‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর রচয়িতা ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক সালমান রুশদির ওপর হামলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের শিটোকোয়া ইনস্টিটিউটে এক মঞ্চে তাঁর ওপর এ হামলা হয়। তাঁর ঘাড়ে হামলাকারী ছুরিকাঘাত করেন। তাঁকে হেলিকপ্টারে করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খবর বিবিসির।
ঘাড়ে জখমসহ ৭৫ বছরের রুশদিকে ভর্তি করা হয়েছে একটি হাসপাতালে। তবে তার অবস্থা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হামলাকারী এক তরুণকে আটক করেছে পুলিশ। তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
নিউ ইয়র্কের শাটোকোয়া ইনস্টিটিউশনের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন বুকার পুরস্কার বিজয়ী এই লেখক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এক ব্যক্তি দৌঁড়ে মঞ্চে ওঠেন। রুশদির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সময় তাকে ঘুষি বা ছুরিকাঘাত করতে দেখেছেন তারা।
অনলাইনে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ঘটনার পরপরই মঞ্চে ছুটে আসছেন অংশগ্রহণকারীরা।
নিউইয়র্ক স্টেট পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহভাজন এক ব্যক্তি মঞ্চে ওঠে রুশদি ও একজন সাক্ষাৎকারগ্রহণকারীর ওপর হামলা চালায়। বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, রুশদির ঘাড়ে ছুরিকাঘাতের ক্ষত হয়েছে। লেখককে হেলিকপ্টারে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে ডেইলি মিররের খবরে বলা হয়, মঞ্চে ওঠে এক ব্যক্তি তাকে (রুশদি) ঘুষি মারলে তিনি মেঝেতে পড়ে যান। এরপর লেখকের প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ শুরু হয়। মঞ্চ, তার চেয়ার এবং আশপাশ রক্তে ভেসে যায়।
স্থানীয় সাংবাদিক বাফেলো নিউজের মার্ক সোমার বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বিবিসি নিউজ চ্যানেলকে বলেন, হামলাকারীর মুখে কালো মাস্ক ছিল। তিনি দর্শকদের মধ্য থেকে বেরিয়ে মঞ্চে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং রুশদির ওপর হামলা শুরু করেন।
ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে উপস্থিত দর্শকেরা রুশদির সহায়তায় ছুটে আসেন এবং হামলাকারীকে ধরে ফেলেন। রুশদি পাঁচ মিনিট বা তারও বেশি সময় মেঝেতে পড়ে ছিলেন। পরে তাকে হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে নেওয়া হয়।
একজন চিকিৎসক যিনি হামলার পরপর শিটোকোয়া ইনস্টিটিউটিশনে সালমান রুশদীকে চিকিৎসা দিয়েছেন, তিনি নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, তার শরীরে তিনি কয়েকটি ছুরিকাঘাত দেখেছেন। এর মধ্যে একটি আঘাত ছিল ঘাড়ের ডান দিকে। তিনি আরও বলেছেন, মঞ্চে তার শরীরের নীচে অনেক রক্ত জমে ছিল। তিনি তখনো জীবিত বলেই মনে হচ্ছিল।
রিটা ল্যান্ডম্যান নামের এই চিকিৎসক বলেন, “লোকজন চিৎকার করে বলছিল, এখনো তার পালস পাওয়া যাচ্ছে, পালস পাওয়া যাচ্ছে।”
হামলাকারী এখন পুলিশ হেফাজতে আছে। তবে তার পরিচয় এবং কী কারণে এই হামলা চালিয়েছেন সে সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি।
হামলায় সাক্ষাৎকারগ্রহণকারী হেনরি রিসও মাথায় সামান্য আঘাত পেয়েছেন। রিস একটি অলাভজনক সংস্থার সহপ্রতিষ্ঠাতা; যা নিপীড়নের হুমকির মধ্যে থাকা নির্বাসিত লেখকদের জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টি করে।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত এ ঔপন্যাসিক ১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাস দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন; কেবল যুক্তরাজ্যেই এটির ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল।
১৯৮৮ সালে দ্য স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাস লেখার পর থেকে বছরের পর বছর প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছেন রুশদি। রুশদির চতুর্থ উপন্যাস দ্য স্যাটানিক ভার্সেস। এই বই লেখার জন্য রুশদিকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল।
পরাবাস্তববাদী, উত্তর-আধুনিক উপন্যাসটি কিছু মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল; যারা এর বিষয়বস্তুকে নিন্দাজনক বলে মনে করেন। ইরান ও বাংলাদেশসহ কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশে বইটি নিষিদ্ধও করা হয়েছিল।
বইটি প্রকাশের এক বছর পর, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি রুশদির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আহ্বান জানান। তার মাথার জন্য ৩০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন আয়াতুল্লাহ খোমেনি।
তারপরও নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন রুশদি। এক পর্যায়ে ইরান সরকার সরে আসে খোমেনির ডিক্রি থেকে। দ্য স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশনার পর সহিংসতায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ছিলেন উপন্যাসটির অনুবাদকও।
রুশদির ব্রিটিশ এবং আমেরিকান নাগরিকত্ব রয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে একজন সোচ্চার কণ্ঠ তিনি।
২০০৭ সালে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ যখন তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন, তখন ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল ইরান ও পাকিস্তান। পাকিস্তানের একজন মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রী বলেছিলেন, এ সম্মান ‘আত্মঘাতী হামলাকে ন্যায্যতা দেয়’।
এসব হুমকির কারণে রুশদির অনেক অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। পশ্চিম নিউ ইয়র্কের শাটোকোয়া ইনস্টিটিউশনের আয়োজনে তার উপস্থিতি ছিল অলাভজনক একটি সংস্থার আয়োজিত গ্রীষ্মকালীন বক্তৃতা সিরিজে প্রথমবার।
সংস্থাটির অন-সাইট পুলিশ বিভাগের এক মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, এ ঘটনায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
অনুষ্ঠানস্থলের একজন শিল্পী জানান, সকালে অ্যাম্ফিথিয়েটারে হামলার আগ পর্যন্ত রিহার্সালগুলো স্বাভাবিকভাবেই চলছিল। অনুষ্ঠানটি এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/০৮১৩
আপনার মতামত জানানঃ