বাংলাদেশে ২০২১ সালেও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে খর্ব হয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সোমবার অ্যামনেস্টির ‘দ্য স্টেট অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস হিউম্যান রাইটস’ শীর্ষক প্রতিবেদন এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হয়ে উল্লেখ করে সরকারের বিরুদ্ধে গুম, বেআইনিভাবে আটক, নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তুলেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দল ও শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি অ্যামনেস্টির। কখনও কখনও এসব ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগও করা হয়েছে।
কোভিড ১৯ মহামারির সময়ে নারীর প্রতি নির্যাতনের মাত্রাও বেড়েছে। সহিংসতা মুখে পড়তে হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেদেরও।
১৫৪ দেশের মানিবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি এই প্রতিবেদনে করোনাকালীন সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে বলেও জানায় অ্যামনেস্টি।
প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তারসহ কয়কটি ঘটনারও উল্লেখ করেছে অ্যামনেস্টি। এছাড়া সরকার বেশ কিছু ওয়েবসাইটও বন্ধ করেছে।
এছাড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলা ও পুজামণ্ডপে হামলা চালানোর কিছু ঘটনার কথাও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। এক্ষেত্রে আগের ঘটনাগুলোর বিচার না হওয়াকেই মূলত দায়ী করা হয়েছে।
১৫৪ দেশের মানিবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি এই প্রতিবেদনে করোনাকালীন সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে বলেও জানায় অ্যামনেস্টি।
অন্যদিকে ভূমি দখল ও বন উজারের কারণে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মানুষেরা তাদের সম্পদ হারানোর শঙ্কায় ছিলেন এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং শরণার্থীরা সহিংস হামলার শিকার হয়েছেন বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের ২০২১-২২ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
আইন ও শালিস কেন্দ্রের তথ্য দিয়ে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে রাজনৈতিক সংঘাতে ১৫৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ হাজার ৮৩৩ জন।
বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথবা বছরজুড়েই তাদের কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে বাধা দেওয়া হয়েছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে দমন করা হয়েছে।
নির্যাতনের প্রসঙ্গে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের প্রসঙ্গ টেনেছে অ্যামনেস্টি। সঙ্গে লেখক মুশতাক আহমেদের কথাও বলেছে তারা।
আইন ও শালিস কেন্দ্রের তথ্য দিয়ে ২০২১ সালে ৮০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে অ্যামনেস্টি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে কালো আইনের মাধ্যমে সরকার তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়। কেউ যেন এই সরকারের নানা দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারে, সেই জন্যই এই সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট তৈরি করে মানুষের মুখ বন্ধ রাখতে চায়।
তারা বলেন, আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা— এটা সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। যে অধিকার আইন করেও খর্ব করা যায় না। দুর্ভাগ্যবশত আজকে স্বাধীনতার সুর্বণ জয়ন্তী উদযাপন করার পরও আমরা এই স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছি।
তারা বলেন, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার যেখানে স্বীকৃত, সেখানে তার অপব্যবহার হতেও পারে। তবু সেই অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসনের কথা স্মরণ করতে পারি: ‘জনগণের ইচ্ছাই যেকোনো সরকারের একমাত্র বৈধ ভিত্তি; আর আমাদের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করা।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৪৮
আপনার মতামত জানানঃ