ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকটের মুখে পাকিস্তান। সংকট এতটাই তীব্র যে সে দেশের ইন্টারপরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাহবাজ সরকার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেশকে অন্ধকারে কাটাতে হবে। কোনও কোনওদিন টানা দুই থেকে তিন দিন বিদ্যুৎ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে পাকিস্তানে। বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা।
অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি পাকিস্তানে বিদ্যুৎ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সংকট এতোটাই চরমে পৌঁছেছে যে, দেশটির টেলিকম অপারেটররা তাদের মোবাইল এবং ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ন্যাশনাল ইনফরমেশন টেকনোলজি বোর্ড (এনআইবিটি) টুইটারে জানিয়েছে, ‘দেশব্যাপী ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মোবাইল এবং ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে পাকিস্তানের টেলিকম অপারেটররা। কারণ বিদ্যুতের এই বিভ্রাট তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় নানা সমস্যা ও বাধার সৃষ্টি করছে।’
এদিকে জিও নিউজ জানিয়েছে, সোমবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ সতর্ক করে বলেছেন, জুলাই মাসে সমগ্র পাকিস্তান আরও বেশি লোডশেডিংয়ের সম্মুখীন হতে পারে।
অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি পাকিস্তানে বিদ্যুৎ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।
তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তান প্রয়োজনীয় পরিমাণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ পাচ্ছে না। তবে তা হাতে পেতে ইসলামাবেদর এই জোট সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, পাকিস্তানের মাসিক জ্বালানি তেলের আমদানি জুন মাসে চার বছরের সর্বোচ্চে অবস্থানে পৌঁছাতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে বর্তমানে তাপপ্রবাহ চলছে এবং এই কারণে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এলএনজি কিনতে কার্যত সংগ্রম করছে শেহবাজ সরকার।
এছাড়া জুলাই মাসের জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের চুক্তিতে সম্মত না হওয়ার পর পাকিস্তানে বিদ্যুৎ সংকট ক্রমেই বাড়ছে। মূলত উচ্চ মূল্য এবং কম অংশগ্রহণের কারণে জুলাইয়ের দরপত্র বাতিল করা হয়। অবশ্য লোডশেডিং তথা বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।
পাকিস্তানের বিদ্যুৎ–সংকট ক্রমশ বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থতার বিষয়টি উঠে এসেছে। গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে পাকিস্তান এলএনজি লিমিটেড টানা তিনবারের মতো প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য চুক্তি করতে পারেনি।
পাকিস্তানের জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্বালানি ক্রয় করতে দেশটির অক্ষমতা বিদ্যুতের ঘাটতিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
এরই মধ্যে পাকিস্তান সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারি কর্মচারীদের জন্য কাজের সময় সংক্ষিপ্ত করার পাশাপাশি করাচি ও অন্যান্য শহরের শপিং মল ও কারখানাগুলো তাড়াতাড়ি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ ঘাটতি দূর করতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেবে, এমন আশঙ্কার মধ্যে ইউরোপ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানি বাড়িয়েছে। এতে বেড়ে গেছে এলএনজির দাম।
আর্থিক সংকটে বিপর্যস্ত পাকিস্তান শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি দেখে শঙ্কিত। শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, তার জন্য যাবতীয় চেষ্টা করছে শাহবাজ শরিফের পাকিস্তান সরকার। উন্নয়নের ধারা বজায় রেখে করুণ আর্থিক পরিস্থিতি সামলাতে পাকিস্তানের সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। গত মাসেই দেশটির রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। যে পরিমাণ অর্থ পাকিস্তানের রিজার্ভে মজুত আছে, তা দিয়ে মোট দুই মাসের আমদানি ব্যয় বহন করা সম্ভব। এ অবস্থায় দেশটিতে পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার।
ঋণে জর্জর পাকিস্তানের রিজার্ভে টান পড়েছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ঋণ প্যাকেজের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। ঋণ পেতে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, সরকারি ব্যয় সংকোচন ও বাজেট ঘাটতি কমাতে বাড়তি করারোপের মতো শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। রয়টার্স জানায়, পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল শুক্রবার বলেছেন, চীনা ব্যাংকগুলোর একটি কনসোর্টিয়াম থেকে ২৩০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৫৮
আপনার মতামত জানানঃ