পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে লালমনিরহাটের সদরে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলের নেতৃত্বে চার সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ভিডিও ক্যামেরা, ট্রাইপড, মোবাইল ও হেলমেট কেড়ে নিয়ে ভাঙচুর করেন হামলাকারীরা।
উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান মণ্ডলের ছেলে সুলতান মণ্ডল অন্যের স্ত্রীকে পালিয়ে নিয়ে যাওয়ার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে শুক্রবার বিকেল ৬টার দিকে এ হামলার হয়।
হামলায় আহত সাংবাদিকরা হলেন দৈনিক প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি আবদুর রব সুজন, যমুনা টিভির আনিসুর রহমান লাডলা, এখন টেলিভিশনের মাহফুজুল ইসলাম বকুল ও যমুনা টিভির ক্যামেরাপারসন আহসান হাবীব।
আহতরা জানান, গত ৭ আগস্ট পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের দেউতির সিন্দুরিয়া গ্রামের এক নারীকে নিয়ে পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান মণ্ডলের ছেলে ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগ সভাপতি সুলতান হোসেন মণ্ডল পালিয়ে নিয়ে যান বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ৯ আগস্ট সদর থানায় জিডি করেন ওই নারীর স্বামী।
ইউনিয়নের সাকোরপাড় দিনাদুলি গ্রামে এ ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে এ হামলার শিকার হন তারা। অভিযুক্তের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি দল এ হামলা চালায়। এ সময় যমুনা টিভির ক্যামেরা পার্সন আহসানের ভিডিও ক্যামেরা, ট্রাইপড, মোবাইল ও হেলমেট কেড়ে নিয়ে ভাঙচুর করেন হামলাকারীরা।
মারধরের শিকার আবদুর রব সুজন বলেন, পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি আজিজার রহমানের ছেলে ও দেউতিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী সুলতান হোসেন মন্ডলের বিরুদ্ধে গত ৭ আগস্ট প্রতিবেশীর স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। সুলতান ওই ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে সরজমিনে আমিসহ চার সাংবাদিক মোটরসাইকেলে পঞ্চগ্রামের দিনাদুলি এলাকায় যাই। সেখানে সুলতানের বাবা ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি আজিজুর রহমানের সঙ্গে আমাদের কথা হয়।
তিনি আরও বলেন, কাজ শেষে ফেরার পথে সুলতান মন্ডলের ভাই ও আজিজুর রহমানের বড় ছেলে শাহেদ আলী মন্ডলের নেতৃত্বে ২০/২২ জনের একটি দল আমাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় আমাদের সঙ্গে থাকা ট্রাইপড, ক্যামেরা, হেলমেট ভাঙচুর করা হয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় শহরে এসে হাসপাতালে ভর্তি হই।
তবে হামলার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, ‘সাংবাদিকের ওপর হামলা কারা করেছে সে বিষয়ে খোঁজ চলছে। হামলাকারী আমার ছেলে হলেও তার বিচার হোক। তবে আমি সাংবাদিকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করিনি।’
জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক মতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমি আহতদের অবস্থা দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ইতোমধ্যে ওই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বসুনিয়াকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সদর থানার ওসি এরশাদুল আলম বলেন, হামলার বিষয়ে পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানাও জানেন। তিনি এ বিষয়ে সার্বিক খোঁজ নিচ্ছেন। অভিযোগ পেলেই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে-ই সুযোগ পাচ্ছে সে-ই সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন করছে৷ সেটা যে শুধু সরকারি দলের লোক তা নয়, ব্যবসায়ীরা করছে, অর্থশালীরা করছে৷ আসলে সাংবাদিকদের খবরটি যাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, তারাই এটা করছে৷
তারা মনে করেন নির্যাতনকারীদের কঠোর শাস্তি হলে বারবার নির্যাতনের ঘটনা ঘটতো না৷
তারা বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এই জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী৷ বিচারের জন্য বছরের পর বছর ঘুরতে হচ্ছে৷ এই যে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ১২ বছরে পুলিশ ৯০ বার আদালত থেকে সময় নিয়েছে, অথচ খুনিদের ধরতে পারেনি৷ বিচারহীনতার এই সংস্কৃতিটাই সাংবাদিকতা পেশাকে আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে৷
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩২
আপনার মতামত জানানঃ