
এমন এক বিশ্বের কথা ভেবে দেখুন, যেখানে একটি কোম্পানি তাদের নতুন মডেলের একটি গাড়ি তৈরির পর সেটা অনলাইন বাজারে ছেড়ে দিলো। একজন ক্রেতা হিসেবে আপনি বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে গাড়িটি চালিয়ে দেখতে পারলেন।
বিষয়টা হয়তো বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে নির্মিত সাই-ফাই মুভির মতো মনে হচ্ছে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে এখন আর সেটা কল্পনার পর্যায়ে থাকছে না। এরকম এক প্রযুক্তি তৈরির কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এই প্রযুক্তির ফলে অনলাইনের ভার্চুয়াল জগৎ মনে হবে সত্যিকারের বাস্তব পৃথিবীর মতো। তবে মেটাভার্স নিয়ে নানা ধরনের নতুন নতুন অপরাধের শঙ্কায় আছে ইন্টারপোল। রয়টার্সের খবর
আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল আশঙ্কা করছে যে ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি মেটাভার্সের কারণে নতুন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হবে। পাশাপাশি বিদ্যমান অপরাধগুলোও আরও বড় পরিসরে ঘটবে।
ইন্টারপোলের টেকনোলজি ও ইনোভেশনের নির্বাহী পরিচালক মদন ওবেরয় বলেছেন, মেটাভার্সে সম্ভাব্য অপরাধগুলো দমনে কিভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায় তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইন্টারপোলের সদস্য দেশগুলো।
তিনি বলেন, মেটাভার্সের মাধ্যমে কিছু নতুন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে পারে, কিছু বিদ্যমান অপরাধ নতুন মাত্রা পেতে পারে।
ওবেরয় বলেন, ফিশিং এবং স্ক্যামের ধরন বদলে যেতে পারে। শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটে বাস্তব জগতে অপরাধকে আরও সহজ করে তুলতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।
তিনি বলেন, কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যদি কোথাও হামলা করার পরিকল্পনা করে তবে তারা ভার্চুয়াল রিয়েলিটের মাধ্যমে তারা আগে অনুশীলন করতে পারে।
কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যদি কোথাও হামলা করার পরিকল্পনা করে তবে তারা ভার্চুয়াল রিয়েলিটের মাধ্যমে তারা আগে অনুশীলন করতে পারে।
চলতি বছরের শুরুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ইউরোপোল একটি প্রতিবেদনে বলেছে যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো ভবিষ্যতে নানা কাজে ভার্চুয়াল রিয়েলেটি ব্যবহার করতে পারে। উগ্রবাদী নিয়ম দিয়ে কেউ কেউ আলাদা একটা ভার্চুয়াল বিশ্বও তৈরি করতে পারে।
২০২১ সাল থেকে মেটাভার্স শব্দটা প্রযুক্তি বিশ্বে পরিচিত হয়ে ওঠে। ধারণা করা হচ্ছে ভার্চুয়াল রিয়েলেটে দ্রুতই জনপ্রিয়তা পাবে এবং ইন্টারনেটের বিকাশে নতুন মাত্রা আনবে মেটাভার্স। ২০২১ সালের অক্টোবরে ফেসবুকও তার নাম বদলে মেটা করে। ফেসবুকের এই নামবদলও মেটাভার্সের ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়।
ডিজিটাল পৃথিবী এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি নিয়ে মাঝে মধ্যেই জোরেশোরে আলোচনা শুরু হয়। আবার কিছুদিন পর সেই উত্তেজনা হারিয়েও যায়। তবে এবার প্রযুক্তি খাতের বিনিয়োগকারী ও কোম্পানিগুলোর মধ্যে মেটাভার্স নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। যেহেতু এই প্রযুক্তি ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ হয়ে উঠছে সে কারণে কেউ এই দৌড়ে পিছিয়ে পড়তে চায় না।
এর কারণ এই প্রথমবারের মতো এমন একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে প্রযুক্তিবিদরা মেটাভার্স প্রযুক্তি আবিষ্কারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। ভিআর গেমিং এবং ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের উন্নতির কারণেই এই ধারণা তৈরি হয়েছে। ফেসবুক যেসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সেই তালিকার উপরের দিকেই রয়েছে মেটাভার্স প্রযুক্তি। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রধান মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই তার প্রতিষ্ঠান মেটাভার্স প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
মেটাভার্সের মাধ্যমে গোটা দুনিয়া চলবে। তাই সেই দুনিয়ায় নিজের শক্তিশালী আবস্থান তৈরি করতে এখনই কোম্পানির নাম বদল করে মেটা রেখেছে ফেসবুক। এর আগে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কোম্পানি অকুলাসও কিনে নিয়েছে ফেসবুক।
‘মেটাভার্স’ শব্দটি প্রযুক্তি শিল্পের কল্পনার জগতে সর্বশেষ আলোড়ন তোলা একটি শব্দ। মেটাভার্সের ধারণা এতটাই আলোড়ন তুলেছে যে, সবচেয়ে বিখ্যাত ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মগুলো একে আলিঙ্গন করার জন্য নিজেদের রিব্র্যান্ডিং করছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮১৪
আপনার মতামত জানানঃ