মহাকাশ, মহাজাগতিক ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই, জানার চেষ্টারও শেষ নেই মানুষের। নানা সময়ে নানা কিছু তাই সামনে আসে আমাদের।
পৃথিবীর বাইরে কি কোনও জীবন রয়েছে? বিজ্ঞানীরা ভিনগ্রহে জীবনের অনুসন্ধান করেই চলেছেন নিরন্তর। সেজন্য মানুষ মঙ্গল গ্রহসহ আরও আরও গ্রহে নিয়ে গিয়েছে তাদের অনুসন্ধান প্রক্রিয়া।
ভিনগ্রহে কি পৃথিবীর মতো প্রাণ আছে? তা নিয়ে গবেষণার শেষ নেই। ভিনগ্রহে পানির অস্বিত্ব খুঁজেই চলেছে নাসা। পানি থাকলেই থাকবে প্রাণ, এমন একটা সম্ভাবনা নিয়েও নানা গবেষণা চলেছে। কিন্তু এরই মধ্যে নাসার হাতে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এক ছবি। সেই ছবি বার্তা দিচ্ছে ভিনগ্রহে প্রাণ থাকলেও থাকতে পারে।
প্রথমবারের মতো ভিনগ্রহে পানির সন্ধান পেয়েছে নাসার পাঠানো জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। এক হাজার আলোকবর্ষেরও বেশি দূরে একটি গ্রহে এ পানির সন্ধান পাওয়া গেছে।
নাসার ঘোষণায় বিশ্ব জুড়ে হৈ-চৈ ফেলে দিয়েছে। কেননা, এ গ্রহে পানি থাকা মানেই সেখানে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এই গ্রহে ভবিষ্যতে মানুষের বসতি স্থাপনের সম্ভাবনা তৈরি হলো।
সন্ধান পাওয়া এই গ্রহটির নাম রাখা হয়েছে ডব্লিউএসপি-৯৬। মিল্কি ওয়ে নামের যে ছায়াপথে পৃথিবীর অবস্থান, ডব্লিউএসপি-৯৬ নামের এই গ্রহটিও সেই একই ছায়াপথের। এখন পর্যন্ত মিল্কি ওয়ে ছায়াপথের ৫ হাজারটি গ্রহের সন্ধান পেয়েছে নাসা।
নাসার বিবৃতিতে বলা হয়, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী এই গ্রহটির আকাশে পানিভর্তি মেঘ ও কুয়াশা রয়েছে। এই প্রথম পৃথিবীর বাইরের কোনো গ্রহে পানির সন্ধান পাওয়া গেল।
একই ছায়াপথে অবস্থান হলেও পৃথিবী থেকে বেশ দূরে ডব্লিউএসপি-৯৬। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের হিসেব অনুযায়ী, পৃথিবী থেকে ১ হাজার ১৫০ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে এই গ্রহটি। অর্থাৎ, পৃথিবী থেকে আলোর গতিবেগে ছুটলে ডব্লিউএসপি-৯৬ তে পৌঁছাতে সময় লাগবে ১ হাজার ১৫০ বছর।
আলোর গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৮৬ হাজার ২৮৫ কিলোমিটার।
নাসার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ডব্লিউএসপি-৯৬ গ্রহ হলেও এটিতে মাটি, পাথর বা কোনো কঠিন বস্তুর অস্তিত্ব নেই। সৌরজগতের গ্রহ শনি, বৃহস্পতি ও ইউরেনাসের মতো এটিও বিশাল, উত্তপ্ত ও স্ফীত একটি গ্যাসের গোলাক। গ্রহটির তাপমাত্রা ৫৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী এই গ্রহটির আকাশে পানিভর্তি মেঘ ও কুয়াশা রয়েছে। এই প্রথম পৃথিবীর বাইরের কোনো গ্রহে পানির সন্ধান পাওয়া গেল।
নাসার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গ্রহ হিসেবে এখন পর্যন্ত ডব্লিউএএসপি–৯৬বিকে বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে এ টেলিস্কোপ দিয়ে। এ থেকে দূরবর্তী পৃথিবীসদৃশ গ্রহটির বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করার জন্য এ টেলিস্কোপের অভূতপূর্ব সক্ষমতা লক্ষ করা গেল। আমাদের এই আকাশগঙ্গার ছায়াপথে এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি গ্রহ শনাক্ত হয়েছে।
নাসার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দক্ষিণ-আকাশের নক্ষত্রমণ্ডল ফিনিক্সে অবস্থিত এই গ্রহটির সঙ্গে আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলোর সরাসরি কোনো সাদৃশ্য নেই। এর ভর আমাদের বৃহস্পতি গ্রহের অর্ধেকেরও কম এবং ব্যাস ১ দশমিক ২ গুণ বেশি। এটি আমাদের সৌরজগতের যেকোনো গ্রহের চেয়ে বেশি স্ফীত। এখনকার তাপমাত্রা ৫৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি, যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতির চেয়েও ১ দশমিক ২ গুণ বড় এই ডব্লিউএসপি-৯৬। তবে গ্রহটির ভর বৃহস্পতির ভরের থেকে অর্ধেকেরও কম। সূর্যের মতো দেখতে একটি নক্ষত্রকে ঘিরে ঘুরছে এই গ্রহটি। ওই নক্ষত্রটি থেকে ডব্লিউএসপি-৯৬ গ্রহটির দূরত্বও বেশ কম।
আমাদের সৌরজগতে সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ বুধ। যে নক্ষত্রটিকে কেন্দ্র কেন্দ্র করে ডব্লিউএসপি-৯৬ ঘুরছে, সেটির থেকে গ্রহটির দূরত্ব সূর্য থেকে বুধের দূরত্বের নয়ভাগের একভাগ। পৃথিবীর হিসেবে নক্ষত্রটির চারদিকে একবার ঘুরে আসতে ডব্লিউএসপি-৯৬’র সময় লাগে সাড়ে ৩ দিন।
নাসার বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিশাল আকৃতি, সংক্ষিপ্ত কক্ষপথ, স্ফীত বায়ুমণ্ডল ও মহাজাগতিক দূষণ থেকে মুক্ত ডব্লিউএসপি-৯৬’ বায়ুমন্ডল বিষয়ক পর্যবেক্ষণের জন্য একটি আদর্শ গ্রহ।’
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও বৃহত্তম টেলিস্কোপ জেমস ওয়েব। এটি নাসা, ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ও কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির বানানো। এই টেলিস্কোপ তৈরি করা হয়েছে দূর মহাকাশে, মহাবিশ্বের শুরুর দিকে গ্যালাক্সি সৃষ্টির সময়কে দেখার জন্য। সম্প্রতি এ টেলিস্কোপ মহাকাশের ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগের অবস্থা ধারণ করে।
এর আগে হাবল টেলিস্কোপ ব্যবহার করে দুই দশক ধরে অসংখ্য গ্রহের বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ২০১৩ সালে পানির পরিষ্কার অস্তিত্বের কথাও জানানো হয়েছে। তবে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে আরও বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ পাওয়া সম্ভব হওয়ায় পৃথিবীর বাইরে সম্ভাব্য বাসযোগ্য গ্রহ চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে বলে মনে করছে নাসা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২০৩
আপনার মতামত জানানঃ