বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম দিন পালিত হয় পহেলা বৈশাখ। এই দিনটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উৎসবগুলোর একটি। মুসলিম সম্প্রদায়ের দুটি ঈদের পর পহেলা বৈশাখ দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ উদযাপন করে থাকেন। কেবল বাংলাদেশই নয়, দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষি মানুষের কাছেও দিনটি বিশেষ উদযাপনের।
মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে চালু হয় বাংলা বর্ষপঞ্জি। তখন হিজরি সন অনুযায়ী কৃষকের কাছ থেকে বার্ষিক খাজনা সংগ্রহ করা হতো। হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা ফসল উৎপাদনের সঙ্গে মিলত না। ফলে অনেক কৃষকদের অসময়ে খাজনা দিতে গিয়ে বিপদে পড়তে হতো। এই অসুবিধার কথা বুঝতে পেরে সম্রাট আকবর প্রচলিত ক্যালেন্ডার সংস্কার করেন। আকবরের নির্দেশে, রাজজ্যোতিষী ফতেহউল্লাহ শিরাজী ফসল কাটার মৌসুমের সঙ্গে চন্দ্র মাসের সামঞ্জস্য রেখে নতুন ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করেন।
সৌর পঞ্জিকা অনুসারে অনেক আগে থেকেই পালিত হত বাংলা ১২টি মাস।গ্রেগরীয় পঞ্জিকায় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হত এই সৌর পঞ্জিকা।
এখন যেমন বাংলা নতুন বছরের শুরুর দিনটি একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, এক সময় তেমন ছিল না। তখন বাংলা নববর্ষ পালিত হত ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। ইতিহাসবিদদের হিসাব অনুযায়ী ১৫৫৬ সাল থেকে বাংলা সন প্রবর্তন করা হয়।
মুঘল সম্রাট জালালউদ্দিন মোহাম্মদ আকবর খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য তার সভার জ্যোতির্বিদ আমির ফতেহউল্লাহ শিরাজীর সহযোগিতায় ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে ‘তারিখ-এ-এলাহি’ নামে নতুন একটি বছর গণনা পদ্ধতি চালু করেন।এটি কৃষকদের কাছে ‘ফসলি সন’ নামে পরিচিত হয়, যা পরে ‘বাংলা সন’ বা ‘বঙ্গাব্দ’ নামে প্রচলিত হয়ে ওঠে।
ঐ সময়ে প্রচলিত রাজকীয় সন ছিল ‘হিজরি সন’, যা চন্দ্রসন হওয়ার প্রতি বছর একই মাসে খাজনা আদায় সম্ভব হতো না।
বাংলা সন শূন্য থেকে শুরু হয়নি, যে বছর বাংলা সন প্রবর্তন করা হয়, সে বছর হিজরি সন ছিল ৯২৩ হিজরি।
সে অনুযায়ী সম্রাটের নির্দেশে প্রবর্তনের বছরই ৯২৩ বছর বয়স নিয়ে যাত্রা শুরু হয় বাংলা সনের।
বাংলা বর্ষের মাসগুলোর নামকরণ হয়েছে বিভিন্ন নক্ষত্রের নামে।
বাংলা একাডেমি বেশ কিছু সংশোধন আনার পর ১৯৬৬ সাল থেকে বঙ্গাব্দের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের অনুযায়ী প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল পালিত হয়ে আসছে।
পান্তা ইলিশ, বৈশাখী মেলা আর মঙ্গল শোভাযাত্রার বাইরেও যে এই উৎসব যে আরও অনেক বিস্তৃত, তা আমরা অনেকেই তেমন একটা জানি না। এই যেমন: দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক অঞ্চলে, এমনকি আমাদের দেশেও অনেক সম্প্রদায় ফসল তোলার এই মৌসুমে উৎসব আনন্দে উদযাপন করে।
প্রতি বছর বৈশাখের এই সময়টাতেই পার্বত্য চট্টগ্রামের নৃগোষ্ঠীরাও তিন দিনব্যাপী বৈসাবি উৎসব করে। ত্রিপুরাদের বৈসু; মারমাদের সাংগ্রাই, ম্রোদের সাঙ্করান, কায়াংদের সাঙ্করান, খুমিদের সাঙ্করাই; এবং চাকমাদের বিজু এবং তঞ্চঙ্গ্যাদের বিসু- এমন বেশ কয়েকটি স্বতন্ত্র উৎসবের নামের সংক্ষিপ্ত রূপ হলো এই বৈসাবি।
