অপার সম্ভাবনার এ দেশ। এখানে জন্ম নিয়েছেন অনেক জ্ঞানী-গুণী।তারা দেশের সঙ্গে বিশ্বকেও করে গেছেন সমৃদ্ধ। এখনও এ মাটির সন্তানেরা পৃথিবীর দেশে দেশে অনেক দায়িত্বপূর্ণ কাজ, যুগান্তকারী গবেষণায় ব্যস্ত।
কিন্তু সেই দেশের তরুণ প্রজন্মের খবর কী? কিছু অংশ বাদ দিলে দেশের তরুণ সমাজের একটা বড় অংশই আজ নানাভাবে সংকটে নিমজ্জিত। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জায়গায় তরুণরা পাচ্ছে না যথাযোগ্য মর্যাদা, কাজ ও মেধার যথার্থ সম্মান।
মহামারির ধাক্কায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশ্বের তরুণসমাজ। কিন্তু কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে তারা এখনো পিছিয়ে আছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের জন্য শ্রমবাজার আরও কঠিন হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের চেয়ে তারা পিছিয়ে আছেন।
২০২২ সালে এই বয়সী তরুণ বেকারের সংখ্যা ৭ কোটি ৩০ লাখে পৌঁছাতে পারে। তবে ২০২১ সালের চেয়ে তা কিছুটা কম (৭ কোটি ৫০ লাখ)। তবে ২০১৯ সালে প্রাক্-মহামারি সময়ের চেয়ে তরুণ বেকারের সংখ্যা এখনো ৬০ লাখ বেশি।
‘দ্য গ্লোবাল এমপ্লয়মেন্ট ট্রেন্ডস ফর ইয়ুথ’ বা ‘বিশ্বজুড়ে তরুণদের কর্মসংস্থানের প্রবণতা ২০২২’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে আইএলও এসব তথ্য দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) জানিয়েছে, ‘২০২০ সালের প্রথম দিকে সারাবিশ্বে স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর থেকে বয়স্ক কর্মীদের তুলনায় ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ বেকারদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা প্রাক-মহামারির চেয়ে ৬০ লাখ বেশি। আর বাংলাদেশে এ তরুণ বেকারের সংখ্যা ১০ দশমিক ৬ শতাংশ।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে বাংলাদেশি তরুণদের বেকারত্বের হার ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে জাতীয় পর্যায়ে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ হলেও, কোভিড মহামারির কারণে বেকারত্ব উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।’
আইএলও জানিয়েছে, ‘বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৯ দশমিক ১১ শতাংশ তরুণ। কিন্তু তারা যদি তাদের কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধারের চেষ্টা না করে তাহলে বেকারের সংখ্যা আরও বাড়বে। এছাড়া বাংলাদেশে বৈষম্য ও গুণগত শিক্ষার অভাবে তরুণ সমাজের প্রায় ৭৮ শতাংশ মনে করেন পড়াশোনা করে তারা চাকরি পাবেন না। আর ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণের পড়াশোনা বা প্রশিক্ষণ নেই।’
আইএলও’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় চারজন তরুণের মধ্যে একজনের শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই। ২০২২ সালের মধ্যে উচ্চ দেশগুলো প্রাক-মহামারি পর্যায়ে যেতে পারলেও নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এ বছর মধ্যপ্রাচ্যে তরুণ বেকারদের সংখ্যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া ২০২২ সালে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তরুণ জনগোষ্ঠীর বেকারত্বের হার ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশি তরুণদের বেকারত্বের হার ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে জাতীয় পর্যায়ে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ হলেও, কোভিড মহামারির কারণে বেকারত্ব উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।’
আইএলও’র প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, ‘পুরুষদের তুলনায় নারীদের অবস্থা আরও শোচনীয়। ২০২২ সালে সারা বিশ্বে যেখানে পুরুষদের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ সেখানে নারীদের কর্মসংস্থানের ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ হবে।’
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ঐতিহাসিকভাবে, তরুণ নারীদের বেকারত্বের হার পুরুষদের তুলনায় বেশি ছিল, কিন্তু মহামারির কারণে এই প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
আইএলও’র ডেপুটি ডিরেক্টর মার্থা নিউটন জানিয়েছেন, ‘আমরা জানি যে কোভিড-১৯ মহামারিটি বিশ্বজুড়ে যুব শ্রমবাজারে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ প্রথম চাকরিপ্রার্থীরা, স্কুল ড্রপআউট, অল্প অভিজ্ঞতাসহ যারা সাম্প্রতিক স্নাতক শেষ করেছন এবং যারা তাদের সঠিক পছন্দের ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়। রিপোর্ট অনুযায়ী এ নিষ্ক্রিয়তার কারণে বছর শেষে দেখা যাবে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ তরুণ কর্মীরা এখনো কাজের সন্ধান করছেন।’
এদিকে জাতিসংঘের শ্রম সংস্থা সমস্যা সমাধানে টেকসই বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন। ডিজিটাল টেকনোলজিতে টার্গেটেড বিনিয়োগেও প্রচুর সংখ্যক তরুণ কর্মীকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া যাবে। এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে সার্বজনীন ব্রডব্যান্ড কভারেজ অর্জনের মাধ্যমে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৪ মিলিয়ন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা যেতে পারে, যাদের মধ্যে ৬.৪ মিলিয়ন যুব কর্মী থাকবে বলে জানিয়েছে আইএলও।
বিশ্লেষকরা বলেন, ‘দেশে কর্মসংস্থানবিহীন প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এ রকম প্রবৃদ্ধি আরো বৈষম্য সৃষ্টি করবে। বৈষম্য থাকলে সমাজ টেকসই হয় না। জনগোষ্ঠীর বিরাট একটি অংশ চাকরির বাজারের বাইরে থাকলে তাদের অবদান থেকে সমাজ বঞ্চিত হয়। শুধু তারাই নয়, অর্থনীতিও বঞ্চিত হয়। কোনো না কোনো সময় গিয়ে সেই প্রবৃদ্ধি আর ধরে রাখা সম্ভব হয় না।’
ডিজিটাল বৈষম্যও বাড়ছে উল্লেখ করে তারা বলেন, যারা উচ্চ আয়ের মানুষ তারাই বেশি ডিজিটাল সুবিধা পাচ্ছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের স্বার্থে সামগ্রিক ডিজিটাল বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে নজর দিতে হবে।
তারা বলেন, ‘ডিজিটাল প্রযুক্তির যত প্রসার ঘটছে, বৈষম্যও তত বাড়ছে। যেকোনো প্রযুক্তির বিকাশের প্রথম পর্যায়ে এই বৈষম্য থাকবে। কিন্তু ডিজিটাল বৈষম্য কমানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫৭
আপনার মতামত জানানঃ