কোনো এক অজানা কারণে একের পর এক নিজেদের দাঁত হারাচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার সেন্ট লুসিয়া হ্রদে থাকা নীল কুমিরেরা (প্রজাতির নাম)।
কিন্তু গবেষণার পর এর জন্য বিষক্রিয়াকে দায়ী করেছেন গবেষকরা। হ্রদের ২৫টি কুমিরের উপর গবেষণার সময় এ বিষয়টি খেয়াল করেন তারা।
কুমির নিয়ে করা ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশটির পূর্ব উপকূল বরাবর সেন্ট লুসিয়া হ্রদে থাকা সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর রক্তে প্রচুর পরিমাণে সীসার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।
মাছ ধরার বড়শিতে ভর হিসেবে ব্যবহৃত সীসা মাছের ভেতর থেকে যাচ্ছে। এসব মাছ আবার কুমিরের খাবার হওয়ায় তাদের রক্তে সীসা বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে দাবি গবেষকদের। এ অঞ্চলের কুমিরগুলোর প্রতি ‘জরুরি ভিত্তিতে দৃষ্টি দেওয়া’ প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা।
গবেষকদের মতে, মোট ২৫ টি কুমিরের ভেতর বেশ কয়েকটিতে প্রতি মিলিলিটারে এক হাজার ন্যানোগ্রাম, ৫টিতে ছয় হাজার ন্যানোগ্রাম, এমনকি একটিতে তের হাজার ন্যানোগ্রাম সীসাও পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সংরক্ষণ কেন্দ্র থেকে নেওয়া তিনটি কুমিরের রক্তে সীসার পরিমাণ ছিল ২০৮ ন্যানোগ্রামের কাছাকাছি। এদের মধ্যে প্রতি মিলিলিটারে ৬ হাজার ন্যানোগ্রাম সীসা থাকা কুমিরগুলো উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দাঁত হারিয়েছে। ১৩ হাজার ন্যানোগ্রাম সীসা পাওয়া কুমিরটির দাঁত সবচেয়ে বেশি পড়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে গবেষকরা জানান, মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর দেহেও সীসা জমা হয়। এমনকি সীসা বিষক্রিয়ার কারণে অনেক প্রাণীর দেহে রক্তশূন্যতাও তৈরি হয়। তবে কুমিরের শরীরে এ ধাতু জমা হওয়ার কারণে তাদের হাড় এবং দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ব্রিটিশ পত্রিকা ইন্ডিপেনডেন্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ১৯৮৭ সালে ব্রিটেনে বড়শি দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরের এক দশকে পানির নিচে থাকা প্রাণীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
এদিকে, দিনদিন উষ্ণ হয়ে উঠছে পৃথিবী। কমে আসছে বনভূমি। প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটছে পরিবেশের। হুমকির মুখে পড়েছে অনেক প্রাণীর জীবন।
সম্প্রতি ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায় জানানো হয়েছে, সমস্ত পরিচিত সরীসৃপ প্রজাতির এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। এই বিলুপ্তি ঠেকাতে তাদের জরুরি সংরক্ষণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ওই গবেষণায় প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি প্রজাতির ওপর মূল্যায়ন করা হয়েছে। যার মধ্যে পাওয়া গেছে, কুমির ও কচ্ছপসহ অন্যান্য সরীসৃপরাও বিলুপ্তির পথে।
সরীসৃপ নিয়ে এমন গবেষণা এটিই প্রথম। যা শেষ করতে লেগেছে ১৫ বছর। এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন ৬ মহাদেশের ২৪টি দেশের ৯৬১ বিজ্ঞানী।
উল্লেখ্য, ঘড়িয়াল হলো বিরল প্রজাতির মিঠাজলের কুমির বর্গের সরীসৃপ। একসময় ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার আর ভুটানে দেখা যেতো এদের। কিন্তু ঘড়িয়াল বর্তমানে এক বিপন্ন প্রাণী, ইতোমধ্যেই স্থান করে নিয়েছে আইইউএনসি (IUCN)-এর বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর সংকলন লাল তালিকা ভূক্ত। প্রাকৃতিক পরিবেশে সমগ্র পৃথিবীতে বর্তমানে ২০০টিরও কম বুনো ঘড়িয়াল রয়েছে।
এদের সংখ্যা এত কমে গেছে যে, অচিরেই এরা বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বাংলাদেশে এদের সর্বমোট সংখ্যা এখন ৩০টির বেশি নয়। ঘড়িয়াল সাধারণত মাছ খেয়ে থাকে, এ জন্যই একে মেছো কুমিরও বলা হয়ে থাকে। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ে এরা ডিম দেয়। নদীর তীরে বালুর উপরে অগভীর গর্ত করে সেখানে ডিম পাড়ে এবং তা আবার বালু দিয়ে ঢেকে রাখে। নদীর তীর থেকে ১০ মিটার দূর পর্যন্ত এরা ডিম পাড়ার জন্য গিয়ে থাকে।
ঘড়িয়ালের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার পেছনে নানা কারণ রয়েছে, নির্বিচারে হত্যা, পরিবেশ ধ্বংস, জনসাধারণের অজ্ঞতা, মশা ও ইদুর ধ্বংসকারী ওষুধের অপব্যবহার ও জমিতে সার প্রয়োগ।
অন্যান্য প্রজাতির প্রাণীদের জন্য অনুরূপ বৈশ্বিক মূল্যায়নও প্রকাশ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪০.৭% উভচর, ২৫.৪ স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং ১৩.৬ শতাংশ পাখি বিলুপ্তির সম্মুখীন।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩০২
আপনার মতামত জানানঃ