ভিন্ন ভিন্ন নৃগোষ্ঠীর বৈসাবি উদযাপনে কিছু ভিন্নতাও আছে। চাকমারা নববর্ষের আশীর্বাদ পেতে উৎসবের প্রথম দিন ভোরবেলা নদী ও হ্রদে ফুল দিয়ে ‘ফুলবিজু’ উদযাপন করে। আর চৈত্রের শেষ দিনে ‘মুলবিজু’তে পাজনের সুগন্ধে ভরে ওঠে পাহাড়গুলো। পাজন হলো ২০টিরও বেশি সবজি দিয়ে রান্না করা একটি সুস্বাদু খাবার। উৎসবের শেষ দিন অর্থাৎ নতুন বছরের প্রথম দিনটিকে বলা হয় ‘গজ্যা পজ্যা দিন’; এই দিনে নতুন বছরে সবার জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রার্থনা করা হয়।
বাংলা নববর্ষ হিসেবে আমরা যে বিষয়টিকে জানি এটা দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় অন্তত তিন হাজার বছর ধরে চলমান এক শক্তিশালী সংস্কৃতি। এপ্রিল মাসের সবচেয়ে গরম দিনগুলোতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এটি পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, চীনের ইউনান প্রদেশের দাই জনগণ, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, থাইল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কার মতো দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে নববর্ষ উদযাপিত হয়।
দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্যগত নববর্ষ মেষ তারকামণ্ডলে সূর্যের প্রবেশের উপর ভিত্তি করে সংঘটিত হয়। আধুনিক সময়ে, এটি সাধারণত ১৪ এপ্রিলের কাছাকাছি সময়ে গণনা করা হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশে যেমন ভারতের কয়েকটি রাজ্য, মিয়ানমার, নেপাল, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামে এই নববর্ষ উদযাপিত হয়।
যেহেতু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ ও সংস্কৃতি বৃহত্তর বাংলা এবং ভারতীয় সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের মধ্যে রয়েছে, তাই তাদের ঐতিহ্যবাহী বর্ষপঞ্জির বিকাশ হিন্দু পঞ্জিকার কোনো না কোনো রূপ দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত হয়েছে। অন্যান্য অনেক পঞ্জিকার মতো, নতুন বছরটি উত্তর গোলার্ধের মহাবিষুব (বসন্তের শুরু) -এর উপর ভিত্তি করে ছিল। যাইহোক, হিন্দু পঞ্জিকা বছরটি ছিল পার্শ্বীয় বছরের (অর্থাৎ তারার সাপেক্ষে সূর্যের গতিবিধি) উপর ভিত্তি করে, যখন পাশ্চাত্যের গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি গ্রীষ্মমন্ডলীয় বছরের (ঋতু চক্র) উপর ভিত্তি করে।
প্রাচীনকালে, মেষ তারকামণ্ডলে সূর্যের প্রবেশ বিষুব এর সাথে মিলে যায়। যাইহোক, পৃথিবীর অক্ষীয় অয়নচলনের কারণে, পার্শ্বীয় বছর গ্রীষ্মমন্ডলীয় বছরের তুলনায় কিছুটা দীর্ঘ, যার ফলে তারিখগুলি ধীরে ধীরে আলাদা হয়ে যায়। ইদানিং, জ্যোতির্বিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুসারে, মেষ তারকামণ্ডলে সূর্যের প্রবেশ ১৮ এপ্রিলের কাছাকাছি ঘটে। কিছু ঐতিহ্যবাহী বর্ষপঞ্জিকা এখনও সূর্যের প্রকৃত গতিবিধি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে যখন অন্যগুলি গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জিতে স্থির করা হয়েছে।
মেষ তারকামণ্ডলে সূর্যের প্রবেশ সংস্কৃতে মেষ সংক্রান্তি নামে পরিচিত এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সংস্কৃতিতে মেষ সংক্রান্তি এবং সংক্রান হিসাবে পালন করা হয়।
এই উৎসবটি অঞ্চলভেদে ১৩ এপ্রিলে শুরু হয়ে পুরো এশিয়াজুড়ে চলতে থাকে এবং শেষ হয় ১৭ এপ্রিলে। সাতদিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠান হচ্ছে কৃষিনির্ভর ও সূর্যনির্ভর মানবজাতির একটি মহত্তম উৎসব।
