
পঞ্চগড়ে পচা বাসি খাবার খেয়ে ১৪ জন শিশু, একজন শিক্ষক ও বাবুর্চি অসুস্থ হয়েছে। ঘটনাটি মঙ্গলবার বিকালে দেবীগঞ্জ উপজেলার আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া এতিমখানা মাদ্রাসায়। এ ঘটনায় অসুস্থ অবস্থায় তাদের সবাইকে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।খাদ্যে বিষক্রিয়ায় এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকেরা।
অসুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান, বাবুর্চি জামিলা বেগম এবং হেফজ শাখা, নুরানি শাখা ও নাজেরা শাখার ছাত্র আছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে সাদা ভাত ও আলুর ডাল খাওয়ার জন্য রান্না করেন। ছাত্র ও শিক্ষক খাওয়ার পরে অতিরিক্ত হিসেবে ডাল অবশিষ্ট রয়ে যায়। দুপুরে মাদ্রাসার শিক্ষক সেই ডালের সাথে গরম ভাত শিক্ষার্থীদের খাওয়ান। এসময় শিক্ষার্থীরা ওই খাবার খাওয়ার পর বিকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে এক এক করে ওই এতিমখানার শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়লে বিষয়টি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। পরে অসুস্থদের উদ্ধার করে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম বলেন, গতকাল বিকেলের দিকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও ছাত্ররা পেটব্যথায় আক্রান্ত হন। বারবার বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, এমন খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাদের দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তারা বেলা আড়াইটার দিকে দুপুরের খাবার খেয়েছিল।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান আজ বুধবার সকালে জাতীয় এক দৈনিককে বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো গতকালও বাবুর্চি জামিলা বেগম দুপুরের খাবার রান্না করেন। বেলা আড়াইটার দিকে আমরা রান্না করা মসুর ডাল ও আলু দিয়ে ভাত খেয়েছি। খাওয়ার প্রায় দুই-আড়াই ঘণ্টা পর সবারই মাথা ঘোরাচ্ছিল। এরপর পেটব্যথাসহ বারবার বমি হচ্ছিল। এতে সবাই দুর্বল হয়ে পড়লে সন্ধ্যার আগে স্থানীয় লোকজন আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। খাবার খাওয়ার সময় আমরা কোনো সমস্যা বুঝতে পারিনি। তবে খাওয়ার সময় বাবুর্চি জামিলা বেগম একবার বলেছিলেন, ডালটা নাকি তার কাছে একটু টক লাগছিল।’
দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাসিনুর রহমান আজ সকালে ওই দৈনিককে বলেন, ওই মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্রসহ মোট ১৬ জন মাথাঘোরা, বমি, পেটব্যথা ও দুর্বলতা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। অতিরিক্ত বমির কারণে তাদের শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল। আমরা তাদের চিকিৎসা দিচ্ছি। তাদের সবার শরীরের অবস্থা এখন উন্নতির দিকে। খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে এমনটা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, আলিয়া মাদ্রাসা ছাড়া অন্য মাদ্রাসাগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি সেভাবে নেই। সেজন্য মাদ্রাসাগুলোতে নিম্নমানের খাবার পরিবেশনসহ যৌন নির্যাতন বা শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের সুযোগ থাকে। এছাড়া সেখানে পরিবেশ এমন যে, শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ অনেক সময় প্রকাশও হয় না। কওমি, এবতেদায়ী বা নূরানী-বিভিন্ন ধরনের মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে কর্তৃপক্ষ যারা রয়েছে, তাদের তদারকি বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩১৬
আপনার মতামত জানানঃ