নরকের দ্বার খুলে গিয়েছে? অন্তত তেমনই মত সংশ্লিষ্ট মানুষগুলির। ঘটনাটি ঘটেছে ক্যালিফোর্নিয়া। নরকের দরজা বা হেল ডোর, নামটি শুনে নিশ্চয়ই শরীরে কাঁটা দিচ্ছে!
সকলের চোখের সামনে খুলে গেছে নরকের এক দরজা! না কোনও আজগুবি গালগল্প নয়, সত্যি সত্যিই যুক্তরাষ্ট্রেই আবারও খুলে গেছে এই দরজা। যা দেখে শিউরে উঠছেন অনেকেই।
তবে আবার বলার কারণ, আগেও এই ঘটনা ঘটেছে। এই আশ্চর্য নারকীয় দ্বারের দেখা আগেও মিলেছে। শেষবার ২০১৮-১৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার নাপা অঞ্চলে এই গহ্বর দেখা গিয়েছিল।
কয়েক বছর পরে ফের দৃশ্যমান সেই গহ্বরটি। এটি ৭২ ফুট চওড়া ও ২৪৫ ফুট দীর্ঘ একটি সুড়ঙ্গ। ঠিক সুড়ঙ্গ নয়, আসলে এ এমন এক পয়োপ্রণালী যা একসঙ্গে ৪৮ হাজার ঘন ফুট পানি গ্রাস করতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়ার ব্যারিইসা হ্রদের নিচে রয়েছে এই পয়োপ্রণালী। হ্রদের পানি প্রায় ১৬ ফুট বেড়ে যাওয়ার ফলে গহ্বরটিতে যে বিপুল ঘূর্ণি তৈরি হয়েছে তাকে ঘিরেই সামাজিক মাধ্যমে প্রবল চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
১৯৫০ সালে তৈরি হয়েছিল এই পয়োপ্রণালীটি। উদ্দেশ্য ছিল, বাঁধটির কাছে পানির ধারাকে নিয়ন্ত্রণ করা। পরবর্তী সময়ে সেখানেই সৃষ্টি হতে দেখা যায় বিরাট গর্ত।
দেখলে মনে হবে যেন জলাশয়ের মাঝখানে এক অবিশ্বাস্য অতিকায় গহ্বর খুলে গিয়েছে। যে গপগপিয়ে গিলে চলেছে জলের স্রোত! স্বাভাবিক ভাবেই এমন দৃশ্য যখনই দেখা যায়, ভিড় জমান ট্যুরিস্টরা।
উল্লেখ্য এমনই আরেক ‘নরকের দরজা’ রয়েছে তুর্কমেনিস্তানেও। সেখানকার কারাকুম মরুভূমিতে গত ৫০ বছর ধরে জ্বলতে থাকা আগুনকে ঘিরেও বিস্ময়ের কমতি নেই। সেই আগুনমুখো গহ্বরের ছবিও সামাজিক মাধ্যমে হামেশাই দেখা যায়।
দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা আগুন জ্বলছে পৃথিবীর এক স্থানে। এই স্থানের নাম দেওয়া হয়েছে নরকের দরজা বা হেল ডোর। আর এই স্থানটি একবার নিজ চোখে দেখতে ভিড় করেন পর্যটকরা। পৃথিবীর বুকে নরকের উৎস দেখতে তাইতো সবাই ছোটেন নরকের দরজায়।
বিশ্বের ভয়ঙ্কর স্থানগুলোর অন্যতম হলো এই নরকের দরজা। এর অবস্থান তুর্কেমেনিস্তানের কারাকুম মরুভূমির দারভাজা নামের এক গ্রামের কাছে। বিশাল গোলাকার এক গর্ত। দাউ দাউ করে সেখানে জ্বলছে আগুন। দেখে মনে হয় এই গর্ত দিয়েই বুঝি প্রবেশ করতে হয় নরকে! কতটা ভয়ঙ্কর অনুভূতি একবার কল্পনা করে দেখুন। এই গর্তে একবার পড়লে মৃত্যু অনিবার্য। মৃতদেহেরও সন্ধান মিলবে না।
এই ডোর টু হেল রাতে আরও বেশি জ্বলে ওঠে! দূর থেকেও ঠাহর করা যায় স্থানটি। এর শিখার উজ্জ্বলতাও ভালোমতো বোঝা যায় তখন। সেখানকার উত্তাপ এত বেশি যে চাইলেও ৫-১০ মিনিটের বেশি থাকতে পারবেন না। মরুভূমির মাঝে বিশাল গর্তে জ্বলছে ভয়ঙ্কর আগুন।
নরকের এই দরজা কীভাবে সৃষ্টি হলো, তা নিয়ে যদিও অনেক মতভেদ আছে। জানা যায়, ১৯৭১ সালে তুর্কেমেনিস্তান সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কয়েকজন সোভিয়েত ভূতাত্ত্বিক তখন খনিজ তেলের সন্ধানে কারাকুম মরু অঞ্চলে অভিযান শুরু করেন। এই উদ্দেশ্যে ড্রিলিং শুরু করলে কিছুদিনের মধ্যে তারা টের পান ভূ-গর্ভস্থ গ্যাসের এক ভাণ্ডারের উপরেই বসে আছেন তারা।
এরপর এর কয়েক জায়গায় গর্ত খুঁড়ে এই গ্যাসক্ষেত্রকে মুক্ত করা হয়েছিল। তবুও সেখানকার ভূ-গর্ভে জমে থাকা প্রাকৃতিক গ্যাস পুরোটা বের করা সম্ভব হয়নি। ফলে ভূ-পৃষ্ঠের একটা বড় অংশ তারা উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। তাদের আশঙ্কা ছিল গ্যাসক্ষেত্র থেকে বিষাক্ত গ্যাস আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে। তাই তারা এই গ্যাসক্ষেত্রটিতে অগ্নিসংযোগ করেন।
তাদের ধারণা ছিল, হয়তো কিছুদিন এই গ্যাসক্ষেত্রটিতে আগুন জ্বলবে। তারপর বন্ধ হয়ে যাবে। তবে তাদের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিগত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এই গ্যাসক্ষেত্রটিতে ক্রমাগত আগুন জ্বলেই যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরাও জানে না এই আগুন কবে বন্ধ হবে।
কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার নাপা অঞ্চলের এই গহ্বর প্রকৃতই কি নরকের দ্বার? না, কোনও যুক্তিগ্রাহ্য মনই এমন কথা মেনে নিতে পারে না। এক্ষেত্রে এটা পুরোটাই রূপকার্থে বলা। লেক বেরিয়েসায় পানিধারণ ক্ষমতা ৫২০ কোটি গ্যালন। এখানে পানি এর চেয়ে বেশি হলেই তা ওই পোর্টাল টু হেল-এর মধ্যে ঢুকে পড়ে। আর তখন জলের উপরিস্তরে তৈরি হয় এক ভয়ানক ঘূর্ণি।
বিশেষজ্ঞের মতে, যখন এই বাঁধ ও জলাধার তৈরি করা হয় তখনই অতিরিক্ত জলস্রোত নিয়ন্ত্রণ করতে কতগুলি সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছিল। পরে সেই সুড়ঙ্গই এই গর্তে পরিণত হয়। যা প্রকারান্তরে নরকের দ্বার হিসেবে ‘খ্যাত’ হয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৫৫
আপনার মতামত জানানঃ