এই সময়ে পাকিস্তানকে ঘিরে সবথেকে বড় যে প্রশ্নটা উড়ছে তা হল, দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কি গদি হারাবেন। ইমরানের গদি হারানোর জল্পনার মাঝেই নয়া পাক প্রধানমন্ত্রীর নামও ভেসে উঠেছে। সূত্রের খবর, নয়া প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ)-এর নেতা শাহবাজ। এদিকে, আজ ৩০ মার্চ পর্যন্ত পাক সংসদের অধিবেশন স্থগিত করা হয়েছিল।
আগামী রবিবার পাক পার্লামেন্টে ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব ঘিরে ভোটাভুটির কথা। কিন্তু তার আগেই একের পর এক সহযোগী প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকারের উপর থেকে প্রকাশ্যে সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা করছে। এই পরিস্থিতিতে ভোটাভুটির আগেই তিনি ইস্তফা দিতে পারেন বলে জল্পনা ক্রমশ বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে বুধবার বিকেলে ইমরানের সঙ্গে পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়ার বৈঠকের পরে সেই জল্পনা আরও দৃঢ় হয়েছে। ইমরান বুধবার সহযোগী এবং দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পরে জাতির উদ্দেশে ভাষণে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করতে পারেন বলে পাক সংবাদমাধ্যমের একটি সূত্রের দাবি। যদিও ইমরানের দফতর থেকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
গত রবিবার সমর্থন প্রত্যাহার করেন জামহুরি ওয়াতন পার্টির এক সদস্য। এই পরিস্থিতিতে গদি বাঁচাতে মরিয়া ইমরান খান ওইদিনই তার দলের পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়েছেন। ওই পদটি আর এক ‘বিক্ষুব্ধ সহযোগী’ পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদ (পিএমএল-কিউ)-কে দেওয়ার জন্যই এমন পদক্ষেপ। প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে (পিএমএল-কিউ)-এর সদস্য সংখ্যা ৫।
জানা যায়, দু’দিনের বিরতির পর গত সোমবার শুরু হয় পাক পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন। আর শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করল সম্মিলিত বিরোধী পক্ষ। কিন্তু সেই প্রস্তাব ঘিরে বিতর্কের আগেই আগামী বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) পর্যন্ত সভা মুলতুবি ঘোষণা করন ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। ওই দিনই বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব ঘিরে বিতর্ক হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর মধ্যেই পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশ গত সোমবার দাবি করেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর বার্তা স্পষ্ট হওয়ায় ভোটাভুটির আগেই ইস্তফা দিতে পারেন ইমরান।
এরই মধ্যে সোমবার পাকিস্তান মুসলিম লিগ (কায়েদ)-এর তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে ইমরান সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
৩৪২ আসনের পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের ‘জাদু সংখ্যা’ ১৭২। ইমরানের নিজের দল পিটিআই-এর সদস্য ১৫৫ জন। বুধবার ইমরান সরকারের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়া মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি)-এর ৭ এবং বালুচিস্তান আওয়ামি পার্টি (বিএপি)-র ৫ সদস্য রয়েছেন। রবিবার সমর্থন প্রত্যাহারকারী জামহুরি ওয়াতন পার্টির রয়েছেন এক সদস্য।
অন্য দিকে, বিরোধী পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর ৮৪ এবং পাকিস্তান পিপল্স পার্টি (পিপিপি)-র ৫৬ জন সদস্য রয়েছেন। সব মিলিয়ে সম্মিলিত বিরোধী জোটের সদস্য ১৬০-এরও বেশি। তা ছাড়া, ইমরানের দলের ১৫৫ জনের মধ্যে অন্তত ৩০ জন বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে পাক সেনার তরফেও ইমরানকে ইস্তফার ‘বার্তা’ পাঠানো হয়েছে বলে সে দেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে রবিবার ইসলামাবাদে পিটিআই-এর জনসভায় প্রধানমন্ত্রী ইমরান অভিযোগ করেন, বিদেশি অর্থে পাকিস্তানে সরকার বদলের ষড়যন্ত্র চলছে। কারণ তাঁর সরকার পাকিস্তানকে স্বাধীন বিদেশনীতির পথে নিয়ে যাচ্ছে। যা কিছু প্রভাবশালী ‘বিদেশি’ শক্তির পছন্দ হচ্ছে না।
সূত্র মতে, পরবর্তী জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদে পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ)-এর নেতা শাহবাজ শরিফকে দেখা যেতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে কয়েকটি খবরে।
এসডব্লিউ/এসএস/২১৩০
আপনার মতামত জানানঃ