নারী নির্যাতনে চতুর্থ বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিন খবরের কাগজে শিশু নির্যাতনের চিত্র উঠে আসছে। এর বাইরেও নির্যাতনের অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। নিরপরাধ শিশুরা শিকার হচ্ছে খুন, ধর্ষণ কিংবা ভয়াবহ নির্যাতনের। এসব ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দৃষ্টান্ত খুব বেশি পরিলক্ষিত হয় না। অনেক সময় ভোক্তভোগী আইনের আশ্রয় নিলেও অপরাধী ফাঁকফোকরে ছাড়া পেয়ে যায়। করোনা মহামারিতে মানুষ যখন বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছে, তখনও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ নেই বরং বেড়েছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিবেদন মতে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মোট ২৬৫ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৪৬ শিশুসহ ৭৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন। এর মধ্যে তিন শিশুসহ ১২ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার এবং এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া ছয় শিশুসহ আট নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এক শিশুসহ চার নারী শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন। এক শিশুসহ তিনজন যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদে সংরক্ষিত ১৩টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
গতকাল সোমবার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মালেকা বানু লিখিতভাবে এই প্রতিবেদন তৈরি করেন।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই মাসে অ্যাসিড দগ্ধের শিকার হয়েছেন একজন। পাঁচ শিশুসহ আটজন উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে এক শিশুসহ দুজন উত্ত্যক্তের কারণে আত্মহত্যা করেছেন। ১৩ শিশু ও নারী অপহরণের শিকার হয়েছেন। দুজনকে পতিতালয়ে বিক্রি করা হয়েছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মোট ২৬৫ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৪৬ শিশুসহ ৭৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন।
যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২১ জন, এর মধ্যে সাতজনকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক শিশুসহ ১২ জন। বিভিন্ন কারণে ১০ শিশুসহ ২৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৫ জনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ১২ শিশুসহ ৩৭ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। ছয় শিশুসহ ১৩ জনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। তিনজন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। এক শিশুসহ সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন পাঁচজন।
অন্যদিকে বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে তিনটি।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমরা কোভিড-১৯ মহামারির চেয়েও ভয়ংকর, নিষ্ঠুর ও বর্বর মহামারি নারী ও শিশুদের ওপর যৌনসহিংসতা, ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। বিগত কয়েক বছর ধরে যৌন সহিংসতার মাত্রা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। নির্যাতনের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীর প্রতি নৃসংসতার ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করা সম্ভব হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘আমাদের সমাজে নারীদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয় না। সেক্ষেত্রে পরিবার থেকে প্রতিটি প্রজন্ম শিখছে মেয়েরা মানুষ নয়, তারা শুধু ব্যবহারের জন্য। এভাবে পরিবার থেকেই মূলত নারীর প্রতি অসম্মানের শুরু। এতে বাড়ছে নারী ও শিশু নির্যাতনের হার। নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের কথা বলছে রাষ্ট্র। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা নারীদের সম্মানের জায়গায় তুলে ধরতে পারছি না।’
তারা বলেন, ‘পরিবার থেকেই নারীদের সম্মান দেওয়ার শিক্ষাটা জরুরি। পাশাপাশি আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় যা রয়েছে তা একপ্রকার ইঁদুর দৌড়ের মতো। আমরা শুধু দৌড়াচ্ছি আর দৌড়াচ্ছি। মানবিক শিক্ষা না শিখে ডিগ্রির পেছনে দৌড়াচ্ছি। পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানবিক শিক্ষা শুরু করা দরকার।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮০৩
আপনার মতামত জানানঃ