয়ানের স্থিতিশীলতা রক্ষায় আমরা সাধ্যমতো সবকিছু করছি।’
তাইওয়ান সফররত মার্কিন সিনেটর এড মার্কি বলেছেন, একটি অপ্রয়োজনীয় সংঘাত এড়ানোর নৈতিক দায়িত্ব তাদের আছে। তাইওয়ান অবিশ্বাস্য সংযমের পরিচয় দিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, গতকাল সোমবার ১৫টি চীনা বিমান তাইওয়ান প্রণালির মধ্যরেখা অতিক্রম করে। এই মধ্যরেখাকে দুই দেশের মধ্যে অঘোষিত সীমান্ত বলে ধরা হয়।
সিনেটর এড মার্কির নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদল গতকাল তাইওয়ান ত্যাগ করেছে। তবে তারা তাইওয়ান ছেড়ে যাওয়ার পরই কেবল তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাদের সাক্ষাতের ভিডিও প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে প্রকাশ করা হয়
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫১
আপনার মতামত জানানঃ