সম্প্রতি দেশে কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এসব অপরাধ ও অপকর্মের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্বে অবহেলা ও ঘুষ গ্রহণ ছাড়াও চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, এমনকি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার মতো ঘৃণ্য অপরাধও আছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ কর্মকর্তার (এসআই) বিরুদ্ধে। তবে পুলিশ কর্মকর্তাকে কুপিয়ে নিজের সম্ভ্রম রক্ষা করেছেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ।
অভিযুক্তের নাম আলমগীর হোসেন। তিনি উপজেলার তারাবুনিয়া পুলিশ ক্যাম্পে কর্মরত। আহত আলমগীর অজ্ঞাত স্থানে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
উপজেলার পাটিখালঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শাহিন হাওলাদার জানান, তারাবুনিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র এলাকায় ওই নারীর বোনজামাইয়ের একটি চায়ের দোকান রয়েছে। বোনজামাইয়ের দোকানে মাঝে মধ্যে যাতায়াতের সুবাদে এসআই আলমগীরের সঙ্গে ওই নারীর পরিচয় হয়। তার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় টাকা ধারও নিয়েছেন আলমগীর।
৪ এপ্রিল ওই নারীর বাড়িতে যান এসআই আলমগীর। তার স্বামী চট্টগ্রামে চাকরি করেন। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে তাকে ধর্ষণচেষ্টা করেন। নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আলমগীরকে কুপিয়ে রক্ষা পান তিনি। এ সময় আলমগীরের ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও রেখে দেন ভুক্তভোগী নারী।
ভুক্তভোগী নারী জানান, তাকে ঘরে একা পেয়ে ধর্ষণচেষ্টা করেন আলমগীর। এ সময় নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে আলমগীরকে কুপিয়ে ৯৯৯-এ ফোন করেন। খবর পেয়ে কাঁঠালিয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই এসআই আলমগীর পালিয়ে যান। এ বিষয়ে তিনি থানায় অভিযোগ করতে চাইলে পুলিশ আগে মেডিকেলে গিয়ে পরীক্ষা করাতে বলে।
এ সময় নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে আলমগীরকে কুপিয়ে ৯৯৯-এ ফোন করেন। খবর পেয়ে কাঁঠালিয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই এসআই আলমগীর পালিয়ে যান।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি। মামলা করলে পুলিশও মামলা করবে বলে লোক পাঠিয়ে তাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে তিনি বোনের বাসায় রয়েছেন।
কাঁঠালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুরাদ আলী জানান, সোমবার রাত ৮টার দিকে ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে ধর্ষণচেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ওই নারী। খবর পেয়ে সেখানে যাওয়া হয়।
তাঁরাবুনিয়া পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক মাহাবুবুর রহমান বলেন, আমি এ ধরনের একটি ঘটনার কথা শুনেছি। কিন্তু আমি ছুটি শেষে মঙ্গলবার ক্যাম্পে ফিরে কিছুই জানি না। আমি এখন সাক্ষী দিতে কুষ্টিয়া যাচ্ছি। এসআই আলমগীর ক্যাম্পেই রয়েছেন।
বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসা অব্যাহত রয়েছে। কোথাও মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগ আসে পুলিশের বিরুদ্ধে, কোথাওবা অস্ত্র বিক্রয়কারী হিসাবে, কোথাওবা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ, অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ, পুলিশের নেতৃত্বে মাদক পাচার চক্র গড়ে ওঠার অভিযোগ, চুরি ডাকাতি ইত্যাদি হেন কোনো অপরাধ নেই যা পুলিশ শব্দটির সাথে জুড়ে বসে নাই। প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে এমনসব অভিযোগ আসে। এমনকি আসছে ধর্ষণের অভিযোগও।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার হার আশংকাজনক। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে বিভিন্ন অপকর্মের। এবিষয়ে পুলিশের কর্তৃপক্ষসহ দেশের সরকাকেও নজর বাড়াতে হবে। কেননা, আইন রক্ষাকারী কর্তৃক একেরপর এক আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডে দেশের আইনের প্রতি মানুষের অনাস্থা জন্মাবে। ফলশ্রুতিতে দেশে দেখা দিবে বিশৃঙ্খলা।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনের খড়্গ চালানোর আগে পুলিশের ওপর চালানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, আগে পুলিশকে অপরাধমুক্তের চরিত্র অর্জন করতে হবে। নইলে সন্ত্রাসীদের নিকট পুলিশের যে ভাবমূর্তি সৃষ্টি হচ্ছে, এতে পুলিশ আর সন্তাসীদের মধ্যকার তফাৎ ঘুচে যায়।
তারা বলেন, তাদের বড় ধরনের মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ জরুরি। তাদের আচার ব্যবহার সম্পর্কে আরও সচেতনতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। চেইন অব কমান্ডে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। উনবিংশ শতাব্দীর পুলিশ দিয়ে এই যুগে চলতে পারে না। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ, শাস্তির ব্যবস্থা, ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে দ্রুততম সময়ে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮০১
আপনার মতামত জানানঃ