সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে একজন সাইকোপ্যাথ ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন দেশটির সাবেক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে অসীম সম্পদওয়ালা মধ্যপ্রাচ্যের একজন সাইকোপ্যাথ, হত্যাকারী সম্পর্কে সতর্কবার্তা দিতে এসেছি, যিনি (মোহাম্মদ বিন সালমান) তার দেশের জনগণ, আমেরিকান ও এই গ্রহের জন্য হুমকিস্বরূপ।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সৌদি সফরের কয়েক দিন আগে সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হলো। এটি গত রোববার প্রচারিত হয়।
সৌদির সাবেক এই গোয়েন্দা কর্মকর্তার নাম সাদ আল-জাবেরি। তিনি সৌদির গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ছিলেন।
সাদ আল-জাবেরি বলেন, সৌদি যুবরাজ একজন সাইকোপ্যাথ, যার কোনো সহমর্মিতা নেই। তিনি কোনো আবেগ অনুভব করেন না। তিনি তার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেন না। এই হত্যাকারীর নৃশংসতা ও অপরাধ প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি।
সাদ আল-জাবেরির ভাষ্য, মোহাম্মদ বিন সালমান ‘টাইগার স্কোয়াড’ নামের একটি ভাড়াটে নৃশংস গ্যাং চালান। এই গ্যাংকে তিনি অপহরণ ও হত্যার মতো কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করেন।
সাদ আল-জাবেরি সতর্ক করে বলেন, বিপুল সম্পদ মোহাম্মদ বিন সালমানকে বিশ্বের জন্য একটি হুমকিতে পরিণত করেছে।
সাদ আল-জাবেরি বলেন, সৌদির যুবরাজ এমন একজন হত্যাকারী, যার অসীম সম্পদ রয়েছে।
সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগজি হত্যাকাণ্ডের পর আলজাবেরি নিজেই ঘাতকদের পরবর্তী লক্ষ্য বলে দাবি করেন।
সৌদি যুবরাজ একজন সাইকোপ্যাথ, যার কোনো সহমর্মিতা নেই। তিনি কোনো আবেগ অনুভব করেন না। তিনি তার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেন না।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালের মে মাসে সৌদি আরব থেকে পালিয়ে যান সাদ আল-জাবেরি। বর্তমানে কানাডায় নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন তিনি।
সিবিএসের সিক্সটি মিনিটস অনুষ্ঠানে আল-জাবেরি জানান, ২০১৮ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে খাশোগজিকে হত্যার পর একটি ঘাতক দল কানাডার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। সে সময় এক সহযোগীর মাধ্যমে আলজাবেরি জানতে পারেন যে ওই দলটি তাকে হত্যা করতে যাচ্ছে।
আলজাবেরি জানান যে তাকে সতর্ক করে ওই সহযোগী বলেছিলেন, ‘কানাডায় কোনো সৌদি কূটনৈতিক মিশনের ধারেকাছে যাবেন না। কনস্যুলেটে যাবেন না, দূতাবাসেও যাবেন না।’
কেন জানতে চাইলে আলজাবেরিকে বলা হয়, ‘ওরা খাশোগজিকে টুকরো টুকরো করেছে, মেরে ফেলেছে। পরবর্তী লক্ষ্য হিসেবে তালিকার শীর্ষে এখন আপনি আছেন।’
অভিযোগকারী সাদ আল-জাবেরি সাবেক সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ছিলেন। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পূর্বসূরী ও চাচাতো ভাই মোহাম্মদ বিন নায়েফ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন। ২০১৭ সালে তাকে সরিয়ে মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ ঘোষণা করেন বাদশাহ সালমান।
বর্তমানে সৌদি আরবে বন্দি জীবনযাপন করছেন মোহাম্মদ বিন নায়েফ। সৌদি রাজনীতিতে তিনিই যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করা হয়।
আল-জাবেরি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, আমার মৃত্যু অবধারিত। কারণ আমাকে মৃত না দেখা পর্যন্ত এই ব্যক্তি (বর্তমান যুবরাজ) থামবে না।’
আল-জাবেরির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো সমর্থন রয়েছে।
২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ারসহ বিভিন্ন জায়গায় একযোগে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়। হামলা পরবর্তী সময়ে আমেরিকান ও সৌদি নাগরিকদের প্রাণ বাঁচাতে সহযোগিতার জন্য তৎকালীন সৌদি সরকারকে কৃতিত্ব দেয় সাবেক আমেরিকান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। সে সময় সৌদি যুবরাজ ছিলেন মোহাম্মদ বিন নায়েফ, যার সহযোগী আল-জাবেরি।
সিক্সটি মিনিটসে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মাইক মোরেল বলেন, ‘আল-জাবেরি মর্যাদার যোগ্য ব্যক্তি।’
মোরেলের মতে, আল-জাবেরির দেয়া গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই ২০১০ সালে নিষিদ্ধঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন আল-কায়েদার বোমা হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ করা সম্ভব হয়েছিল। পণ্যবাহী দুটি বিমানে থাকা মালামালের মধ্যে দুটি ডেস্কটপ প্রিন্টারে বোমা লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
মোরেল জানান, আরও অনেকবারই আমেরিকানদের প্রাণ বাঁচিয়েছেন আল-জাবেরি। কিন্তু সেসব ঘটনা এখনও গোপন তথ্য হিসেবে শ্রেণিভুক্ত।
কানাডায় আলজাবেরিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আগে প্রত্যাখ্যান করেছে সৌদি আরব। খাশোগজি হত্যাকাণ্ডেও সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ স্বীকার করেনি দেশটি।
কিন্তু চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক খাশোগজিকে হত্যায় অনুমোদন দিয়েছিলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান নিজে।
এর আগে সাদ আল-জাবেরি দাবি করেছিলেন যে বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আব্দুলআজিজ ক্ষমতায় থাকাকালীন তাকেও হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন মোহাম্মদ বিন সালমান।
আল-জাবেরির মতে, চাচা বাদশাহ আবদুল্লাহকে হত্যা করে বাবা সালমান বিন আব্দুলআজিজকে সিংহাসনে বসাতে চেয়েছিলেন মোহাম্মদ।
ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ৯০ বছর বয়সে ২০১৫ সালে মৃত্যু হয় বাদশাহ আবদুল্লাহর। তার উত্তরসূরী হিসেবে সৌদি আরবের পরবর্তী বাদশাহ হন আবদুল্লাহর সৎ ভাই সালমান বিন আব্দুলআজিজ। তাদের পিতা প্রয়াত বাদশাহ আব্দুলআজিজ বিন আব্দুল রহমান।
বর্তমান বাদশাহ সালমানের উত্তরসূরী ও সৌদি আরবের পরবর্তী সম্ভাব্য শাসক তার অষ্টম সন্তান মোহাম্মদ বিন সালমান। কথিত আছে ৮৫ বছর বয়সী বাদশাহ সালমানের ওপর যুবরাজ মোহাম্মদের কর্তৃত্ব আছে এবং সালমান প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রায় সবটাই যুবরাজের নিয়ন্ত্রণে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৫৯
আপনার মতামত জানানঃ