বাংলা নববর্ষ হিসেবে আমরা যে বিষয়টিকে জানি এটা দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় অন্তত তিন হাজার বছর ধরে চলমান এক শক্তিশালী সংস্কৃতি। এপ্রিল মাসের সবচেয়ে গরম দিনগুলোতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এটি পালিত হয়ে আসছে।
ভারতে নববর্ষ
ব্রিটিশ শাসনের সময় ভারতে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রচলন শুরু হয়। কিন্তু তারও বহু বছর আগে থেকে পঞ্জিকা দেখে দিনক্ষণ উদযাপন করা হত। এখনো ভারতের কয়েকটি রাজ্যে বৈশাখ মাসের প্রথম দিন নববর্ষ উদযাপন করা হয়। হিন্দু সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, মনিপুর, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিল নাড়ু এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন নামে পালন হয় বৈশাখের প্রথম দিন। যেমন: পাঞ্জাবে-বৈশাখী, কেরালায়-ভিষু, আসামে-বিহু, তামিল নাড়ুতে-পুথান্দু, উড়িষ্যায়-পান সংক্রান্তি, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায়-পহেলা বৈশাখ।
মিয়ানমারে নববর্ষ
মিয়ানমারের নববর্ষকে স্থানীয়ভাবে থিংইয়ান নামে ডাকা হয়। বার্মিজ ভাষায় এর অর্থ ‘পরিবর্তন’ বা ‘এক জায়গা থেকে অন্যত্র স্থানান্তর’। নতুন বছরের প্রথম দিনটি সাধারণত মধ্য-এপ্রিলে হয়ে থাকে, তবে ঠিক কোন নির্দিষ্ট দিনে তা পালন হবে তা হিসাব করা হয় মিয়ানমারের সৌর এবং চন্দ্র পঞ্জিকার গণনা মিলিয়ে। থিংইয়ানের দিনে বার্মা বা মিয়ানমারজুড়ে পানি উৎসব হয়, নববর্ষের চারদিন আগে থেকে এ উৎসব শুরু হয়, চলে নববর্ষের দিন পর্যন্ত। দেশটির মানুষের বিশ্বাস, পানি উৎসবের পানির ছোঁয়া লাগতে হবে সব মানুষের গায়ে, তাতে করে সব পাপ দূর হয়ে যাবে। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো পানি উৎসবের একটি। দেশটির মানুষ ৫০০ বছরের বেশি সময় ধরে পালন করে আসছে এ উৎসব।
নেপাল
বৈচিত্র্যময় উৎসবের দেশ নেপালে, অসংখ্য উৎসবের মাঝে অন্যতম হলো নববর্ষ। নেপালের নববর্ষ অর্থাৎ বিক্রম সম্বত ক্যালেন্ডারের প্রথম দিনটি সাধারণত এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে পড়ে। নববর্ষ উপলক্ষে ভক্তপুরে বিস্কেত যাত্রা (বা বিস্কেতের উৎসব) অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবে মহাভারতের যুদ্ধকে স্মরণ করা হয়। এই দিনটিতে পাহাড়ের কোলের ছোট্ট শহর ভক্তপুরে নিচু অংশের বাসিন্দা বনাম উঁচু অংশের বাসিন্দাদের মধ্যে দড়ি টানাটানির খেলা হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস, বিজয়ী অংশের উপর নতুন বছরে আশীর্বাদ বর্ষিত হবে।
১৪ এপ্রিল নেপালের আনুষ্ঠানিক বর্ষ পঞ্জিকা বিক্রম সম্বতের প্রথম দিন। যা মূলত প্রাচীন হিন্দু রীতি অনুযায়ী তৈরি করা হয়, এ দিনে নেপালে নববর্ষ উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকে। এ দিনে বৈশাখ উৎসব নামে সার্বজনীন এক উৎসব হয় দেশজুড়ে। দিনটিতে উৎসবের আমেজে ভালো খাওয়া-দাওয়া, শুভেচ্ছা বিনিময় আর নানা খেলাধুলার আয়োজন করা হয়।
থাইল্যান্ডে নববর্ষ
থাইল্যান্ডের নতুন বছরের শুরুর দিনটি সংক্রান উৎসব নামে পরিচিত। সংক্রান শব্দটি সংস্কৃত ভাষার শব্দ সংক্রান্তি থেকে এসেছে। থাইল্যান্ডে মূলত এটি এপ্রিলের ১৩ তারিখে শুরু হয়, কিন্তু এ উৎসব চলে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত। ২০১৮ সালে থাই সরকার উৎসবের দৈর্ঘ্য ১২ই এপ্রিল থেকে ১৬ই এপ্রিল পর্যন্ত ঘোষণা করেছে। থাই ও মালয়েশিয়ান সিয়ামিজ গোত্রের মানুষেরাই মূলত ধর্মীয় রীতি মেনে এ উৎসব পালন করেন, কিন্তু উদযাপন হয় দেশজুড়ে। এদিন আয়োজন হয়ে থাকে সবচেয়ে বড় পানি উৎসব। যাতে অংশ নেন নানান শ্রেণি পেশার মানুষ।
