
বিগত প্রায় দু বছরের বেশি সময় ধরে গোটা পৃথিবী জুড়ে রাজ করে চলেছে করোনা। এই করোনাভাইরাস রুখতে দিন রাত ২৪ ঘন্টা কাজ করে চলেছেন বিশ্বের লক্ষ লক্ষ বিজ্ঞানীরা। করোনাভাইরাস কে রোধ করতে আবিষ্কৃত হয়েছে করোনার ভ্যাকসিন। বিভিন্ন নিয়ম ভ্যাকসিন দিয়েও করোনার প্রকোপ শেষ করা যাচ্ছে না পৃথিবী থেকে।
বারবারই করোনা তার নিজের রূপ পরিবর্তন করে আক্রমণ শানানো মানুষের শরীরে। এই অবস্থায় এবার কানাডার স্কারবরোয় টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা দাবি করলেন, বাড়িতে, অফিস বা রাস্তাঘাটে যে এলইডি (LED) বাল্ব এখন লাগানো হয় তার আলোই করোনা ভাইরাস আর এডস (AIDS) ভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে অনায়াসে। খবর এবিপি।
তাদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘ভাইরোলজি জার্নাল’-এ।গবেষকরা বহু জায়গায় পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, এলইডি-অতিবেগুনি রশ্মির সেই বাল্বের আলো চটজলদি মেরে ফেলতে পারে করোনাভাইরাসের সবক’টি রূপকেই। মেরে ফেলতে পারে এডস ভাইরাস এইচআইভি-কেও।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই অতিমারিতে ভাইরাস মারার নতুন নতুন পথ বার করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এই পদ্ধতির জনপ্রিয় হয়ে ওঠার দু’টি কারণ রয়েছে। প্রথমত, এই ধরনের আলোর বাল্বের দাম খুব বেশি নয়। আর দ্বিতীয়ত, রাস্তাঘাটের যে কোনও আলোকে খুব সহজেই এই ধরনের আলোয় বদলে ফেলা যায়।
গবেষকরা জানিয়েছেন, মাইক্রোচিপ ব্যবহার করে রাস্তাঘাটের সব এলইডি-ইউভি আলোকেই খুব সহজে করোনাভাইরাস ও এইচআইভি ভাইরাস মারার অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত প্রমাণিত হলেও এইডস ভাইরাসও বাতাসে ভাসে তেমন কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত মেলেনি। তবে যেখানে এইডস ভাইরাস রয়েছে সেখানে এলইডি-ইউভি আলো ফেললেই ভাইরাস নিকেশ হবে।
অতিবেগুনি রশ্মি ভাইরাস মারে তীব্র বিকিরণের মাধ্যমে। সেই অতিবেগুনি রশ্মিরও পরোয়া করে না বিশেষ এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার বীজগুলি। যার নাম: ‘ব্যাসিলাস পুমিলাস স্পোর’। ফুলের রেণু যেমন হয় অনেকটা তেমনই এই ব্যাক্টেরিয়ার বীজগুলি।
এলইডি-অতিবেগুনি রশ্মির সেই বাল্বের আলো চটজলদি মেরে ফেলতে পারে করোনাভাইরাসের সবক’টি রূপকেই। মেরে ফেলতে পারে এইডস ভাইরাস এইচআইভি-কেও।
গবেষকরা খুব বেশি কম্পাঙ্কের আরও শক্তিশালী অতিবেগুনি রশ্মি ফেলেছিলেন ব্যাসিলাস পুমিলাস স্পোর-এর উপর। তাতে তারা দেখেন, অতিবেগুনি রশ্মির সেই ঝাপ্টা সামলাতে পারছে না ব্যাক্টেরিয়া। মরে যাচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে। গবেষকরা দেখেছেন, অতিবেগুনি রশ্মি এসে পড়ার ২০ সেকেন্ডের মধ্যেই ওই ব্যাক্টেরিয়ার ৯৯ শতাংশ মরে যাচ্ছে।
গবেষকদের বক্তব্য, ওই ব্যাক্টেরিয়াই যদি মরে যায় শক্তিশালী অতিবেগুনি রশ্মির ঝাপ্টায় তা হলে অন্য ভাইরাসরাই বা মরবে না কেন।
গবেষকরা তার পর পরীক্ষা চালান করোনাভাইরাসের সবক’টি রূপ এবং এইডস ভাইরাসের উপর। হাঁচি, কাশির সঙ্গে বেরিয়ে আসা ড্রপলেট থেকেই করোনাভাইরাস আর এইডস ভাইরাস সংক্রমিত হয় বলে (ফারাকটা হল, এইডস ভাইরাস বায়ুতে ভাসে না। ড্রপলেটের সঙ্গে সরাসরি ছিটকে গিয়ে ঢোকে আর এক জনের দেহে), তারা সেই ড্রপলেটের উপরেই ফেলেছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী অতিবেগুনি রশ্মি। সেই সময় ড্রপলেটগুলিকে রেখেছিলেন গবেষণাগারে নানা ধরনের রাসায়নিক দ্রবণ থাকা পেট্রি ডিশে। তারা দেখতে চেয়েছিলেন শক্তিশালী অতিবেগুনি রশ্মি এসে পড়লে করোনাভাইরাস এবং এইডস ভাইরাসের কী হাল হয়।
গবেষকরা দেখেছেন, অতিবেগুনি রশ্মির ঝাপ্টায় ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই সংক্রমণের ৯৩ শতাংশ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে করোনাভাইরাস এবং এইডস ভাইরাস। তবে ভাইরাসের সংখ্যা (‘ভাইরাল লোড’) যত বাড়ে অতিবেগুনি রশ্মির ঝাপটা তত বেশি সময় ধরে সইতে পারে ভাইরাসগুলি। তা সত্ত্বেও অতিবেগুনি রশ্মির ঝাপটার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই ভাইরাস দু’টি তাদের সংক্রমণের ৮৮ শতাংশ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
তারা এও দেখেছেন, এক বারের আলোর ঝাপটায় যদি কয়েকটি ভাইরাস বেঁচেও যায় তা হলে আরও দু’-তিন বারের ঝাপটায় তারা প্রায় নির্বংশই হয়ে যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০১
আপনার মতামত জানানঃ