মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফর করতে পারেন-এমন জল্পনা কয়েক সপ্তাহ থেকে চাউর হতে থাকে। এই নিয়ে চীনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। চীন হুমকি দেয়, পেলোসি তাইওয়ান সফর করলে চীন হাত গুঁটিয়ে বসে থাকবে না।
তবে চীনের সকল হুমকি, হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে গত মঙ্গলবার তাইওয়ান সফরে যান পেলোসি। এরপরই চীনের সঙ্গে তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা প্রবল হতে থাকে। পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর চীনের অন্তত ২৭টি যুদ্ধবিমান দেশটির প্রতিরক্ষা অঞ্চলের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে। একইসঙ্গে তাইওয়ানের চারদিকে সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। এছাড়া দূরপাল্লার একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে চীন।
এদিকে তাইওয়ান জানিয়েছে, তারা মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের জন্য সতর্ক অবস্থান করছে। চীনের মহড়ার কারণে দেশটিতে ৫০টির বেশি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মহড়ায় তাইওয়ানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় উপকুলে দুটি চীনা ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। তাইওয়ান সরকারের সূত্রের বরাত দিয়ে এমন খবর দিচ্ছে রয়টার্স। মহড়ায় ‘লাইভ অ্যামিউনিশন’ বা তাজা গোলাবারুদ ব্যবহার করছে চীন।
দ্বীপটির আশপাশে মোট ছয়টি এলাকায় চীন মহড়া চালাচ্ছে, যার তিনটি পড়েছে তাইওয়ানের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে।
এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে পেলোসির এই সফরের কারণে দেশ দুইটির মধ্যে কি যুদ্ধ লেগে যেতে পারে।
এদিকে চীনের এই সামরিক মহড়াকে জাতিসংঘের নিয়মের লঙ্ঘন, তাইওয়ানের সীমানায় আগ্রাসন এবং মুক্ত সমুদ্র ও আকাশসীমার জন্য সরাসরি হুমকি বলে অভিহিত করেছেন তাইওয়ানের কর্মকর্তারা। তাইওয়ানের ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টিও চীনের এই সামরিক মহড়ার প্রতিবাদ জানিয়েছে।
দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যস্ত একটি আন্তর্জাতিক জল ও আকাশসীমায় মহড়া চালাচ্ছে চীন। একে বেইজিংয়ের দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অবৈধ আচরণ বলে অভিহিত করেছে দলটি।
তাইওয়ানের চারদিকে সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। এছাড়া দূরপাল্লার একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে চীন।
এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, তাইওয়ানকে ঘিরে চীনের মহড়া শুরুর পরিপ্রেক্ষিতে সংযম ধরণের আহ্বান জানিয়েছে আসিয়ান। বর্তমানে কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে চলমান আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে আসিয়ান নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এ ঘটনায় সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে চীনের ‘কৌশলগত’ মহড়ার মধ্যেই তাইওয়ানের দক্ষিণ-পূর্বে সমুদ্রের দিকে যাচ্ছে মার্কিন বাহিনীর রণতরী ইউএস রোনাল্ড রিগ্যান। বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর মুখপাত্র। রণতরীর উপস্থিতিতে অঞ্চলটিতে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, রণতরী এবং এর স্ট্রাইক গ্রুপ মুক্ত ও স্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সমর্থনে দক্ষিণ চীন সাগরে নির্ধারিত অপারেশনে যাচ্ছে।
রোনাল্ড রিগ্যানের নেতৃত্বে থাকা কমান্ডার জর্জ এম উইকোফ বলেন, ‘এ অভিযান অঞ্চলটির নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা অর্জনে আমাদের প্রতিশ্রুতির বিষয়ে সহযোগিতা এবং মিত্রদের কাছে একটি সংকেত’।
তাইপে পেলোসির সফরের জেরে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে তাইওয়ানের চারপাশের সাগরে সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। মহড়া চলবে আগামী রবিবার পর্যন্ত। চীনের গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে ‘পুনর্মিলন অপারেশন’-এর জন্যই এই পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত তাইওয়ানকে নিজেদের অবিচ্ছিন্ন অংশ বলে দাবি করে চীন। তারা তাইপেকে বিশ্ব মঞ্চ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে চায়। এছাড়া তাইপের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যেকোনও দেশের যোগাযোগের বিরোধিতা করে আসছে বেইজিং।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো মাইকেল ও’হ্যানলন বলেন, সরাসরি যুদ্ধ কারো স্বার্থেরই অনুকুল হবে না।
তবে তিনি বলেন, “এরকম কোন যুদ্ধ কোনদিকে মোড় নেবে তা কেউ বলতে পারে না, এটা খুব সহজেই বৈশ্বিক চেহারা নিয়ে নিতে পারে, পারমাণবিক হুমকিও তৈরি হতে পারে।”
ও’হ্যানলন বিবিসিকে বলেন, “চীন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ, কিন্তু রাশিয়ার মত গুরুতর হুমকি নয়।”
তার কথা, ভ্লাদিমির পুতিন এটা দেখিয়েছেন যে তিনি তার লক্ষ্য অর্জনে বিরাট ঝুঁকি নিতে পারেন-কিন্তু “আমার মনে হয়না তাইওয়ানের ব্যাপারে একান্ত বাধ্য না হলে চীন সেরকম কোন পথ নেবে ।”
এদিকে ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবি বলেছেন, চীনের হুমকি ও বাগাড়ম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ভীত হবে না।
তিনি আরও বলেন, চীন তাইওয়ানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংঘর্ষে জড়াতে পারে এবং চীন-মার্কিন সম্পর্ক নির্ভর করবে চীনের ভবিষ্যৎ আচরণের ওপর।
চীন তাইওয়ানকে তার নিজের অংশ বলে মনে করে এবং বিভিন্ন সময় তারা “প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও” দ্বীপটিকে পুনর্দখল করার কথা বলেছে। কিন্তু তাইওয়ান নিজেদের একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩৬
আপনার মতামত জানানঃ