সমকামিতাকে বরাবরই অপরাধের চোখে দেখা হয় বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ কাতারে। ইতিমধ্যেই এবারের বিশ্বআসরে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাদের বিশেষ রংধনু পতাকা। সুইডেন ও ডেনমার্ক সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে জানা গেল, কাতারে হোটেল সুবিধা পেতেও ধকল পোহাতে হবে সমকামীদের।
কাতারের তিনটি হোটেল বিশ্বকাপ ফুটবল দেখতে যাওয়া সমকামী দম্পতিদের থাকতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্ক্যান্ডেনেভিয়ার কয়েকটি গণমাধ্যমের পরিচালিত এক জরিপে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
চলতি বছরের নভেম্বর মাস থেকে কাতারে শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল। ক্রীড়াঙ্গনের এই জমজমাট আসর উপলক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ দর্শক মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে যাওয়ার কথা রয়েছে। দর্শকদের থাকার জন্য ইতিমধ্যে কাতারের ৬৯টি হোটেলের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে ফুটবল নিয়ংন্ত্রক সংস্থা ফিফা। কাতারের আইনে দেশটিতে সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
নরওয়ে, সুইডেন এবং ডেনমার্কের কয়েকটি গণমাধ্যমের পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ফিফার প্রকাশিত তালিকায় থাকা তিনটি হোটেল সমকামীদের থাকার জায়গা দেবে না। এ বিষয়ে জানতে রয়টার্সের পক্ষ থেকে হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখিত তিনটি হোটেল ছাড়াও আরও ২২টি হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা সমকামী দর্শকদের শর্তসাপেক্ষে হোটেলে থাকার জায়গা দেবে। আর শর্তটি হলো, হোটেলে থাকতে চাওয়া সমকামী অতিথিরা জনসম্মুখে তাদের আচরণ প্রকাশ করতে পারবেন না। আর ৩৩টি হোটেল জানিয়েছে, সমকামী দর্শকদের জায়গা দিতে তাদের কোনো আপত্তি নেই।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সমকামিতার ব্যাপারে বরাবরই রক্ষণশীল। ফুটবলের সবচেয়ে বড় মহারণ কাতারে হতে চলায় শঙ্কা ছিল তাদের বিশ্বকাপ দেখার সুযোগ নিয়েই। সেই শঙ্কা দূর করেছেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। সবাইকে কাতারে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।
তিনটি হোটেল ছাড়াও আরও ২২টি হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা সমকামী দর্শকদের শর্তসাপেক্ষে হোটেলে থাকার জায়গা দেবে। আর শর্তটি হলো, হোটেলে থাকতে চাওয়া সমকামী অতিথিরা জনসম্মুখে তাদের আচরণ প্রকাশ করতে পারবেন না।
ইনফান্তিনোর ঘোষণার কদিন পরই উল্টো পথে হাঁটেন আসরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মেজর জেনারেল আব্দুল আজিজ আবদুল্লাহ আল অনসারি। সমকামীদের রংধনু পতাকা নিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে সতর্ক করে দেন। তাতে সমকামীদের বিশ্বকাপ দেখার সুযোগ নিয়ে ফের শঙ্কা তৈরি হয়।
পরে সাংবাদিকরা আগ্রহী হয়ে ফিফার অফিসিয়াল তালিকায় থাকা ৬৯টি হোটেলে অনুসন্ধান চালান। যেখানে নব-বিবাহিত সমকামী দম্পতি পরিচয় দিয়ে হোটেল বুকিং করতে চান তারা।
এদিকে বিশ্বকাপের ডেলিভারি ও লিগ্যাসি বিষয়ক সুপ্রিম কমিটি জানায়, কাতার একটি রক্ষণশীল দেশ।তবে সবার অংশগ্রহণে একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর আয়োজনে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
সুপ্রিম কমিটির এক মুখপাত্র জানান, কাতারের প্রায় একশ হোটেল বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে খেলোয়াড়, দর্শক এবং বিশ্বকাপের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের থাকার জায়গার আয়োজন করবে। এই হোটেলগুলোকে অবশ্যই ‘সাস্টেইনেবল সোর্সিং কোড’ মেনে চলতে হবে।
তিনি জানান, এই কোডের কোনো ব্যতিক্রম হলে তা খুব গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে কমিটি।
কমিটির এই মুখপাত্র অবশ্য এ বিষয়ে আরো তথ্য তুলে ধরার আহ্বান জানান। ‘‘আমরা চাই সমকামীদের জায়গা না দেওয়ার এই অভিযোগের বিষয়ে আরো তথ্য বেরিয়ে আসুক। বিশ্বকাপের সাথে সংশ্লিষ্টরা যেন কোনো বৈষম্যের শিকার না হন আমরা তা নিশ্চিত করতে চাই,” বলেন তিনি।
দশ বছর আগে সিদ্ধান্ত হয় ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক হবে তেল সমৃদ্ধ দেশ কাতার। সেই থেকেই চলছে আলোচনা। একে তো দেশটি বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্বটা বৈধ উপায়ে পায়নি বলে ইতিমধ্যেই প্রমাণ মিলেছে। ওদিকে দেশটি প্রবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে বহু দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন সংগঠন।
সম্প্রতি কাতারে ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজে শ্রমিকদের জোর করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দেখেছে, কাতারে কাজ করা নিরাপত্তাকর্মী, যাদের মধ্যে ২০২২ বিশ্বকাপের প্রকল্পের লোকও আছেন, তারা যে পরিবেশে কাজ করেছেন, তা জোরপূর্বক শ্রমের পর্যায়ে পড়ে।’
১০ বছর আগে কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষিত হয়। এরপর থেকেই দেশটি বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। তৈরি হয় অসংখ্য ভবন। সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতেও স্থাপিত হয় নানা স্থাপনা। ফুটবলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত স্থাপনাও রয়েছে এরমধ্যে। তৈরি হয়েছে ৭টি ফুটবল স্টেডিয়াম। এছাড়া নতুন বিমানবন্দর, রাস্তা, গণ-পরিবহণ, হোটেল ও নতুন একটি শহরও তৈরি করা হয়েছে। সবই বিশ্বকাপকে সামনে রেখে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ /১৬৫২
আপনার মতামত জানানঃ