যৌন পেশাকে স্বীকৃতি দিয়ে রায় দিয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। দেশটির আইনের আওতায় এখন থেকে যৌনকর্মীরা অন্য আর দশটা পেশার লোকদের মতো সমান মর্যাদা ও সুরক্ষা পাবেন। যারা স্বেচ্ছায় এ পেশায় আসবেন তাদের কোনো হয়রানি করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে নিজ ইচ্ছায় যেসব প্রাপ্তবয়স্ক এই পেশায় এসেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতেও বাধা দিতে পারবে না পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৬ মে) ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাওয়ের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাওয়ের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন। পর্যবেক্ষণে আদালত জানান, ভারতের সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অধীন সব নাগরিকের মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে।
ভারতের সুপ্রীম কোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, যৌনকর্মীদের গ্রেপ্তার বা শাস্তি দেওয়া বা হয়রানি করা উচিত নয় কারণ স্বেচ্ছায় যৌন কাজ ‘বেআইনি নয়’ এবং শুধু যৌনপল্লি বেআইনি।
আদালতের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, ‘যৌনকর্মীরাও আইনের চোখে সমান সুরক্ষার অধিকারী। যখন এটা স্পষ্ট যে, যৌনকর্মী এক জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং সম্মতি সাপেক্ষেই যৌন কাজ করছেন, তখন পুলিশকে অকারণে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। ‘এই দেশের প্রত্যেক ব্যক্তির ভারতের সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবনের অধিকার রয়েছে।’
সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বলা হয়, ‘যৌনকর্মীরা আইনের অধীন সমান সুরক্ষা পাবেন। ‘বয়স’ ও ‘সম্মতির’ ওপর ভিত্তি করে ফৌজদারি আইন সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগ করতে হবে। একজন যৌনকর্মী প্রাপ্তবয়স্ক এবং নিজের ইচ্ছায় এ পেশায় এসেছেন, এমনটা জানা গেলে তাঁদের ওপর হস্তক্ষেপ ও ফৌজদারি পদক্ষেপ নেওয়া থেকে পুলিশের বিরত থাকতে হবে।’
যখন এটা স্পষ্ট যে, যৌনকর্মী এক জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং সম্মতি সাপেক্ষেই যৌন কাজ করছেন, তখন পুলিশকে অকারণে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
মা যৌনকর্মী বলে তার সন্তানকে তার কাছ থেকে আলাদা করা যাবে না বলে আদেশে উল্লেখ করেছেন আদালত। বলেছেন, ‘কোনো ছোট শিশুকে যৌনপল্লি বা যৌনকর্মীর সঙ্গে দেখলেই তাকে পাচার করে আনা হয়েছে, তা ধারণা করা ঠিক হবে না। যদি কোনো ক্ষেত্রে একজন যৌনকর্মী কাউকে তার ছেলে বা মেয়ে দাবি করেন, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষা করা যেতে পারে। তবে জোর করে তাদের আলাদা করা যাবে না।’
পাশাপাশি কোনো যৌনকর্মী যদি তার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে যান, তাহলে তা অন্য দশজনের করা মামলার মতোই দেখতে পুলিশকে বলা হয়েছে। বিশেষ করে যদি যৌনকর্মী তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তা বা অপরাধের অভিযোগ নিয়ে আসেন, তাহলে দ্রুত তার শারীরিক পরীক্ষা করে তদন্ত শুরু করতে হবে।
প্রায়ই দেখা যায়, পুলিশ যৌনকর্মীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। যেন তারা এমন একটি শ্রেণি যে তাদের অধিকারের স্বীকৃতি নেই। যৌনকর্মীদের পরিচয় যেন প্রকাশ্যে না আসে, সে ব্যাপারেও গণমাধ্যমকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
যদি কোনো যৌনকর্মী এই শিশুকে নিজের সন্তান বলে দাবি করে তাহলে সংবেদনশীলতার সঙ্গে তাদের এ ক্ষেত্রে, একজন সাধারণ মানুষ যেমন সুবিধার অধিকারী, একজন যৌনকর্মীর ক্ষেত্রেও তার অন্যথা করা যাবে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৪৮
আপনার মতামত জানানঃ