দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি সংকট, মুদ্রাস্ফীতি- সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কা এখন এমন অবস্থায় যে প্রধানমন্ত্রীও আপাতত কোনো আশার আলো দেখছেন না৷ দেশের নাগরিকদের মাঝেও মহামারির মতো ছড়াচ্ছে দেশ ছাড়ার প্রবল ইচ্ছা৷
মে মাসে শ্রীলঙ্কার কলম্বো শহরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর মীনু মেকালা ও নিরোশ রবীন্দ্র তাদের দুই ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে একটি পুরোনো ট্রলারে চার হাজার ৭০০ কিলোমিটারের সমুদ্রযাত্রা করেছিলেন। এর জন্য তাদের পরিবারের সব সঞ্চয় খরচ করতে হয়েছিল তাদের। কিন্তু সব অর্থ খুইয়েছিলেন তারা।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মিনু আর খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী নিরোশ দুবাইতে অভিবাসী শ্রমিক হিসাবে কাজ করেছিলেন। ওই সময় তাদের দুজনের প্রেম হয়। পারিবারিক বিরোধিতা সত্ত্বেও ২০০৫ সালে কলম্বো থেকে উত্তরে কুদামাদুওয়েলায় নিরোশের গ্রামের বাড়িতে দুজনের বিয়ে হয়। মে মাসে দেশে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হওয়ার পর শত শত শ্রীলঙ্কান মাছ ধরার নৌকায় করে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মীনু-নিরোশ দম্পতি।
শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত তিন মাসে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টায় প্রায় এক হাজার লোক, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। শ্রীলঙ্কার জলসীমাতে তাদের অনেককে আটক করা হয়। অবৈধভাবে দেশ ত্যাগ করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে শ্রীলঙ্কা সরকার।
মীনু ও নিরোশের মতো কেউ কেউ অস্ট্রেলিয়ার জলসীমায় পৌঁছেছিল। কিন্তু সেখানেই তারা আটক হন এবং দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ তাদের বিচার শুরু করে। মীনুর জামিন মঞ্জুর হলেও এখনও কারাগারে আছেন নিরোশ।
গত তিন মাসে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টায় প্রায় এক হাজার লোক, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।
করোনা মহামারির কারণে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির প্রধান খাত পর্যটন শিল্প ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের সরকার কর হ্রাস করায় দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে দেশটি। প্রবল বিক্ষোভের মুখে জুলাই মাসে রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
শ্রীলঙ্কা থেকে সবচেয়ে সহজ ভারতে চলে যাওয়া৷ তাই নৌকায় চড়ে ভারতে যাচ্ছেন অনেকে৷।২৭ জুন ভারতের এক সমুদ্র সৈকত থেকে প্রবীণ এক দম্পতিকে উদ্ধার করা হয়৷ দীর্ঘক্ষণ নৌকা চালানোয় পানি-শূন্যতা দেখা দিয়েছিল৷ তার সঙ্গে ভীষণ ক্লান্তি যোগ হওয়ায় দুজনই চলে যান মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে৷ অচেতন অবস্থায় দুজনকেই হাসপাতালে নেয়া হলেও বেশি কাহিল হয়ে পড়া নারীকে আর বাঁচানো যায়নি৷ চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ২ জুলাই মারা যান তিনি।
এভাবে নৌকায় চড়ে ইতিমধ্যে ৯০ জনেরও বেশি মানুষ শ্রীলঙ্কা থেকে ভারতে প্রবেশ করেছেন৷ আপাতত এক শরণার্থী শিবিরে রাখা হয়েছে তাদের৷
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এত প্রতিকূল যে অনেকেই যত দ্রুত সম্ভব দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন৷ অনেকে আগে সন্তানদের অন্য দেশে পাঠাচ্ছেন পড়াশোনা করতে৷ খুব স্বচ্ছল নয় এমন পরিবারের সন্তানরা যাচ্ছেন ভারতে৷ স্বচ্ছল পরিবারগুলো ইউরোপ,অ্যামেরিকায় সপরিবারে যাওয়ার চেষ্টা করছেন৷ পরিবারের সবার যেতে দেরি হবে মনে হলে সন্তানদের পাঠাচ্ছেন সেরকম দেশগুলোতে৷
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫৮
আপনার মতামত জানানঃ