বিশ্বজুড়ে চলতি বছর রেকর্ডসংখ্যক সাংবাদিককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ০১ ডিসেম্বর নাগাদ অন্তত ২৭৪ জন সাংবাদিক বিভিন্ন দেশের কারাগারে আটক রয়েছেন। করোনা মহামারির সংবাদ, ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি কিংবা গণবিক্ষোভ নিয়ে প্রতিবেদন করায় এসব সাংবাদিককে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা নিউইয়র্কভিত্তিক এ সংস্থাটি ১৯৯০ সাল থেকে সাংবাদিকদের কারাবাসের উপাত্ত সংগ্রহ করছে। তিন দশকের মধ্যে এ বছরই সবচেয়ে বেশি সাংবাদিক গ্রেফতার ও কারাবাসের শিকার হয়েছেন। গত বছর কারাবন্দি ছিলেন অন্তত ২৫০ জন সাংবাদিক। সিপিজে জানায়, ‘মিথ্যা সংবাদ’ প্রচারের অভিযোগে ২০২০ সালে ৩৪ জন সাংবাদিককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত বছর এ অভিযোগে ৩১ জনকে পাঠানো হয়েছিল। প্রতিবেদনটি সরাসরি পড়তে ক্লিক করুন এখানে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারীর মধ্যে কর্তৃত্ববাদী শাসকরা সংবাদ প্রকাশ নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকদের গ্রেফতার করেছে। অন্তত দুজন সাংবাদিক কারাগারে করোনা সংক্রমণে মারা গেছেন। বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে অধিকাংশ সাংবাদিক গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন। তাদের অধিকাংশ চীন, তুরস্ক, মিসর ও সৌদি আরবের। ডিসেম্বর নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সাংবাদিক কারাগারে না থাকলেও বর্ণবাদবিরোধী ও পুলিশি নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় ১১০ জনকে আটক করা হয়েছিল। তবে বাংলাদেশের মতো অনেক দেশে করোনার ত্রাণ দুর্নীতির খবর প্রকাশ করে কারাবাসের শিকার হতে হয়েছে সাংবাদিকদের।
সিপিজের নির্বাহী পরিচালক জোয়েল সিমন এক বিবৃতিতে জানান, এটা বেদনাদায়ক ও আতঙ্কজনক যে আমরা বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যে রেকর্ডসংখ্যক সাংবাদিককে কারারুদ্ধ হতে দেখেছি। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ লালনে বৈশ্বিক নেতৃত্বের অভাব এবং গণমাধ্যমের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আঘাত এতে প্রভাব ফেলেছে। স্বৈরাচারী সরকারগুলো ট্রাম্পের আচরণে আসকারা পেয়েছে।
যে দেশগুলোতে অধিক সাংবাদিক কারাগারে গিয়েছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেলারুশ। বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ফলাফল বাতিলে এবং প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর পদত্যাগের দাবিতে যে আন্দোলন হয়, তার কাভারেজ দিতে গিয়ে অনেক সাংবাদিক আটক হয়েছেন। আরেকটি দেশ হচ্ছে হর্ন অব আফ্রিকা ইথিওপিয়া। সেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে বিদ্রোহী ও সরকারি সেনাদের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ বাধে।
সিপিজের প্রতিবেদনে বলা হয়, কারাগারে পাঠানো দুই-তৃতীয়াংশ সাংবাদিকের বিরুদ্ধেই সন্ত্রাসবাদে সহায়তা বা নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ার মতো রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রায় ২০ শতাংশ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ রয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশেও করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্যখাতে অব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসামগ্রী চুরি ও আত্মসাতের খবর প্রচার করে এবং এ বিষয়ে ফেসবুকে লেখার অপরাধে সাংবাদিকরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার শিকার হয়েছেন। তাদের কেউ পালিয়ে বেড়িয়েছেন, কেউ কারাগারে আটক রয়েছেন। ঠাকুরগাঁওয়ের সাংবাদিক আল মামুন জীবনকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে প্রায় ছয় মাস। হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে তিনি এখন এলাকায় অবস্থান করছেন। অন্যদিকে ঢাকাভিত্তিক সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল এখনো কারাগারে বন্দি। তিনি গুমের শিকারও হয়েছিলেন।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০২০ সালে মুক্ত সাংবাদিকতায় আরও এক ধাপ পিছিয়ে গেছে। ৩ মে মুক্ত সাংবাদিকতা দিবস উপলক্ষে তাদের দেওয়া প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫১। দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে যা সর্বনিম্ন। এমনকি পাকিস্তান (১৪৫) ও আফগানিস্তানের অবস্থানও বাংলাদেশের উপরে (১২২)।
এসডাব্লিউ/বিবি/আরা/১৩৩০
আপনার মতামত জানানঃ