ভূমধ্যসাগর বিতর্কে ইউরোপ ইউনিয়নের পক্ষে থেকে তুরস্কের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইউরোপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে রয়টার্স ও এপি জানাচ্ছে। সঙ্কট নিরসনে ইউরোপ ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তুরস্কের প্রতি বারবার আলোচনার তাগিদ দেওয়া হলেও এর্দোয়ান আলোচনার পথ এড়িয়ে বির্তকিত বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয়ে বিশ্ব রাজনীতির নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু হওয়াতে এবং আগামী ১০ ডিসেম্বর বিষয়টি নিয়ে ইউরোপ ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠককে সামনে রেখে তুরস্ক কর্তৃপক্ষের সুর কিছুটা নমনীয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভূমধ্যসাগর বির্তকে এখন এর্দোয়ান চাইছেন আলোচনা। ইউরোপ ইউনিয়ন এতদিন আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাটি নিরসন করার জন্য তুরস্ক কর্তৃপক্ষকে বলে আসছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান সে পথে না হেটে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে যাচ্ছিলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে এ বার তুরস্কের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির পরিকল্পনা ইউরোপ ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর পক্ষ থেকে আরো জোরদার হলো।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বলেন, তুরস্ক যে আচরণ করছে, তাতে তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা না চাপিয়ে আর কোনো উপায় নেই। আগামী ১০ তারিখ বৈঠকে বসবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সেখানেই সিদ্ধান্ত হতে পারে। ফ্রান্সও চাইছে ইইউ তুরস্কের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করুক। সম্প্রতি ফ্রান্সে শিক্ষক হত্যাকে কেন্দ্র করে তুরস্ক এবং ফ্রান্সের মধ্যে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তখন থেকেই ফ্রান্স চাইছে, তুরস্কের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হোক।
গত অগাস্ট মাস থেকে গ্রিস এবং তুরস্কের মধ্যে বিতর্ক চলছে। ভূমধ্যসাগরের একটি অংশে খনিজ তেলের সন্ধান মিলেছে। কী ভাবে সেই খনিজসম্পদ উত্তোলন করা সম্ভব তা দেখার জন্য সেখানে জাহাজ পাঠিয়েছে তুরস্ক। এদিকে গ্রিসের দাবি ওই এলাকা তাদের। ফলে দ্রুত তুরস্ককে জাহাজ সরিয়ে নিতে বলে গ্রীস। গত চার মাসে তুরস্ক একবারই কেবল ভূমধ্যসাগরের ওই এলাকা থেকে জাহাজ সরিয়েছিল। কিন্তু তারপর আবার তারা সেখানে জাহাজ পাঠায়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান জানিয়ে দেন, তেল উত্তোলনের পরীক্ষা তারা বন্ধ করবে না, চলমান থাকবে। কারো নিষেধ তুরস্ক মানবে না, কারণ ওই এলাকা গ্রিসের নয় বলে দাবী করে আসছিল তুরস্ক।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরেই এই বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছে। গ্রিসের পাশাপাশি তারাও তুরস্ককে জাহাজ সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেছিল। কিন্তু তুরস্ক তাতে কান দেয়নি। ইইউ চেষ্টা করেছিল গ্রিস, তুরস্ক এবং সাইপ্রাসকে একসঙ্গে বসিয়ে বৈঠক করার। কিন্তু সেই উদ্যোগও সফল হয়নি। এই পরিস্থিতিতেই সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়, সেখানে তুরস্কের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। বৈঠকে ইউরোপ ইউনিয়নের শক্তিশালি দেশগুলো চাইছে তুরস্কের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক।
নিষেধাজ্ঞা চাপলে তুরস্কের সঙ্গে অস্ত্রের ব্যবসা বন্ধ হতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের। তেল এবং খনিজের উপরেও নিষেধাজ্ঞা চাপানো হতে পারে।
এমন পরিস্থিতি প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানেে কণ্ঠে ভিন্নসুর পরিলক্ষিত হচ্ছে। সোমবার গণমাধ্যমকে বলেছেন গ্রিসের সঙ্গে বৈঠকে বসতে তিনি রাজি। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিষয়টিকে অন্ধের মতো দেখছে বলে দাবি করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, বিতর্কটি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে আচরণ করছে, তা আশাব্যঞ্জক নয়। বিশ্ববাসী এখন আগামী ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ইউরোপ ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছে।
এসডব্লিউ/নসদ/২৩৩০
আপনার মতামত জানানঃ