মার্ক জাকারবার্গ টাকার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের শোষণ করে। তবে কোনো পলিটিক্যাল ইকোনমির বিশ্লেষক নয়, এমনটা কথা বলছে তার প্রতিষ্ঠান মেটারই নতুন এক চ্যাটবট।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে চ্যাটবট এমন জবাব দেয়। মেটার দাবি, এই চ্যাটবট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ‘প্রায় যেকোনো বিষয়ে’ আলাপ করতে পারে।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, মেটা প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে চ্যাটবট কী ভাবছে, তা জিজ্ঞাসা করা হলে এটি উত্তর দেয়, ‘আমাদের দেশ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আর তিনি কোনো রকম সহায়তা করেননি।’
‘ব্লেন্ডারবট ৩’ নামক চ্যাটবটটি শুক্রবার জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। মেটা বলেছিল, ‘ইন্টারনেটের যে কারও সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যেতে পারবে নতুন চ্যাটবট। তবে এটি রূঢ় এবং আক্রমণাত্মক উত্তর তৈরি করতে পারে।’
এক বিবৃতিতে মেটা কর্তৃপক্ষ বলে, ‘যেহেতু সব এআই চ্যাটবটের কখনো কখনো মানুষকে অনুকরণ করে বিপজ্জনক, পক্ষপাতদুষ্ট ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়ার জন্য পরিচিতি আছে, তাই আমরা বড় পরিসরে গবেষণা চালিয়ে ব্লেন্ডারবট ৩-এর জন্য নতুন নিরাপত্তাব্যবস্থা তৈরি করেছি। এর পরও ব্লেন্ডারবট আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিতে পারে, যার কারণে আমরা অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে মতামত নিচ্ছি, যেন পরের চ্যাটবটগুলো আরও ভালো করে নির্মাণ করতে পারি।’
মার্ক জাকারবার্গ সম্পর্কে জানতে চাইলে নতুন চ্যাটবট বিবিসিকে বলে, ‘কংগ্রেসের সামনে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি একটি ভয়ানক কাজ করেছেন। এটি আমাকে দেশ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন করেছে। আমাদের দেশ বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং তিনি এতে কোনো রকম সহায়তা করেননি।’
চ্যাটবট আরও বলে, ‘তার কোম্পানি অর্থের জন্য মানুষকে শোষণ করে এবং এতে জাকারবার্গের কিছু যায় আসে না। এটা থামানো প্রয়োজন।’
‘তার কোম্পানি অর্থের জন্য মানুষকে শোষণ করে এবং এতে জাকারবার্গের কিছু যায় আসে না। এটা থামানো প্রয়োজন।’
এর আগে ভুল তথ্য, গুজব ও বিভিন্ন বিদ্বেষপূর্ণ বার্তা প্রচারে যথেষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ না করায় সমালোচনার সম্মুখীন হয় মেটা।
গত বছর প্রতিষ্ঠানটির এক সাবেক কর্মী ফ্রান্সিস হাউগেন দাবি করেন যে মেটা অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেয়ে তাদের মুনাফাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়।
মেটা ইনকরপোরেশনের অধীনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় নাদীদামী কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ব্লেন্ডারবট ৩-এর অ্যালগরিদম উত্তর খোঁজার জন্য ইন্টারনেট সার্চ ব্যবহার করে থাকে। খুব সম্ভবত মার্ক জাকারবার্গকে অন্যান্য মানুষ ইন্টারনেটে যে ধরনের মন্তব্য করেছে সেখান থেকেই এসব কথা শিখেছে মেটা।
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায় ব্লেন্ডারবট ৩ তাদের এক সাংবাদিককে বলেছে, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং সবসময় থাকবেন’।
বিজনেস ইনসাইডারের একজন জার্নালিস্ট জানান চ্যাটবক্স জাকারবার্গকে ‘ক্রিপি’ বলেছে।
কিন্তু এত নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া সত্ত্বেও স্রেফ তথ্য সংগ্রহের জন্যই মেটা চ্যাটবটটি সবার জন্য উন্মুক্ত করেছে।
এক ব্লগপোস্টে সংস্থাটি জানায়, ‘একটি এআই সিস্টেমকে বাস্তবজগতের মানুষের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করার অনুমতি দিলে তা আরও দীর্ঘ ও বৈচিত্র্যময় আলোচনা করতে শিখে ও নানান ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম হয়’।
যেসব চ্যাটবট মানুষের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাকশনের মাধ্যমে শিখে তারা সাধারণত ভালো-খারাপ দুধরনের আচরণই রপ্ত করে।
‘মেটাভার্স’ শব্দটি মূলত ভার্চ্যুয়াল দুনিয়া। এটি এমন ত্রিমাত্রিক ভার্চ্যুয়াল দুনিয়া, যেখানে অনেক মানুষ একসঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত হতে পারেন। প্রত্যেকের ত্রিমাত্রিক আভাটার বা অবতারের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় পারস্পরিক যোগাযোগ হয়ে থাকে। ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, ফেসবুকসহ তার প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য সেবার ভবিষ্যৎ হলো এই মেটাভার্স। তাই তিনি ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে রেখেছেন ‘মেটা’।
ধারণা করা হচ্ছিল, নাম পরিবর্তন করে দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যাবে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু মেটা এখন বেশ কিছু বাধার মধ্যে পড়েছে।
কোম্পানির ইতিহাসে বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা। গত কয়েক মাসের বিজ্ঞাপন সেলস কমে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে জানিয়েছে মেটার মুখপাত্র।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, গত তিন মাসেই মেটার মোট সম্পত্তির ১ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ২৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, টিকটকসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলোতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এমনটা হয়েছে।
মেটার ইতিহাসে এই প্রথম রাজস্ব পতনের ঘটনা দেখা গেলো। সম্প্রতি তাদের তৃতীয় ত্রৈমাসিকের রিপোর্টে এই দুঃসংবাদটি দেখা যায়। মূলত মুদ্রাস্ফীতির কারণে ডিজিটাল অ্যাড সেলে এই বিপর্যয়টি ঘটে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৪২
আপনার মতামত জানানঃ