এই উৎসবের মূল আকর্ষণ হলো ব্যাংককের জনপ্রিয় এলাকা খাও সান রোডে উদযাপিত জল উৎসব। উৎসবের এই সময়টায় ঘরের বাইরে বেরিয়ে এসে সবাই মিলে জলের উৎসবে মেতে ওঠা শুধু থাইল্যান্ডেই নয়, মিয়ানমার এবং লাওসেও খুব জনপ্রিয় একটি ব্যাপার।
শ্রীলঙ্কায় নববর্ষ
শ্রীলঙ্কায় এটিকে সিনহালা নববর্ষকে স্থানীয়ভাবে আলুথ আবুরুদ্ধাও বলা হয়। যার অর্থ হলো—সকল মানুষ উদযাপনে সামিল হন। উৎসব চলে এক সপ্তাহ ধরে। সিনহালা নববর্ষের সাথে তামিল নববর্ষের উদযাপনে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। উৎসবকে ঘিরে পিঠা, মিষ্টি আর পায়েস বানানো হয়। এ উপলক্ষে বিভিন্ন খেলাধুলা আর প্রতিযোগিতার আয়োজন বেশি দেখা যায়।
কম্বোডিয়ায় নববর্ষ
১৪ই এপ্রিলকে কম্বোডিয়া নাগরিকেরা ‘খেমার নববর্ষ’ উৎসব বলে পালন করে থাকে। দেশটিতে দিনটিকে বলা হয় ‘চউল সানাম থামাই’, এর মানে নতুন বছরে প্রবেশ করা। খেমার নববর্ষে কম্বোডিয়াতে নানা ধরণের লোকজ খেলা এবং প্রতিযোগিতা হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে রশি বা দড়ি টানাটানি খেলা হয়, অধিকাংশ এলাকায় নারী বনাম পুরুষের মধ্যে হয় এই খেলা। তাতে অংশ নেন বাচ্চা-বুড়ো সবাই।
ভিয়েতনামে নববর্ষ
লাওসেও সৌর পঞ্জিকা অনুযায়ী বৈশাখের প্রথম দিনটি পালন করা হয়। স্থানীয়ভাবে এর নাম সংক্রান বা পি-মেই, যার মানে নতুন সংক্রান্তি বা নতুন বছর। দেশটিতে তিন দিন ধরে চলে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
লাওসের নববর্ষ উদযাপন অনেকটাই প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের মতো। তিনটি দিন- সংক্রান লুয়াং (পুরানো বছরের শেষ দিন), সংক্রান নাও (কোনো বছরেরই অংশ নয়) এবং সংক্রান কেউন পি মাই (নতুন বছরের প্রথম দিন) নামে পরিচিত। স্থানীয়রা তাদের সবচেয়ে ভালো রেশমি পোশাক পরিধান করে এবং বাচি উদযাপন করে। অন্য দেশগুলোর মতো, এখানেও শোভাযাত্রা, মেলা, নানা রকম রীতি, সঙ্গীত এবং নৃত্যের আয়োজন হয়। কিন্তু এর বাইরেও, মিস নিউ ইয়ার (নাং সংখান) নামে একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া চায়নার ইউনান প্রদেশের দাই জনগোষ্ঠীর ট্র্যাডিশনাল নববর্ষ উৎসব পালিত হয় এই মধ্য এপ্রিলেই। কাশ্মীরের নববর্ষের নাম নাবরেহ, যা এপ্রিলের শুরুতে অথবা মার্চের শেষে পালিত হয়।
আফগানিস্তানে ‘নওরোজ’ নামে নববর্ষ উৎসব পালিত হয়ে ২১ মার্চ তারিখে।
এতগুলো নববর্ষ এটাই প্রমাণ করে যে, এপ্রিল মাস তথা বাংলা চৈত্র-বৈশাখ মাসে অধিকাংশ এশিয় অঞ্চলে নববর্ষ পালিত হত। কারন ছিল, এখানকার আবহাওয়া এবং প্রকৃতি। ফসল পাকার পর কেটে ঘরে তুলে প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে করতে চৈত্র মাস এসে যেত এবং সেই সময়ে তৎকালীন প্রচলিত খাজনা প্রথা’র কর প্রদান করে বিগত বছরের হিসেব মেটানো হত এই সময়ে। ফলে বর্ষ শুরুর গণনার জন্য এই সময়টাই অত্র দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জনপ্রিয় ছিল। সম্রাট আকবরের প্রচলিত অধুনা বাংলা নববর্ষ ক্যালেন্ডার একই কারনে বৈশাখ মাসকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে গ্রহণ করেছিল।
যে দেশেই বসবাস হোক না কেন, বছরের এই সময়টায় এসে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক জাতিগোষ্ঠীই আমাদের মতো করে একটি বছর শেষ করে এবং নতুন একটি বছরকে বরণ করে নেয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৫৮
আপনার মতামত জানানঃ