যেভাবে একটি মহাবিস্ফোরণের পর পৃথিবীর বুক থেকে শেষ হয়ে গিয়েছিল ডাইনোসর-যুগ, ঠিক তেমনি আরেকটি মহাবিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে মানবজাতি! নতুন এক গবেষণায় এমন আশংকাই প্রকাশ করা হয়েছে। সম্প্রতি সায়েন্স অ্যাডভান্সেস নামের গবেষণা ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হলেও স্বাভাবিকের চেয়ে শতগুণ বেশি দ্রুততার সঙ্গে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে পৃথিবীর জীবপ্রজাতি।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড উডস ইনস্টিটিউট ফর দ্য এনভায়রনমেন্টর ফেলো পল এরলিচ জানান, এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে পাঁচবার মহাপ্রলয় ঘটেছে। শেষবার হয়েছিল ৬.৬ কোটি বছর আগে। তখন ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছিল। বর্তমানে ষষ্ঠ মহাপ্রলয়ের যুগে পৃথিবী ঢুকে পড়েছে। আর এবারের মহাপ্রলয়ে মানুষসহ অন্য প্রাণীর সিংহভাগ অংশই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। আর তেমনটা হলে তা ফিরে পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েক লাখ বছর।
বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই একমত, ডাইনোসর-যুগে জীবজগতের অবলুপ্তি যে হারে হতো, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত হারে হচ্ছে। অবশ্য এই তত্ত্বের বিরোধিতা করেছেন অনেক বিজ্ঞানী। তাদের মতে, পূর্ব ধারণায় সংকটকে অনেক বড় করে দেখানো হয়েছে। নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, আসন্ন মহাপ্রলয়ে উভচর শ্রেণির ৪১ শতাংশ এবং পুরো প্রাণিকুলের ২৬ শতাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণী হারিয়ে যাবে। এই তালিকায় মানুষের নামই রয়েছে সবার ওপরের তালিকায়।
তবে এবার নতুন এক হুমকির মধ্যে পৃথিবী। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীকে বেঁচে থাকতে হলে নিজেদের জন্মহারকে বৃদ্ধি করতে হয়। সেদিক থেকে বিশ্লেষণ করলে এবার অবাক করা তথ্য এলো গবেষকদের হাতে।
বিশ্বে বর্তমানে কমছে মানুষের জন্মহার। ১৯৬০ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত যে হিসাব সামনে এসেছে সেখান থেকে দেখা গেছে- মানুষের জন্মহার কমেছে ৫.৩ শতাংশ।
সিজুওকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে- বিগত তিন দশক ধরে কমছে মানুষের জন্মহার। নারীদের সন্তান জন্ম দেওয়ার বিষয়ে তৈরি হয়েছে অনীহা। ফলে সেখান থেকে আগামীদিনে মানুষ পৃথিবীতে কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন গবেষণা বলছে- পৃথিবীতে পুরুষ এবং নারীর জন্মহারের একটি অনুপাত রয়েছে।
সেইমতো যদি সেটি চলতে না পারে তাহলে সেখান থেকে পৃথিবীতে কমবে মানুষের সংখ্যা। যদি সেটাই ক্রমাগত হতে থাকে তাহলে আমাদের বোঝার আগেই পৃথিবী থেকে কমবে মানুষের জন্মহার। প্রতিটি নারী যে সংখ্যায় সন্তান জন্ম দিতে পারেন সেখান থেকে যদি তিনি সরে আসেন তাহলে তার বিরাট প্রভাব পড়বে পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যায়। যদিও এই বিষয়টি বোঝা অতি সহজ নয়।
যে হারে পৃথিবীতে প্রতিদিন মানুষের জন্ম এবং মৃত্যু হয়ে চলেছে সেখান থেকে এই হারকে অতি নগন্য বলে মনে হতেই পারে। তবে যদি দীর্ঘমেয়াদী হিসেবে দেখা যায় তাহলে সেখানে ধরা পড়বে যে সংখ্যায় মানুষ পৃথিবীতে থাকার কথা সেখান থেকে তারা হারিয়ে যাচ্ছে। এই জন্মহার কমছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। জাপানে এই হার সবথেকে কম। সেখানে রয়ছে ১.৩ শতাংশ।
অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়াতে রয়েছে ০.৮৭ শতাংশ। যদি আমেরিকার দিকে নজর দেওয়া যায় তাহলে সেখানে এটি রয়েছে ১.৬৬ শতাংশ। এই সকল সংখ্যাই বলে দিচ্ছে পৃথিবীতে কীভাবে কমছে মানুষের জন্মহার। যদি এই হারে চলতে থাকে তাহলে একটা সময় পৃথিবীতে মানুষের আকাল দেখা দিতে পারে। ফলে সামনে চলে আসবে অস্তিত্ব সঙ্কট
আপনার মতামত জানানঃ