পাকিস্তানের লাহোরে সিনিয়র সাংবাদিক আয়াজ আমিরের ওপর অজ্ঞাত কয়েকজন হামলাকারী হামলা চালিয়েছে। এ সময় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা সিনিয়র সাংবাদিক আয়াজ আমীরকে লাঞ্ছিত করে তার মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। লাহোরে দুনিয়া নিউজ অফিসের বাইরে এ হামলার ঘটনা ঘটে। যার এখন সবাই কঠোর ভাষায় সমালোচনা ও নিন্দা করছে।
পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
দুনিয়া নিউজে একজন জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করেন আমির। তিনি বলেন, ‘একটি অনুষ্ঠান রেকর্ড করার পর আমি অফিস থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ অন্য একটি গাড়ি আমার গাড়ির গতিরোধ করে। তারপর মুখোশ পরা এক ব্যক্তি ওই গাড়ি থেকে বের হয়ে আমার গাড়ির চালককে ডাক দেয়। আমি তখন ওই ব্যক্তিকে গাড়ি আটকানোর কারণ জিজ্ঞেস করলে আরও কয়েকজন লোক সেখানে জড়ো হয় এবং গাড়ির দরজা খুলে আমাকে টেনেহিঁচড়ে বের করে কিল-ঘুষি মারতে থাকে।’
রাস্তাটি জনাকীর্ণ ছিল বলে মুহূর্তেই অনেক লোক জড়ো হয়ে যায়। কিন্তু এরই মধ্যে হামলাকারীরা তার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায় বলে জানান আয়াজ আমির।
অনেকেই আহত এ সাংবাদিকের ছবি টুইটারে পোস্ট করেছেন। ছবিতে দেখা গেছে আয়াজ আমির ছেঁড়া শার্ট গায়ে গাড়িতে বসে আছেন। তার মুখে আঘাতের চিহ্ন।
এ হামলার একদিন আগে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘পাকিস্তানের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ও এর ফলাফল’ শীর্ষক একটি সেমিনারে বক্তৃতা দিয়েছেন এ খ্যাতিমান সাংবাদিক। সেই সেমিনারে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানও উপস্থিত ছিলেন।
ওই বক্তৃতায় আয়াজ আমির পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সমালোচনা করেছেন এবং ইমরান খানের শাসনামলের ভুলগুলোও তুলে ধরেছিলেন। তার বক্তৃতা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও এই বিষয়ে এগিয়ে এসেছেন এবং তিনি এই ঘটনাটিকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে নিন্দা করেছেন এবং বিষয়টির উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করেছেন।
তিনি টুইট করে লিখেছেন, ‘আজ লাহোরে সিনিয়র সাংবাদিক আয়াজ আমিরের বিরুদ্ধে সহিংসতার তীব্র নিন্দা করছি।’
তিনি টুইটার পোস্টে আরও বলেছেন, ‘পাকিস্তানে সাংবাদিক, বিরোধী দলের রাজনীতিক ও নাগরিকদের ওপর হামলা, মিথ্যা মামলাসহ ভয়ংকর ফ্যাসিবাদ নেমে এসেছে। রাষ্ট্র যখন সকল নৈতিক কর্তৃত্ব হারায়, তখনই সহিংসতার আশ্রয় নেয়।’
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হামজা শাহবাজ বলেছেন, তিনি হামলার বিষয়টি অবগত হয়েছেন এবং এ ব্যাপারে পাঞ্জাব পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছেন। হামলাকারীকে শিগগিরই গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ ঘটনায় অবশ্যই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।’
পাকিস্তানে আগের দুই বছরের তুলনায় ২০২১ সালে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। সম্পতি দেশটির সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদের (সিপিএনই) প্রকাশিত একটি রির্পোটে উঠে এসেছে যে, শুধুমাত্র ২০২১ সালে দায়িত্ব পালনের সময় দেশটিতে পাঁচজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অন্তত নয়জন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া দুই সাংবাদিক দীর্ঘস্থায়ী বেকারত্বের কারণে আত্মহত্যা করেছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে পাকিস্তানে সাংবাদিক, মিডিয়া কর্মী ও মিডিয়া সংস্থাগুলোর জন্য অত্যন্ত কঠিন বছর ছিল। কারণ এই বছর দেশটিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা চাপের মধ্যে ছিল।
সিপিএনই আরও উল্লেখ করেছে, গত বছর পাকিস্তানে দায়িত্ব পালনে হয়রানি, নির্যাতন এবং নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে যে, অনেক সাংবাদিককে খুনের চেষ্টা, হুমকি, মামলা, বিভিন্ন সময় অনলাইনে হয়রানি এবং ‘অজানা নম্বর’ থেকে আসা টেলিফোন কলের সম্মুখীন হতে হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যরাও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান এমন একটি দেশ যেখানে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বাড়ছে এবং এমনকি একজন খুনিকেও আজ পর্যন্ত বিচারের আওতায় আনা হয়নি।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলেন, পাকিস্তানের সাংবাদিকদের ওপর হয়রানি ও আক্রমণ করা হচ্ছে, যা আইনের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার সঙ্গে পুলিশকে এটি তদন্ত করা উচিত। আসামিদের প্রকাশ্যে আনা উচিত। সাংবাদিক নির্যাতন ও হামলার ঘটনায় বিচার চেয়ে যে দাবি করা হচ্ছে তা কেবল একটি ঘটনার জন্যেই নয়; বরং ক্রমাগতভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের প্রবণতার জন্য দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৫৫
আপনার মতামত জানানঃ