ক্লাস ঘরে বসে একসঙ্গে পড়ুয়ারা পড়াশোনা করবে, আলোচনা চলবে, কখনও কখনও সেমিনার হবে, তারপর সবাই মিলে পরীক্ষা দেবে, এটাই স্কুলের স্বাভাবিক চিত্র।
কিন্তু শিক্ষকদের নির্দেশে ক্লাসে বসে পর্নোগ্রাফি ছবি দেখবে পড়ুয়ারা, এটাও কি বাস্তবে সম্ভব? এক অভিনব উদ্যোগের হাত ধরেই অবাস্তবকে বাস্তব করে দেখাচ্ছে আমেরিকার এক কলেজ। আমেরিকার উটা রাজ্যের একটি প্রাইভেট লিবারাল আর্টস কলেজ ওয়েস্টমিনিস্টার কলেজ এই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে।
পর্নোগ্রাফি নিয়ে আমাদের সমাজে-তো বটেই বিদেশেও বাদবিচার রয়েছে। অনেকেই জানেন পর্ন সিনেমা বা শর্টফিল্ম রয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করতেই এখনও অনেকেই কিন্তু কিন্তু বোধ করেন। পর্নোগ্রাফি সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর না ভালো তা নিয়েও বিস্তর বিতর্ক রয়েছে।
ইন্টারনেটের যুগে পর্নোগ্রাফির অনেক সহজেই দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু তাই বলে সমাজ কি এতটাই এগিয়ে গেছে যে কলেজে পাঠ্য বিষয় হতে পারে পার্নোগ্রাফি। হ্যাঁ অনেকটা এমনই ঘটনা ঘটেছে। যা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে গোটা বিশ্বজুড়ে।
পর্নোগ্রাফি ছবির ক্লাস চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকার একটি বেসরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের পাশে বসিয়েই সেই ছবি দেখবেন শিক্ষকরা। গোটা বিষয়টিকে শিক্ষার অঙ্গ হিসেবেই দেখা হবে বলে দাবি ওই কলেজ কর্তৃপক্ষের।
সূত্র মতে, পঠনপাঠনের এই কোর্স চালু করছে আমেরিকার উটা শহরের ওয়েস্টমিনস্টার কলেজ। এই কোর্সটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফিল্ম ৩০০০’।
কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, যৌনতার মধ্যে যে জাতি, শ্রেণি এবং লিঙ্গের কোনও ভেদাভেদ নেই এবং যৌনতা যে একটি শিল্প, শিক্ষার্থীদের তা বোঝানোই এই পঠনপাঠনের মূল লক্ষ্য। তা ছাড়া এই পর্নোগ্রাফির পঠনপাঠনের মধ্য দিয়েই ‘সামাজিক সমস্যাগুলিকে আরও ভাল ভাবে ব্যাখ্যা’ করার সুযোগ পাবেন পড়ুয়ারা। এমনটাই দাবি কলেজ কর্তৃপক্ষের।
কলেজের পাঠ্যক্রমের একটি স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সেই পাঠ্যক্রমে একটি কোর্স ছিল যেখানে পড়ুয়াদের পর্নোগ্রাফি পড়ানোর কথা লেখা ছিল। সেই কোর্সের বিবরণে লেখা রয়েছে, ‘পড়ুয়ারা একসঙ্গে বসে পর্ন ফিল্ম দেখবেন।’
পাঠ্যক্রমেই সেই ছবি ভাইরাল হতেই অবশ্য মার্কিন কলেজটি ‘ফিল্ম ৩০০০ পর্ন’ নামক কোর্সটির বিবরণ নিজেদের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেয়। তবে মার্কিন রিপোর্ট অনুযায়ী, কোর্সের বিবরণ সরানো হলেও কোর্সটি বাতিল করেনি সংশ্লিষ্ট কলেজ।
কলেজ কর্তৃপক্ষ যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল তাতে বলা হয়েছে, ‘রবিবার রাতের ফুটবল ম্যাচের তুলনায় পর্নোগ্রাফি অনেক বেশি জনপ্রিয়। কোটি কোটি ডলারের এই শিল্পের যে একটা সাংস্কৃতিক পরিচয় আছে সেটাকে তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য।’
এই নিয়ে হচ্ছে প্রচুর আলোচনা সমালোচনা। কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে চিফ মার্কেটিং অফিসার শিলা রাপ্পাজো ইয়র্কিনক জানিয়েছেন এই বিষয় নিয়ে এতো আলোচনার কিছু নেই। এই কলেজে এর আগে একাধিকবার এজাতীয় কোর্সের অফার দেওয়া হয়েছে। আগেও এই জাতীয় কোর্স যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভাবে পড়ানো হয়েছে। ও শেষ করা হয়েছে। এবারও তাই হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন খুব অল্প সংখ্যক পড়ুয়া নিয়েই এই কোর্স হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পর্নোগাফ্রি ক্লাস নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু সেই দেশে অনেক আগেই চালু হয়ে গেছে সেক্স এডুকেশন। যা ছাত্র-ছা্ত্রীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই দেশে এখনও সেক্স এডুকেশনের ধাক্কাই সামলে উঠতে পারেনি।
কলেজ কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের পরই মিশ্র প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। অনেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বিরক্তিকর। কী ভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিল কলেজ? আবার অনেকে কলেজের এই সিদ্ধান্তকে খুব একটা খারাপ চোখেও দেখছেন না।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮৫৮
আপনার মতামত জানানঃ