স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এপিএস এ এইচ এম ফোয়াদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা হয়েছে। বুধবার (০৩ আগস্ট) রাতে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের এসআই বিচিত্রা রানী বিশ্বাস বাদী হয়ে মামমাটি করেন।
পুলিশ জানায়, ফোয়াদের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৪৪ লাখ ৯৫ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধনী ২০১৫ এর ৪(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, এ এইচ এম ফোয়াদ ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছত্রছায়ায় থেকে ফরিদপুরের সাজ্জাদ হোসেন বরকত এবং ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের সহায়তায় হেলমেট বাহিনী গঠন করেন। এই বাহিনী দিয়ে এলজিইডি, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, গণপূর্ত বিভাগ, বিএডিসি, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করতেন। এ ছাড়া বিভিন্ন চাকরিতে নিয়োগে মন্ত্রীর সুপারিশ করিয়ে দেওয়ার কথা বলে অবৈধভাবে বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল বলেন, ফোয়াদের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৪৪ লক্ষ ৯৫ হাজার ৫৮৬ টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা হয়েছে। সিআইডির করা মামলাটির তদন্তও করবে সিআইডি।
এ এইচ এম ফোয়াদ (৫২) ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার বিলনালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। তবে পরে তাকে ওই পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাকে ২০১৬ সালের ১২ জুলাই ফরিদপুর শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় এলাকায় ছোটন বিশ্বাস হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি (পরে বহিষ্কৃত) ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের বিরুদ্ধে সিআইডির করা দুই হাজার কোটি টাকা পাচার মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি ফোয়াদ। ওই মামলা এবং ছোটন বিশ্বাস হত্যা মামলা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা রয়েছে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায়।
এ এইচ এম ফোয়াদের বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলা, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামচুল আলমের ওপর হামলা, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক দীপক মজুমদারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও সরকারি চাল আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ফোয়াদের বিরুদ্ধে যে আটটি মামলা রয়েছে, তার মধ্যে সাতটি মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি এ এইচ এম ফোয়াদ। এর মধ্যে তিনটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে মিস-ইনভয়েসিং, হুন্ডি, বাল্ক ক্যাশ ট্রান্সফার ইত্যাদি বহু মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে থাকে। এ তালিকায় রাজনীতিবিদ ব্যবসায়ী চাকরিজীবী থেকে শুরু করে অনেকেরই নাম রয়েছে। তবে বিদেশে অর্থপাচারের সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় রয়েছে সরকারি চাকরিজীবীরা।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গণতন্ত্র ও সুশাসনের অভাব, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া, আর রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে প্রতি বছর দেশ থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থ পাচার হচ্ছে। এর ফলে সরকারের রাজস্ব কর আহরণ কমে আসায় সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রত্যাশিত বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না।
দেশ থেকে ক্রমাগতভাবে অর্থপাচারের ঘটনা নতুন নয়। দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে পাচারকারিরা প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। এর কোনো প্রতিকার নেই এবং কার্যকর কোনো উদ্যোগও লক্ষ্যণীয় নয়। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, জাতীয় নির্বাচনের বছরে অর্থ পাচার লাগামহীন হয়ে পড়বে। পাচারের সঙ্গে জড়িতরা কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতাসীনদের সাথে সম্পৃক্ত। ফলে কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন না হওয়ায় তারা নির্বাধে টাকা পাচার করে দিতে পারছে। দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অর্জিত এসব অর্থ পাচার ঠেকাতে এনবিআর, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪১৯
আপনার মতামত জানানঃ